ড. ইউসুফ আল-ক্বারাদাওয়ী, ড. তারিক রামাদান এবং ডা. জাকির নায়েক –আমাদের প্রেরণা
ইসলাম নিয়ে আগ্রহটা সৃষ্টি করিয়েছেন ডা. জাকির নায়েক। তাঁর সন্ধান পাওয়া ছিল জীবনের এক বিরাট ঘটনা। এরপর ড. ইউসুফ আল-ক্বারাদাওয়ী। তিনিও একটা হীরার খনি। তারপর ড. তারিক রামাদান এবং আরও অনেক। –ইসলাম বুঝতে এ মানুষগুলোর অবদান অনেক অনেক বেশি; বলে বুঝানো যাবে না। আল্লাহ তায়ালা-ই হোক তাঁদের প্রত্যেকের উত্তম প্রতিদানকারী।
আমাদের মত ইসলাম-শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে অনেক ঋণী। তাঁরা যেনো ইসলামের আরও খিদমত করার সুযোগ পান, আল্লাহ্র কাছে সেই প্রার্থনা। ড. ইউসুফ আল-ক্বারাদাওয়ী, ড. তারিক রামাদান এবং ডা. জাকির নায়েক নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত একটা পরিচিতি দৈনিক ইত্তেফাক ছেপেছে আজ। সেখান থেকে ফেইসবুকে তুলে দিলাম।
ডা. জাকির নায়েক
জাকির আব্দুল করিম নায়েক একজন ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ, বক্তা ও লেখক যিনি বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের সবচেয়ে বড় ইসলামী টিভি চ্যানেল ‘পিস টিভি নেটওয়ার্ক’-এর সহ প্রযোজক। বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলামের অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা তার অন্যতম কৌশল। তিনি মূলত ইসলামী চিন্তাবিদ আহমেদ দিদাতের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
ডা. জাকির নায়েক১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন, তারপর কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। এবং পরবর্তী সময়ে ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে একজন ডাক্তার হলেও ১৯৯১ সাল থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সারা বিশ্বে তিনি অনেক লেকচার ও বিতর্ক করেন। ‘বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ও বাইবেল’ বিষয়ে শিকাগোতে তিনি উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে একটি অসাধারণ বিতর্ক করেন। তিনি বিতর্ক ও সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সময় বক্তব্যের প্রমাণে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে অধ্যায় ও পৃষ্ঠা নম্বর দ্বারা রেফারেন্স দিয়ে থাকেন। ‘পিস টিভি বাংলা’ ডা. জাকিরের লেকচারসমূহ বাংলা ভাষায় প্রচার করে।
এ বছর তিনি সৌদি সরকারের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ লাভ করেন। দি ইন্ডিয়ান এক্সটেসের ‘সবচাইতে শক্তিশালী ১০০ ভারতীয় ২০১০’ তালিকায় তার অবস্থান ৮৯তম। ২০০৯ সালে ছিল ৮২তম। তাকে ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে সবচাইতে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়াও ‘১৭ই দুবাই আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন পুরস্কার’-এর মাধ্যমে বছর-সেরা ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার নামকরণ করা হয়।
ড. ইউসুফ আল-ক্বারাদাওয়ী
আল্লামা ইউসুফ আল-ক্বারজাবি বর্তমানে ইসলামের একজন প্রখ্যাত চিন্তাবিদ, কবি ও দার্শনিক। সমসাময়িক বিশ্বে ইসলাম ও মুসলমানদের কী ভূমিকা হবে সে বিষয়ে সুচিন্তিত মতামতের জন্য তিনি সারা বিশ্বে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার একজন অন্যতম প্রবক্তা।
ড. ইউসুফ আল-ক্বারাদাওয়ী১৯২৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মিসরের নীল নদের পাশেই ‘সাফাত তুরাব’ গ্রামে এ মহান মনীষার জন্ম। মাত্র নয় বছর বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ করেন এবং কুরআন তেলাওয়াতের নীতিমালা ও তাজভীদের ওপর ব্যুত্পত্তি লাভ করেন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তিনি আল-আজহারেই লেখাপড়া করেন। ১৯৭৩ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসূল আল-দ্বীন অনুষদ থাকে তিনি ‘যাকাত এবং সামাজিক সমস্যার সমাধানে এর প্রভাব’ শিরোনামে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে ১৯৫৮ সালে তিনি আরবি ভাষা অনুষদ থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর ডিপ্লোমা করেন এবং একই অনুষদে শিক্ষকতা করার ইজাজাহ্ লাভ করেন।
