জুলাই বিপ্লবে ইবনুল ওয়াক্তের ভূমিকা
জুলাই বিপ্লবের সাথে সুফী সম্পর্কটা বুঝতে পারবেন ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ পরিভাষাটা দিয়ে।
‘ইবনুল ওয়াক্ত’ শব্দটি বিপ্লবী নেতা Mahfuj Abdullah ভাই তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন সেদিন।
এ পরিভাষাটা আপনারা আরতুগরুল সিরিজেও পাবেন। ইবনে আরাবী বেশ কয়েকবার ইতিহাস পরিবর্তনকারী নায়কদের উপদেশ দিতে ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ পরিভাষা ব্যবহার করেছেন।
আরতুগরুল সিরিজে ক্লডিয়াস (Claudius) ইবনুল আরাবির কাছে এসে বললো, ‘আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। কিন্তু অতীত অপরাধ ভুলতে পারি না। সবসময় নিজেকে অপরাধী মনে হয়।’
ইবনুল আরাবি তখন ক্লডিয়াসকে বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ করলে মানুষ অতীতের সব পাপ মুছে নতুন এক জীবনে প্রবেশ করে। মানুষ হলো ‘ইবনুল ওয়াক্ত’।
জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা মূলত অতীতের ঝঞ্ঝাট মুছে নতুনভাবে দেশের জন্ম দিয়েছি। যারা এ সময়ের জন্ম দিয়েছেন, তাঁরা ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ ছিলেন।
‘ইবনুল ওয়াক্ত’ অর্থ হলো সময়ের সন্তান। যে ব্যক্তি অতীত ও ভবিষ্যতকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান সময়কে সর্বোত্তম ব্যবহার করে, তাকে ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ বলে।
ইবনুল আরাবী, ইমাম রাব্বানী, কুছাইরি সহ তাসাউফের অনেক সুফী ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
‘ইবনুল ওয়াক্ত’ মানে হলো, ঠিক এই মুহূর্তটি নিয়ে চিন্তা করা। ঠিক এই মুহূর্তে আমি যেখানে বসে, শুয়ে, বা দাঁড়িয়ে আছি, সেটাই আমার জায়গা। এবং ঠিক এই মুহূর্তটি হলো সর্ব উৎকৃষ্ট সময়, এটা মনে করাই হলো ইবনুল ওয়াক্তের কাজ।
‘ইবনুল ওয়াক্ত’ হল সেই ব্যক্তি, যিনি অতীত ও ভবিষ্যতের উদ্বেগ থেকে মুক্ত এবং কেবল বর্তমান সময়ের সর্বোত্তম মূল্যায়নে ব্যস্ত থাকেন
বাংলাদেশের জনগণ জুলাই মাসে ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ হবার কারণেই জুলাই বিপ্লব হয়েছে।
৬ তারিখে গণভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। যারা সময়ের সন্তান ছিলেন, বা ইবনুল ওয়াক্ত ছিলেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, ৬ তারিখ দেরি হয়ে যাবে। ফলে ৬ তারিখ থেকে ৫ তারিখে নিয়ে আসা হলো গণভবন ঘেরাও করার জন্যে। বর্তমানকে বুঝতে পারার ঠিক এ কাজটা হলো ‘ইবনুল ওয়াক্তে’র কাজ।
যারা ৭১ এর অতীত চেতনাকে ফেলে আসতে পেরেছেন। অভ্যুত্থান করার ফলে ভবিষ্যতের যে অনিশ্চিত জীবন আসবে, সে চিন্তাকে যারা বাদ দিতে পেরেছেন। এবং বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদী অত্যাচারকে যারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন, তাঁরাই জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়েছেন। তাঁরাই ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ হতে পেরেছেন।
অতীতের সময়ের সাথে সম্পর্কিত বস্তু নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানে হলো দ্বিতীয় একটি সময়ও হাতছাড়া করে হারিয়ে ফেলা। অতীতের জন্যে নিজেকে ব্যথিত বা উচ্ছ্বাসিত মনে না করাই ইবনুল ওয়াক্তের কাজ।
বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এসে ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ ধারণাটি আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বিপ্লবের উচ্ছ্বাস নিয়ে পড়ে থাকার চেয়ে বর্তমানের করনীয় সম্পর্কে ভালোভাবে নজর রাখা, বর্তমানকে ভালোভাবে বুঝা এবং বর্তমানকে ভালোভাবে ব্যবহার করার মানুষজন-ই হচ্ছেন ‘ইবনুল ওয়াক্ত’।
জুলাই বিপ্লব সফল হয়েছে দেশের মানুষ ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ বা ‘সময়ের সন্তান’ হবার কারণে। ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ হয়ে থাকতে পারলেই এ বিপ্লব ধরে রাখা যাবে, ইনশাআল্লাহ।