শিশুদের কি মসজিদে যাওয়ার অনুমতি আছে? তারা মসজিদের কোথায় নামাজ পড়বে?

‘রিক্লেইমিং দ্যা মস্ক’ বইয়ের ধারাবাহিক অনুবাদ: পর্ব-১০

রাসূলের (সা) যুগে ছোট বাচ্চাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া মা-বাবাদের জন্য ছিলো কমন একটি ব্যাপার। কিছুটা বড় বাচ্চারা পুরুষ ও নারীদের কাতারের মাঝখানে আলাদা কাতার করে দাঁড়াতো। এমনকি, কখনো কখনো বাচ্চারা নামাজের ইমামতি করার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন– আমর ইবনে সালামাহ (রা)। আগের একটি অধ্যায়ে উল্লেখিত হাদীস থেকে জানা যায়, মাত্র সাত বছর বয়সে আমর (রা) নামাজের ইমামতি করেছিলেন।

তবে বর্তমানে খুব কম বাচ্চারই মনোযোগ সহকারে নামাজ আদায় কিংবা ইমামতি করার প্রশিক্ষণ রয়েছে। এ কারণেই আমাদের ইসলামী শিক্ষার কারিকুলামে এবং পারিবারিক প্রোগ্রামে ‘মসজিদ বিষয়ক প্রশিক্ষণ’ যুক্ত করাটা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় যদি তাদের মা-বাবারা সন্তানদেরকে মসজিদে নিজেদের সাথে রাখেন। নতুবা শিশুদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কক্ষ থাকতে পারে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে গাইড করবে। বিশেষ করে বৃহৎ পরিসরের প্রোগ্রামাদিতে যখন মসজিদে অনেক শিশু আসে, তখন এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়।

শিশুদেরকে সঠিকভাবে নামাজ পড়াতে শেখানো রাসূলের (সা) সুন্নত। এমনকি মা-বাবা-মা কিংবা শিক্ষক নিজে নামাজ পড়ার সময়ও বাচ্চাদেরকে এসব শিখিয়ে দিতে পারেন। ইবনে আব্বাস (রা) তার ছোটবেলার স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন:

“এক রাতে আমি নবীজীর (সা) পেছনে বাম পাশে নামাজে দাঁড়ালাম। তিনি নামাজরত অবস্থায় আমাকে তাঁর হাত দিয়ে টেনে নিলেন এবং তাঁর ডান পাশে দাঁড়ানোর ইশারা করলেন।”[1]

অন্য একটি বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রা) বলেন:

“একদিন ফজরের নামাজের ইকামত হয়ে যাবার পর আমি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের জন্যে দাঁড়ালাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) জামায়াত শুরু করার আগে এসে আমার হাত ধরে ফেললেন এবং বললেন, “তুমি কি ফজরের নামাজ চার রাকাত পড়বে নাকি?[2]

যাহোক, কোনো কোনো অঞ্চলে সাধারণত শিশু ও নারীদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়। এ ধরনের কাজ কোরআনের শিক্ষা ও রাসূলের (সা) প্রামাণ্য সুন্নাহর বিপরীত। এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস নিচে তুলে ধরা হলো:

সহীহ বুখারীর একটি অধ্যায় হলো: ‘নামাজরত অবস্থায় বাচ্চা মেয়েকে কাঁধে রাখা সংক্রান্ত অধ্যায়’। এই অধ্যায়ে আবু কাতাদা আল আনসারী (রা) বর্ণনা করেছেন:

“রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নাতনী উমামাহকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। উমামাহ হলো আবুল আস বিন রাবী ইবনে আবদে শামসের (তিনি অমুসলিম ছিলেন– অনুবাদক) ঔরসে রাসূলের (সা) মেয়ে জয়নব (রা) সন্তান। রাসূল (সা) সেজদায় যাওয়ার সময় উমামাহকে নামিয়ে রাখতেন এবং উঠে দাঁড়ানোর সময় পুনরায় তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিতেন।[3]

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা) বলেছেন,

“আমি নামাজে দাঁড়ানোর পর তা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা করি। কিন্তু কোনো শিশুর কান্না শোনার পর নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলি এই ভয়ে যে শিশুটির মা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে।[4]

অন্য একটি বর্ণনায় আরো এসেছে,

একদিন সেজদায় থাকা অবস্থায় রাসূলের (সা) নাতি হাসান ও হোসাইন এসে তাঁর পিঠে চড়ে বসে। তারা নিজেরা নেমে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি তাদেরকে সরানোর জন্য জোর করেননি। ফলে দীর্ঘক্ষণ তিনি সেজদারত থাকলেন। নামাজ শেষে তাঁর নিকট দীর্ঘক্ষণ সেজদায় থাকার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি জবাব দিলেন, ‘আমার নাতিরা আমার পিঠে চড়ে বসেছিলো। আমি তাদেরকে বিরক্ত করতে চাইনি।’ নামাজ চলাকালেই কয়েকজন সাহাবী রাসূলের (সা) নাতিদেরকে তাঁর পিঠে চড়া থেকে বিরত রাখতে চাইলেন। কিন্তু তিনি সাহাবীদেরকে সরে যাওয়ার ইশারা দেন। পরে নামাজ শেষ করে তিনি নাতিদেরকে কোলে তুলে নেন।[5]

মসজিদে শিশুদের সাথে এমনই ছিলো রাসূলের (সা) আচরণ। রাসূলের (সা) এই মমতা ও ভালোবাসাময় দৃষ্টান্তই আমাদের অনুসরণ করা উচিত।

(চলবে)

[মূল: জাসের আওদা, অনুবাদ: জোবায়ের আল মাহমুদ]

অন্যান্য পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রেফারেন্স:

[1] সহীহ বুখারী, ১/২৫৫।

[2] ইবনে হিব্বান, ৬/২২১।

[3] সহীহ বুখারী, ১/১০৯।

[4] সহীহ বুখারী, ১/১৪৩।

[5] আবু ইয়ালা মাওসিলীর আয-জাওয়াইদ গ্রন্থে আনাস (রা) এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। উপর্যুক্ত দুটি সূত্র থেকে একই ধরনের বর্ণনা বুখারী ও মুসলিমেও রয়েছে।

আরো পোস্ট