মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্যটা কাঠামোগত নয়, বরং চেতনাগত

মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্যটা কাঠামোগত নয়, বরং চেতনাগত। কোনো কিছুকে চেতনার প্রতীক মনে করলে, তার কাঠামো যাই হোক না কেন, সেটা মূর্তি। অন্যদিকে, কোনো কিছুকে সুন্দরের প্রতীক মনে করলে, এবং তার কাঠামো যদি নোংরা না হয়, তাহলে তা ভাস্কর্য।

কোর’আন থেকে দুটি উদাহরণ দিচ্ছি।

ইব্রাহীম (আ) –এর সময়ে মানুষেরা কিছু প্রতিকৃতিকে তাদের পূর্বপুরুষের চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতীক মনে করত। কিন্তু, অচেতন বস্তু যেহেতু মানুষের বিশ্বাস বা চেতনার প্রতীক হতে পারে না, তাই ইব্রাহীম (আ) তাদের সেই প্রতিকৃতিগুলো ভেঙ্গে দিয়েছিল।

إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِۦ مَا هَـٰذِهِ ٱلتَّمَاثِيلُ ٱلَّتِىٓ أَنتُمْ لَهَا عَـٰكِفُونَ قَالُوا۟ وَجَدْنَآ ءَابَآءَنَا لَهَا عَـٰبِدِينَ

“যখন ইব্রাহীম তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এই প্রতিকৃতিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ। তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি”। [সূরা ২১/আম্বিয়া – ৫২ ও ৫৩]

এরপর,

ইব্রাহীম (আ) অনেক পর সোলায়মান (আ) পৃথিবীতে আসলেন। তার সময়ে তাওহীদের ধারনাটা মানুষের কাছে স্পষ্ট ছিল। প্রতিকৃতিকে মানুষ তখন সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করত। ফলে, সোলায়মান (আ) নিজেই প্রতিকৃতি তৈরি করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

يَعْمَلُونَ لَهُۥ مَا يَشَآءُ مِن مَّحَـٰرِيبَ وَتَمَـٰثِيلَ وَجِفَانٍۢ كَٱلْجَوَابِ وَقُدُورٍۢ رَّاسِيَـٰتٍ ۚ ٱعْمَلُوٓا۟ ءَالَ دَاوُۥدَ شُكْرًۭا ۚ وَقَلِيلٌۭ مِّنْ عِبَادِىَ ٱلشَّكُورُ

“তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” [সূরা ৩৪/সাবা – ১৩]
_________ 
কোর’আনে বর্ণিত সকল নবীর ঘটনা ও কাজের সমষ্টি-ই হলো ইসলাম। ইসলামে মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্যটা কাঠামোগত নয়, বরং চেতনাগত।
_________

একটি প্রতিকৃতিকে কেউ যখন বাচ্চার খেলনার মত মনে করবে, অথবা সৌন্দর্যের কোনো কাজে ব্যবহার করবে, তখন তা ভাস্কর্য হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু একই প্রতিকৃতিকে কেউ যদি তার চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতীক মনে করে, তখন তা মূর্তি হিসাবে গণ্য হবে।

একইভাবে দেখুন,

ইব্রাহীম (আ)-এর সময়ে মানুষ চাঁদ, সূর্য ও নক্ষত্রকে তাদের চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতীক মনে করায় তা শিরক হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে কেউ যদি চাঁদ, সূর্য ও নক্ষত্রকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে, তাহলে তা শিরক হবে না।

শুধু পাথরের মূর্তি নয়, কোর’আনের বর্ণনা অনুযায়ী, মানুষ তার নিজের শরীর ও সম্পদের দ্বারাও শিরক করে। মানুষ যখন নিজের শরীর ও নিজের অর্জিত সম্পদকে খুব বেশি ভালোবাসতে শুরু করে, তখন তার শরীর ও সম্পদও শিরকের উপাদান বা মূর্তি হয়ে যায়। [সূত্র ২: ৯৬, ১৮: ৪২]

সুতরাং, কেবল কাঠামোগত বাইরের কোনো প্রতিকৃতির মধ্যে নয়, বরং মানুষের চিন্তার মধ্যেই শিরক থাকে। মানুষের চিন্তা ও চেতনার অঙ্গনেই শিরকের অসংখ্য মূর্তি গড়ে উঠে। আমরা বাইরের প্রতিকৃতি নিয়ে খুব সোচ্চার হলেও, ভিতরের মূর্তিগুলো দেখতে পাই না।

May 27, 2017 at 2:36 PM 

আরো পোস্ট