রাজনৈতিক অঙ্গনে শিষ্টাচার

রাজনৈতিক অঙ্গনে শিষ্টাচার শব্দটির বাহুল্য দেখে মনে হল, বাংলাদেশ অচিরেই একটি নৈতিক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।

কিন্তু আবার ভয় হচ্ছিলো এই ভেবে যে, অশ্লীলতার পাইকারি বিক্রেতারা কেনো এই ‘শিষ্টাচার’ শব্দ নিয়ে টানা হেঁচড়া করছে?

পরে বুঝলাম, নষ্ট-ভ্রষ্টরা ‘শিষ্টাচার’ শব্দের অর্থকে ঠিক ১৮০ ডিগ্রী কোণে উল্টে দিয়েছে বলেই এখন তারা চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে ‘শিষ্টাচার’ শব্দে জিকির করছে।

রাজনীতিতে ‘শিষ্টাচার’ শব্দটি উল্টে যাবার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার আগে কুর’আন-হাদিস থেকে একটু ঘুরে আসা যাক…

“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত পরিচয় প্রদান না কর এবং (প্রবেশের অনুমতি চেয়ে) গৃহবাসীদেরকে সালাম না দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” [সূরা নূর, আয়াত-২৭]

“যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তবু অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা রয়েছে। তোমরা যা কর আল্লাহ তা‘আলা তা ভালোভাবে জানেন।” [সূরা নূর, আয়াত-২৮]

“যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ। আপনি বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা যদি ধৈর্য ধারণ করত, তা তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হত। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” [সূরা হুজরাত, আয়াত-৪,৫]

“কোনো নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। কেননা, যাকে উপহাস করা হয় সে হয়ত উপহাসকারিনী থেকে শ্রেষ্ঠ।” [সূরা হুজরাত, আয়াত-১১]

“আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন: একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবূ মূসা (রা:) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেন: আমি তিনবার উমর (রা:)-এর নিকট অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম।

উমর (রা:) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললাম: আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়।” [বুখারি, হাদিস-৫৮১১, ইসলামী ফাউন্ডেশন]

আলোচ্য কোর’আন-হাদিস দিয়ে এবার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ‘শিষ্টাচার’ নামক রাজনৈতিক গল্পটি ব্যাখ্যা করা যাক…

প্রথমত, শেখ হাসিনা যখন খালেদা জিয়ার বাড়ি যেতে চাইলেন, তখন তার উচিত ছিল ডিজিটাল উপায়ে অর্থাৎ মোবাইলে-ফোনে খালেদা জিয়ার কাছে কমপক্ষে তিন বার অনুমতি চাওয়া। খালেদা জিয়া অনুমতি না দিলে তার বাড়িতে না যাওয়া।

দ্বিতীয়ত, যখন শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে গেলেন, তার উচিত ছিল বাড়ির উদ্দেশ্যে জোরে সালাম দেয়া, যাতে বাড়ির লোকেরা শুনতে পায়। এবং ‘আপনি ফিরে যান’ –এ জাতীয় কোনো আওয়াজ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

তৃতীয়ত, যদি খালেদা জিয়া এ কথা বলতেন যে, ‘আপনি ফিরে যান’; তখন শেখ হাসিনা সোজা চলে আসতে পারতেন। কিন্তু এর জন্যে খালেদা জিয়াকে উপহাস করা উচিত ছিল না।

ইসলাম ধর্মে অনুমতি না চাওয়াকে শিষ্টাচার বহির্ভূত বলা হয়, কিন্তু কখনো অনুমতি না দেয়াকে শিষ্টাচার বহির্ভূত বলা হয়নি। সাহাবীদের জীবনে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে।

আফসোস!!! সেক্যুলার সমাজ আজ যেভাবে ‘শিষ্টাচার’ শব্দটিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে; আমরা মুসলিমরা ঠিক সেভাবেই ‘শিষ্টাচার’ শব্দ নিয়েই হৈচৈ করে বেড়াচ্ছি।

January 27, 2015 at 10:16 PM ·

আরো পোস্ট