রাজনৈতিক কারণেই অধিকাংশ সময়ে এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাফের ও মুনাফেক ঘোষণা দেয়
এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে কাফের ও মুনাফিক বলার কারণ যতটা না ধর্মীয় তার চেয়ে বেশী রাজনৈতিক। অর্থাৎ, রাজনৈতিক কারণেই অধিকাংশ সময়ে এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাফের ও মুনাফেক ঘোষণা দেয়।
এ জন্যে রাসূলের জামানায় কেউ মৃত্যু বরণ করার আগে জানা যেতো না, লোকটা কি মুমিন না মুনাফেক। রাসূল যদি কারো জানাজায় অংশ নিতেন, সবাই বুঝতেন লোকটা মুমিন। আর রাসূল যদি কারো জানাজায় অংশ না নিতেন, তাহলে সবাই বুঝতেন লোকটা মুনাফিক।
রাসূল (স) মৃত্যুর আগে কেন কোনো মুসলিমকে কাফির বা মুনাফিক বলতেন না? এর অনেক কারণ আছে। (১) হতে পারে মৃত্যুর এক দিন আগেও লোকটা প্রকৃত মুমিন হয়ে যেতে পারে। (২) মৃত্যুর আগেই কাউকে মুনাফেক বানিয়ে দিয়ে তাকে যেনো কেউ হত্যা না করে। (৩) রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সম্পদের হিংসায় কেউ যেনো কাউকে মুনাফেক বলতে না পারে।
কেউ যখন কাউকে মুনাফেক বা কাফের বলে, তখন দেখবেন এর পিছনে আসল কারণ হলো তিনটি। ১) ক্ষমতা ২) সম্পদ ৩) সম্মান। ক্ষমতা-সম্পদ-সম্মানে যারা উপরে চলে যায়, তাদেরকে তাদের নীচের মানুষেরা হিংসাবসত মুনাফেক ও কাফের ডাকে। আবার ক্ষমতাশীল-ধনী-সম্মানিত মানুষরা তাদের নীচের মানুষদেরকে অশিক্ষিত-জাহেল-জঙ্গি-সন্ত্রাসী ইত্যাদি নামে ডাকে। আসলে দ্বন্দ্বটা এখানে ধর্মের নয়, দ্বন্দ্বটা ক্ষমতা, সম্পদ ও সম্মানের।
যাই হোক এ সমস্যার সমাধানে আল্লাহ বলেন –
يَٓا اَيُّهَا الَّذ۪ينَ اٰمَنُٓوا اِذَا ضَرَبْتُمْ ف۪ي سَب۪يلِ اللّٰهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ اَلْقٰٓى اِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًاۚ تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَاۘ فَعِنْدَ اللّٰهِ مَغَانِمُ كَث۪يرَةٌۜ
“হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর করো, তখন যাচাই-বাচাই করে নিবে। কেউ তোমাকে সালাম দিলেও পার্থিব সম্পদের আশায় আকাঙ্ক্ষায় তাকে বলবে না – “তুমি বেইমান”। আল্লাহর নিকট অনেক সম্পদ রয়েছে।” [সূরা ৪/নিসা – ৯৪]
এ আয়াত থেকে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট।
১) আমরা সম্পদের লোভেই অন্য মুসলমানকে বেইমান, মুনাফিক ও কাফের বলি।
২) যে ব্যক্তি কেবল সালাম দেয়, বা কেবল নিজেকে মুসলিম দাবী করে, তাকে মুনাফিক বা বেইমান বলার কোনো সুযোগ নেই।
৩) কারো সম্পদ বা সম্মানের প্রতি হিংস করে তাকে বেইমান-মুনাফেক বানানোর কোনো দরকার নেই। আল্লাহ হলেন সব সম্পদের মালিক। তাই হিংসা না করে আল্লাহর কাছে সম্পদ ও সম্মানের জন্যে দোয়া করা দরকার।
উপরোক্ত আয়াতকে মূলনীতি হিসাবে ধরে নিয়ে ইমাম আবু হানিফা বলেন –
ولا نكفر مسلما بذنب من الذنوب وإن كانت كبيرة، إذا لم يستحلها، ولا نزيل عنه اسم الإيمان. ونسميه مؤمنا حقيقة
“কোনো মুসলিমকে তার পাপের কারণে আমরা কাফির বলবো না, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে; যতক্ষণ না সে তা হালাল মনে করে। এবং তার ইমান নেই, একথাও বলবো না, বরং তাঁকে প্রকৃত মুমিন হিসাবেই নাম দিব।” [আবু হানিফা, ফিকহুল আকবর]
অর্থাৎ, কোনো মুসলিম যতক্ষণ নিজেকে মুসলিম দাবী করবে, ততক্ষণ সে যত বড় গুনাহ করুক না কেন, তাকে বেইমান বা মুনাফেক বলার কোনো সুযোগ নেই। যদি এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে বেইমান-মুনাফেক বলে, তাহলে বুঝতে হবে, এটা ধর্মীয় কারণে নয়, বরং ক্ষমতা বা সম্পদের জন্যে।
13 February at 2:32pm 2020