তিনি ১৯৭৭ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরীয়াহ্ ও ইসলামিক স্টাডিজ’ অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন। একই বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ‘সীরাহ্ ও সুন্নাহ্ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিছু দিন মিসর সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘বোর্ড অব রিলিজিয়াস এফেয়ার্স’-এর সদস্য ছিলেন। এছাড়া জেদ্দাস্থ ‘ওআইসি ফিকাহ্ একাডেমি’, ‘রয়াল একাডেমি ফর ইসলামিক কালচার অ্যান্ড রিসার্চ জর্ডান’ এবং ‘ইসলামিক স্টাডিজ ফর সেন্টার অক্সফোর্ড’সহ বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এ পর্যন্ত তার ১২০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আরবি ভাষায় লিখলেও তার গ্রন্থসমূহ ইংরেজি, তুর্কি, ফার্সি, উর্দু ও বাংলা সহ বিশ্বের প্রায় সব ভাষাতেই অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।
ড. তারিক রামাদান
ইউরোপে সমকালীন ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে তারিক রামাদান অন্যতম। তিনি একাধারে দার্শনিক, তাত্ত্বিক এবং মিডিয়া তারকা। তার জন্ম সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়, ১৯৬২ সালের ২৬ আগস্ট; পিতার নাম সাঈদ রামাদান এবং মাতা ওয়াফা আল বান্না। তিনি জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ও ইসলামী শাস্ত্রে পিএইচডি করেন। ইসলাম, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি ও আন্তঃধর্ম সংলাপ বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। লেখাপড়া ও গবেষণায় দক্ষতার জন্য কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পাঁচ বছরের কোর্স মাত্র ২০ মাসে শেষ করেন এবং একই সাথে ৭টি ইজাজাহ (Certificate) লাভ করেন।
ড. তারিক রামাদানসুইজারল্যান্ডের কলেজ ডি সোসুরেতে শিক্ষকতা দিয়ে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন। একই সাথে তিনি ফ্রাইব্রুগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম ও দর্শনের প্রভাষক হিসাবে কাজ করেন। কিছুদিন জেনেভায় চাকরির পর ২০০৫ সালে তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট অ্যান্টনি কলেজে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে যোগ দেন। ২০০৭ সালে ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক হয়ে তিনি নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। একই সাথে তিনি রটারড্যামের ইরামুস বিশ্ববিদ্যালয়ে Identity and Citizenship-এর অতিথি অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন। ২০০৯ সালে তিনি আবার ফিরে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করে। ২০০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ধর্মীয় বিষয়ে একটি টাস্কফোর্সে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তিনি ব্রাসেলস ভিত্তিক ‘থিংক ট্যাংক ইউরো মুসলিম নেটওয়ার্ক’-এর সভাপতি। একই সাথে কাতার ভিত্তিক রিসার্চ ‘সেন্টার ফর ইসলামিক লেজিসলেশন অ্যান্ড এথিকস’-এর পরিচালক। ইসলামের প্রচার সংক্রান্ত তার শতাধিক ভিডিও লেকচার ও বিতর্ক রয়েছে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ ছাড়াও সমসাময়িক বিষয়ে তার অসংখ্য প্রবন্ধ ও বই রয়েছে। তার লেখা রাসূল চরিতের নাম ‘In the footsteps of the Prophet’। এখানে তিনি ভক্তি ও যুক্তির অপূর্ব সংমিশ্রণে রাসূল (স)-এর জীবনী তুলে ধরেছেন। ২০০৮ সালে ব্রিটেনের প্রসপেক্ট ম্যাগাজিনে একটি অনলাইন জরিপের মাধ্যমে তাকে দুনিয়ার প্রভাবশালী ১০০ জন চিন্তকের মধ্যে ৮ম স্থান দেয়া হয়।
দৈনিক ইত্তেফাকের লিঙ্ক: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/dormo-chinta/2015/06/05/52731.html
June 5, 2015 at 7:33 PM ·