সুফিজম কি? এর উদ্দেশ্য কি?
আমাদের দেশের ‘শিক্ষিত’ ও ‘অশিক্ষিত’ উভয় শ্রেণির মানুষ সুফিজম সম্পর্কে অজ্ঞ। ‘অশিক্ষিত’ মানুষরা সুফিজম না বুঝার কারণে পীর, দরগা ও মাজারে গিয়ে পড়ে থাকেন; এবং শিরক-বিদায়াতে যুক্ত হন। আর, ‘শিক্ষিত’ মানুষরা সুফিজম না বুঝার কারণে সত্যিকারের সূফীদের গালাগালি করেন।
সুফিজম ইসলামের অন্যান্য স্কুলের মতো একটি স্কুল। ফিকহের যেমন একটি চিন্তার মেথডলজি রয়েছে, তেমনি সুফিজমেরও একটি মেথডলজি রয়েছে।
রাষ্ট্র বিজ্ঞান যেমন জ্ঞানের একটি শাখা, ফিকহ যেমন জ্ঞানের একটি শাখা, তেমনি সুফিজমও জ্ঞানের একটি শাখা। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল, ফিকহের জনক আবু হানিফা, আর সুফিজমের জনক জুনাইদ বাগদাদী।
সুফিজম কেবল খানকার-দরবার শরীফের বিষয় নয়, এটি একটি একাডেমিক বিষয়ও বটে। সুফিজমের মূল বিষয় তাওহীদ। কেবল কর্মের শিরক নয়, বরং চিন্তার শিরক থেকে মুক্ত থাকাই সুফিজমের উদ্দেশ্য।
যেমন,
আল্লাহকে দেখা যাবে কি যাবে না, এ নিয়ে ইসলামের বিভিন্ন স্কুলের বিভিন্ন মত রয়েছে।
মুতাজিলা স্কুলের মতে, আল্লাহকে দুনিয়া-আখিরাত কোথাও দেখা যাবে না।
আহলে সুন্নাতের মতে, আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখা যাবে না, কিন্তু আখিরাতে দেখা যাবে।
আর, সুফিজমের মতে, আল্লাহকে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জাহানে দেখা যাবে।
এই যে তিনটা স্কুলের তিনটা মত, এটি কেবল মুখে বলে দেয়ার মতো কথা নয়। এর জন্যে একটি মেথডলজি তৈরি করতে হয়েছে, প্রত্যেকের মতের পক্ষে কোর’আন ও সহীহ হাদিস থেকে দলীল দিতে হয়েছে।
সুফিজম এমন একটি মেথডলজি নিয়ে কথা বলে, যাতে মানুষের চিন্তার মধ্যেও শিরক না থাকতে পারে। অথচ, আমরা মনে করি সুফিজম মানেই শিরক ও বিদায়াত।
আমাদের দেশে ‘অশিক্ষিত’ মানুষরা সুফিজমের চর্চা করে, আর ‘শিক্ষিত’ মানুষরা সুফিজম সম্পর্কে কিছু না জেনে গালাগালি করে। ফলে, সুফিজমের আসল বিষয়টি কেউ কাউকে বুঝাতে পারেন না।
13 মার্চ, 2019, 6:15 PM