বাঙালি মুসলিম সমাজ ও কবিতা – নজরুল ইসলাম

(আনওয়ার হোসেনকে লিখিত) 

হুগলি২৩ অগ্রহায়ণ , ১৩৩২ 

আমার প্রীতি ও সালাম নিন।

আপনার চিঠি… পেয়েছি। সময়মতো উত্তর দিতে পারিনি। তার কারণ, আমার অনবসরের আর অন্ত নেই। তজ্জন্য আমি বড় লজ্জিত আছি ভাই-ক্ষমা করবেন। আপনি এত ভালো বাংলা লিখতে পারেন; আপনার আইডিয়া, ভাব, ভাষা এত স্বচ্ছ ও সুন্দর যে, আপনার সাথে কাগজে অনেক আগেই পরিচিত হওয়া উচিত ছিল। অথচ আপনি আপনাকে গোপন রেখেছেন- আর যত বাজে পুথি-পড়া লেখকরাই আজ মুসলমান সমাজের শ্রেষ্ঠ লেখক!… আপনার চিঠি পড়ে এত আনন্দ লাভ করেছি যে, অনেককে পড়ে শুনিয়েছি। মুসলমান সমাজ আমাকে আঘাতের পর আঘাত দিয়েছে নির্মভাবে। তবু আমি দুঃখ করিনি বা নিরাশ হইনি। তার কারণ, বাংলার অশক্ষিত মুসলমানেরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানেরা ঈর্ষাপরায়ণ। এ আমি একটুও বানিয়ে বলছিনে। মুসলমান সমাজ কেবলই ভুল করেছে – কিন্তু আমার কবিতা সকল দেশের সকল কালের এবং সকল জাতির। কবিকে হিন্দু-কবি, মুসলমান-কবি ইত্যাদি বলে বিচার করতে গিয়েই এত ভুলের সৃষ্টি।

আমি আপাতত শুধু এইটুকুই বলে রাখি যে, আমি শরিয়তের বাণী বলিনি- আমি কবিতা লিখেছি। ধর্মের বা শাস্ত্রের মাপকাঠি দিয়ে কবিতাকে মাপতে গেলে ভীষণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ধর্মের কড়াকড়ির মধ্যে কবি বা কবিতা বাঁচেও না জন্মও লাভ করতে পারে না। তার প্রমাণ- আরব দেশ। ইসলাম ধর্মের কড়াকড়ির পর থেকে আর সেথা কবি জন্মাল না। এটা সত্য…

-নজরুল ইসলাম 

আরো পোস্ট