‘কুন ফা-ইয়াকুন’ কেন বিপ্লবী গান?

‘কুন ফা-ইয়াকুন’ গানকে আমাদের বিপ্লবের জাতীয় গান মনে হয়।

কেন মনে হয়, তা বলছি…

ফ্যাসিবাদী সময়ে আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা এ গানটি গাইতাম ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।

এ গানের কথা ‘কুন ফা-ইয়াকুন’ বাক্যটা কুরআনের অনেক স্থানে এসেছে। যেমন, সূরা মু’মিন – ৬৮, আলে ইমরান – ৫৯, ইয়াসিন – ৮২

কুন ফা-ইয়াকুন অর্থ হলো ‘হও, অতঃপর, তা হয়ে যায়।’

ফ্যাসিবাদী সময়ে মানুষ জানতো না, কীভাবে এ ফ্যাসিবাদী সময়কে পরিবর্তন করা যাবে। তবে মানুষ বিশ্বাস করতো, আল্লাহ যদি ‘হও’ বলে, তাহলে বিপ্লব হয়ে যাবে।

আল্লাহর ‘কুন’ বা ‘হও’ শব্দটা বিপ্লবের শ্লোগান হিসাবে যখন আমাদের অন্তরে আসে, তখনি বিপ্লব শুরু হয়।

ইবনে আরাবির কালিমা থিউরি দিয়ে বিষয়টাকে আরেকটু ভালোভাবে বুঝা যাবে।

ইবনে আরাবীর মতে, বিশ্বজগতের প্রতিটি জিনিস আল্লাহ তায়ালার একেকটি শব্দ। কারণ, সব কিছুই আল্লাহর কুন (كن) শব্দের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُم ۚ بَلَىٰ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ — إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

“যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি আবার এমন অনুরূপ কিছু সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হাঁ, নিশ্চয় তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তিনি যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তাকে বলেন “কুন বা হও”। তখন সাথেসাথে তা হয়ে যায়”। [সূরা ৩৬ / ইয়াসিন – ৮১, ৮২]

অর্থাৎ, এই মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণী ও বস্তু তাদের বর্তমান রূপ লাভ করার পূর্বে ছিলো আল্লাহ তায়ালার একেকটি শব্দ।

একইভাবে আদম (আ) থেকে শুরু করে ঈসা (আ) সহ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষও আল্লাহ তায়ালার একেকটি শব্দ। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

“নিশ্চয় ঈসার উদাহরণ আদমের-এর মতোই। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এরপর বললেন, “হও”, ফলে সে হয়ে গেলো”। [সূরা ৩/ আলে ইমরান – ৫৯]

কেবল আদম (আ) অথবা ঈসা (আ) নন, বরং আমরাও সৃষ্টি হবার পূর্বে ছিলাম আল্লাহ তায়ালার একেকটি শব্দ। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

هُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ فَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ

“তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, এবং যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তাকে বলেন – “হও”, ফলে তা হয়ে যায়”। [সূরা ৪০/ মু’মিন – ৬৮]

এ আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট যে, সব কিছুই আল্লাহর একেকটা ‘কুন’ শব্দ থেকে হয়। আল্লাহর ‘কুন’ শব্দটা একেক সময়ে একেকভাবে আমাদের মাঝে হাজির হয় এবং ঘটনার জন্ম দেয়।

‘কুন’ একটা কালিমা বা শব্দ। শব্দের সমন্বয়ে হয় বাক্য বা আয়াত বা নিদর্শন। কুরআনের বাক্যগুলো যেমন আল্লাহর আয়াত, তেমনি পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনাও আল্লাহর আয়াত।

যেমন আল্লাহ বলেন,

وَفِى ٱلْأَرْضِ ءَايَـٰتٌۭ لِّلْمُوقِنِينَ وَفِىٓ أَنفُسِكُمْ ۚ أَفَلَا تُبْصِرُونَ

“বিশ্বাসীদের জন্যে পৃথিবীতে “আয়াত” রয়েছে, এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও “আয়াত” রয়েছে; তোমরা কি তা দেখ না?” [সূরা ৫১/যারিয়াত – ২০ ও ২১]

জুলাই বিপ্লব আল্লাহর একটি আয়াত বা নিদর্শন। জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হবার জন্যে ‘কুন’ বা ‘হও’ শব্দটি আমাদের অন্তরে এসেছে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ এ শ্লোগানের মাধ্যমে।

১৫ জুলাই ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ শ্লোগানের মাধ্যমে ‘কুন’ বা ‘হও’ যখন উচ্চারিত হয়ে গেছে, তখন আর বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। এ ‘কুন’ শব্দ দিয়ে আল্লাহর ‘আয়াত’ বা ‘বিপ্লব’ সংগঠিত হবার শুরু হলো।

এ জন্যে আমার কাছে মনে হয়, ‘কুন ফা-ইয়াকুন’ গানটা আমাদের বিপ্লবী গান ছিলো।

গানের লিঙ্ক https://www.facebook.com/jobayer.bd/videos/397185653077666/

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক