কুর’আন দিয়ে যখন অ্যারিস্টটল কিম্বা ইব্নে খালদুনকে বুঝি
কোনো একটি ঘটনা কেন ঘটলো কিম্বা কীভাবে ঘটলো –তার নানান দার্শনিক ব্যাখ্যা হাজির থাকলেও আমার কাছে অ্যারিস্টটল এবং ইবনে খালদুনের ব্যাখ্যাই চমৎকার মনে হয়েছে। অ্যারিস্টটল দেখাতে চেয়েছেন, কোনো একটি ঘটনা ঘটার পিছনে কারণ থাকে চারটি; বস্তুগত কারণ [material cause], কুশলী কারণ [efficient cause], আকারগত কারণ [formal cause] এবং অন্তিম কারণ [final cause]। উদাহরণ হিশেবে তিনি বৃষ্টি কেন হয় তা দেখিয়েছেন। মেঘের কাছে বাতাশের উপস্থিতিকে তিনি ‘বস্তুগত কারণ’, জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হওয়াকে ‘কুশলী কারণ’, পানি আকারে জমিনে পড়াকে ‘আকারগত কারণ’ এবং সবশেষে গাছপালা-জীব-জন্তুর জীবন রক্ষার্থে বৃষ্টি হওয়াকে ‘অন্তিম কারণ’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। শেষের কারণকে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান করণ বলে মনে করতেন। কুর’আনে আল্লাহ্ তায়ালা যখন কোনো একটি বিষয় বর্ণনা করেন, তখন সাথে সাথে তিনি সে বিষয়টির ‘অন্তিম কারণও’ ব্যাখ্যা করে দেন; যা বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বাকি তিনটি কারণ কখনো কখনো তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করে দেন কিম্বা কখনো কখনো আমাদের জন্য ‘হোম ওয়ার্ক’ দেন যাতে আমরা চিন্তা করে বের করতে পারি। যেমন সূরা আরাফের ৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বৃষ্টি হবার সবগুলো কারণ-ই বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং সাথে সাথে আমাদের চিন্তা করতেও বলেছেন; এরশাদ হচ্ছে – “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব-যাতে তোমরা চিন্তা কর”। (সূরা আরাফ-৫৭) অন্য আয়াতে আবার শুধু ‘অন্তিম কারণ’ উল্লেখ করে বাকি কারণগুলো খুঁজে বের করতে আমাদের ‘হোম ওয়ার্ক’ দিয়েছেন; যেমন এরশাদ হচ্ছে- “আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তদ্বারা বাগান ও শস্য উদগত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।(সূরা ক্বাফ-৯) ‘হোম ওয়ার্ক’ দেয়া আয়াতও আছে, যেমন এরশাদ হচ্ছে- “সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে, আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন-যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে” (সূরা ইব্রাহীম-২৫); অথবা “তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন, সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে” (সূরা নাহল-১৩); কিম্বা “তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা পড়ে গেছে?” (সূরা মুহাম্মাদ-২৪)। এ দিকে ইবনে খালদুনকে এত ভালো লাগার কারণ হল তিনি সারা জীবন আল্লাহর দেয়া এ ‘হোম ওয়ার্কে-ই’ নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। প্রতিটি ঘটনাকে তিনি উপরক্ত প্রথম তিনটি কারণ দ্বারা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে শেষে বলতেন আল্লাহ্ তায়ালাই ভালো জানেন কেন এমন ঘটেছে। তিনি তাঁর ‘হোম ওয়ার্ক’ শেষ করে ‘অন্তিম কারণের’ ভার আল্লাহ্ তায়ালার উপর ছেড়ে দিতেন। তাঁর এমন অসাধারণ ও চমৎকার পৃথিবী-চিন্তা আমাদের সাহায্য করছে এবং করবে হাজার হাজার বছর ধরে…।
February 27, 2014 at 9:37 AM ·