আল্লামা ইকবাল

আধুনিক বা উত্তর-আধুনিক এই সময়ে মুসলিম তরুণদের করণীয় বিষয়ে আল্লামা ইকবাল অনেক কথাই বলেছেন। বিশেষ করে সেক্যুলার গোষ্ঠীর মোকাবেলায় আমাদের চিন্তার ধরণ-পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে তিনি তাঁর ‘The Reconstruction of Religious Thought in Islam’ বইয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। বইটি মূলত তাঁর বক্তৃতার একটি সংকলন। ভূমিকা থেকে কয়েক লাইন আমার ভাষায় তুলে দিলাম।এক. বইটির প্রথম বাক্য পড়লেই ইকবালের পাণ্ডিত্য বোঝা যায়। তিনি বলেন, ‘আল কুর‘আন এমন একটি গ্রন্থ যা আদর্শের চেয়ে কাজ করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়’। নিছক আদর্শের কথা বলে বেড়ানো-ই ইসলামের একমাত্র কাজ নয়। তার চেয়ে বরং নিজের জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার সাথে সাথে সমাজকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করাই ইকবালের চিন্তা।আজকাল মানুষ যেভাবে বাস্তবতার ভিত্তিতে সবকিছুকে বিচার করে, তা দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপলব্ধি করা খুবই কষ্টকর। বিশ্বাস আসে গভীর চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে। আমরা বিভিন্ন বস্তুকে যেভাবে জানি-বুঝি বা পাঠ করি, সেভাবেই ধর্মীয় বিশ্বাসকে পাঠ করা যায় না।দুই. ভূমিকায় আল্লামা ইকবাল কুর‘আনের একটি আয়াত উল্লেখ করেন। আয়াতটি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুজ্জীবন একটি মাত্র প্রাণের সৃষ্টি ও পুনরুজ্জীবনের মতই” [সূরা লোকমানে : ২৮]ইকবালের বইয়ে এই আয়াত পাঠ করে নতুন একটি উপলব্ধি হল। আগে ভাবতাম, ইসলামের শত্রুকে চিহ্নিত করার সময় অগ্রিম একটি ধারনা তৈরি করে রাখতে হবে। যে ধারনার ভিত্তিতে কাউকে শত্রু বলব, এবং কাউকে বন্ধু বলব। এখন মনে হয়, শত্রুর ধারনা আগেই তৈরি করে রাখা যায় না। বরং ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শত্রুর ধারণা পরিবর্তন হয়। এই ধারণা অগ্রিম তৈরি করা যায় না; বরং ইসলামের কাজে নামলেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ বা পদ্ধতিকে শত্রু জ্ঞান করতে হয়।যেমন…কোর‘আনের এই আয়াতটির আলোকে সহজেই কল্পনা করা যায় যে, সমগ্র মানবসত্তা একটিমাত্র সত্তার মতই। আমাদের শরীরের কোনো অংশই আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু যখন এর কোনো অংশ পচে যায়, তখন তাকে আর শরীরের সাথে রাখা যায় না, কেটে ফেলতে হয়। এই কেটে ফেলা আনন্দের নয়; বেদনার। যে কাউকে কাফের ঘোষণা করাও এমন বেদনার। শরীরের পচা অংশকে ভালো করার মতো কোনো কাফেরকে যত্ন করে মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলাও সম আনন্দের।তিন. ইকবালের মতে পৃথিবীর প্রত্যেক চিন্তাই কোনো না কোনো সত্যের দাবী করে। শুরুতেই কোনো চিন্তাকে উড়িয়ে দেয়া উচিত নয়। আমাদের কাছে সত্য-মিথ্যার মানদণ্ড আল কোর‘আন। এর আলোকে প্রত্যেক চিন্তাকে বিচার বিশ্লেষণ করে তার ভালো দিকগুলো আমরা অনায়াসে নিতে পারি, এবং খারাপ দিকগুলো বাদ দিতে পারি।ইকবাল আশা করেন, সে দিন খুব বেশি দূরে নয়, যে দিন ধর্ম, বিজ্ঞান ও দর্শনের সত্যগুলো মানুষের সামনে ঐক্যবদ্ধভাবে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। তিনি আশংকা করেন, ধর্ম ও বিজ্ঞান যত তাড়াতাড়ি একসাথে মিলিত হবে, দর্শন তত তাড়াতাড়ি মিলিত হবে না। কারণ দর্শনে চিন্তার ঐক্য গড়ে উঠে খুবই ধীর গতিতে।যাই হোক, ইকবালের Reconstruction বইটা পড়া শুরু করেছি। মনে হল, মুসলিম চিন্তার পুনর্গঠনে বইটি খুবই কাজে আসবে।

May 28, 2015 at 11:38 PM · Public

আরো পোস্ট