শিল্পকলার ফ্যাসিবাদী আচরণ

শিল্পকলার মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল বলেছেন,

“আমরা কী করে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাটকটাকে আরও জোরদার করতে পারি? এই কাজগুলো করতে হবে আমাদের।”

শহরের নাটক কেবল শিল্প?

গ্রামের ওয়াজ-মাহফিল কি শিল্প নয়?

শিল্পকলা কি কেবল সেকুলারদের জন্যে? ধার্মিকদের জন্যে না?

শিল্পকলার জন্যে কি ধার্মিকদের ট্যাক্স ব্যবহার করা হয় না?

কেন মহাপরিচালককে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে হবে?

শিল্পকলার কোনও পরিচালক যদি এটা বলতেন,

“নাটক সিনেমার বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলকে আমাদের আরও জোরদার কীভাবে করা যায়, তা দেখতে হবে।”

তখন আপনারা এই পরিচালককে উগ্রবাদী বলতেন না?

“নাট্যকলার বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টাডিজকে জোরদার করতে হবে” – এ কথাটা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলতেন, সেকুলাররা কী করতো? অভিনেতা অভিনেত্রীদের আচরণ কেমন হতো?

ওয়াজ-মাহফিল কি শিল্প নয়? তবে শিল্প কী?

শিল্প হলো সেই ক্ষমতা যা অদৃশ্য ও অনধিগম্যকে দৃশ্যমান ও অধিগম্য করে তোলে। সহজভাবে বলতে গেলে, অধরাকে ধরায় উপস্থাপন করাই হলো শিল্প।

তাহলে এই কাজটি কি ওয়াজ-মাহফিলে হয় না?

ওয়াজ-মাহফিলের মূল উদ্দেশ্য তো অদৃশ্য আল্লাহকে মানুষের অন্তরে গভীরভাবে অনুভব করানো, তাঁর সত্ত্বার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা।

তাহলে ওয়াজ-মাহফিল কেন শিল্পের মর্যাদা পাবে না? যখন এ মাধ্যমের মাধ্যমেই আধ্যাত্মিক সত্যকে মানুষের মনে জীবন্ত করে তোলা হয়, তখন সেটিকে শিল্প হবে না কেন?

ধর্ম উপদেষ্টা যদি বলতেন,

“নাটক সিনেমার বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলকে আমাদের আরও জোরদার কীভাবে করা যায়, তা দেখতে হবে।”

তখন সেকুলাররা এই ধর্ম উপদেষ্টার গুণগান গাইতেন?

ওয়াজের বিরুদ্ধে বলা শিল্পকলার সৈয়দ জামিল যদি পুলিশের চাকরি করতেন, তিনি ফাসিস্ট শাসনের মতো হুজুরদেরকে ওয়াজের মঞ্চ থেকে গ্রেফতার করতেন না?

শিল্পকলার সৈয়দ জামিল যদি ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ চাইতেন, তাহলে তিনি বলতেন,

“নাটকের মতো ওয়াজ-মাহফিলকেও আমরা শিল্প মনে করা প্রয়োজন।”

কিন্তু হাসিনার মত বিভাজনের বাংলাদেশ চায় বলে, সৈয়দ জামিল বলেছে,

“ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে নাটককে আরো জোরদার কীভাবে করতে হয়, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে”

সৈয়দ জামিল স্পস্ট বাংলাদেশকে আবার বিভক্ত করে দিচ্ছেন।

ন্যারেটিভ বনাম ফ্যাসিজমের পার্থক্য:

ন্যারেটিভ: “ওয়াজ-মাহফিল প্রচুর জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমাদের নাটকগুলোকেও জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করতে হবে।”

ন্যারেটিভ হলো একটি ইতিবাচক এবং প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে অন্য মাধ্যমের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজস্ব প্রচেষ্টাকে উন্নত করার তাগিদ দেওয়া হয়।

ফ্যাসিজম: “ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাটককে জোরদার করতে হবে।”

ফ্যাসিজম হলো একটি নেতিবাচক ও দমনমূলক মনোভাব, যেখানে অন্যের সাফল্যকে ধ্বংস করে নিজস্ব অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়।

“ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাটককে জোরদার করতে হবে।” -এ কথাটার উপর ভিত্তি করেই বিগত সময়ে হুজুরদেরকে রাজাকার বানানো হয়েছে, জনগণের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশকে বিভক্ত করা হয়েছে।

প্রথম আলো আমার কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে চলে না, কিন্তু শিল্পকলা একাডেমি জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকে পরিচালিত হয়।

যদি “ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাটককে জোরদার করতে হবে” এ ধরনের একটি বক্তব্য প্রথম আলোর মতো কোনো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কেউ বলতো, আমি এটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে গ্রহণ করতাম। কারণ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।

কিন্তু যখন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান—যা আমার দেওয়া ট্যাক্সের টাকায় চলে—এর মহাপরিচালক এমন কথা বলেন, তখন তা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার থাকে না। এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনগণের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার শামিল। এটি আসলে জনগণের অধিকার এবং তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা।

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক