আলী ও মুয়াবিয়ার যুদ্ধ

কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে চাইলে বা যুদ্ধ করতে চাইলে তারা হজরত আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা)-এর যুদ্ধকে রেফারেন্স হিসাবে গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে তারা আলী (রা)-কে নায়ক এবং মুয়াবিয়া (রা)-কে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করেন। তারা বলেন, আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যে যেমন হক-বাতিলের যুদ্ধ হয়েছিলো, তেমনি বর্তমানেও হক-মুসলিমের সাথে বাতিল-মুসলিমের যুদ্ধ হতে পারে।

উপরোক্ত যুক্তি দেয়ার সময়ে আমরা ভুলে যাই যে, আলী-মুয়াবিয়ার যুদ্ধ আমাদের মুসলিমদের গৌরবের কোনো ইতিহাস নয়, এটা আমাদের লজ্জার ইতিহাস। যারা এ লজ্জার ইতিহাসকে বৃদ্ধি করতে চান, তারাই এক মুসলিমের বিরুদ্ধে অন্য মুসলিমের যুদ্ধকে জায়েজ করতে চান।

এছাড়া, যুদ্ধ সবসময়ে সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে হয়, ব্যাপারটা তা নয়। কখনো যুদ্ধ হয়, সত্যের সাথে সত্যের। ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যেই এমন যুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে আল্লাহ থাকেন দু’পক্ষেই। আলী (রা)-এর সাথে মুয়াবিয়া (রা)-এর সিফফিনের যুদ্ধটাও এমন। এটি সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যার যুদ্ধ নয়; বরং ক্ষমতার ভারসাম্যের যুদ্ধ। এটি ছিলো সত্যের বিরুদ্ধে সত্যের যুদ্ধ।

মুয়াবিয়া (রা) তার পুত্র ইয়াজিদকে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। এ বিষয়টাকে আমরা খারাপভাবে দেখলেও, ইবনে খালদুন খারাপভাবে দেখতেন না। ইবনে খালদুনের মতে, মুয়াবিয়া যদি তার পুত্র ইয়াজিদকে ক্ষমতা দিয়ে না যেতেন, তাহলে উমাইয়াদের ঐক্য বিনষ্ট হয়ে যেতো। ইয়াজিদ ছাড়া অন্য কাউকে উমাইয়ারা শাসক হিসাবে মেনে নিতো না। ইয়াজিদের খারাপ কাজের কথা যদি মুয়াবিয়া (রা) জানতেন, তাহলে ইয়াজিদকে ক্ষমতা দিয়ে যেতেন না। তাই, ইয়াজিদকে ক্ষমতা দিয়ে যাবার কারণে কোনো ভাবেই মুয়াবিয়াকে দোষারোপ করা যাবে না। [মুকাদ্দিমা, ১ম খণ্ড, ৩৭৬]

আলী (রা)-এর পক্ষে যেমন অনেক সাহাবী ছিলেন, মুয়াবিয়া (রা)-এর পক্ষেও অনেক সাহাবী ছিলেন। তাদের যুদ্ধটা আসলে সত্য-মিথ্যার যুদ্ধ নয়, এটি ছিলো ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার যুদ্ধ, এবং এ যুদ্ধ ছিলো লজ্জাজনক।

যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে আলী-মুয়াবিয়ার যুদ্ধকে রেফারেন্স হিসাবে গ্রহণ করেন, তারা মুসলিমদের লজ্জাজনক অধ্যায়কে বৃদ্ধি করতে চান।

আরো পোস্ট