সম্পদবৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ুর মূলনীতি
রাসূল (স) বলেছেন, “যে লোক ধনী ও দীর্ঘজীবী হতে চায়, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” [বুখারি, ৫৫৫৯]
এ হাদিসটি ইবনে খালদুনের তত্ত্বের মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝা যায়।
ইবনে খালদুনের মতে,
মানুষ একা একা চলতে তার জীবনের সকল প্রয়োজন মিটাতে পারে না। এ জন্যে মানুষ একে অপরকে সাহায্য করতে হয়; এবং এভাবেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে উঠে। মানুষ সমাজবদ্ধ হবার জন্যে প্রধান নিয়ামক হলো রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক। এটাকে খালদুন বলেন আসাবিয়াহ।
কোনো সমাজে যখন আসাবিয়াহ শক্তিশালী অথবা সমাজের সবার পারস্পারিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়, তখন সে সমাজ ধনী হতে থাকে, এবং তাদের সুখ বাড়তে থাকে।
এ কথাটা রাসূল (স) বলেছেন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে, আর খালদুন বলেছেন সমাজকে কেন্দ্র করে।
যেমন,
একটা ছেলে যখন মেসে থাকে, তখন তাকে নিজে বাজার করতে হয়, নিজে রান্না করতে হয়, নিজে কাপড় ধুতে হয়, নিজে টাকা উপার্জন করতে হয়। মেসে থাকা একটি ছেলে একাই যখন সব কাজ করে, তখন সে তেমন কোনো অবসর সময় পায় না। এমনকি তার প্রিয় গানটাও গাওয়ার সুযোগ হয় না। অন্যদিকে, যে ছেলেটা তার বাবা-মা ও পরিবারের সাথে থাকে, তাদের রান্না করে তার মা, টাকা উপার্জন করে তার বাবা, এবং তাকে কেবল সপ্তাহে দুই একবার বাজার করতে হয়। ফলে, মেসে একা থাকার চেয়ে পরিবারের সাথে থাকলে বেশি অবসর সময় পাওয়া যায়।
ইবনে খালদুন ঠিক উপরের ঘটনাটাই বলতে চেয়েছেন। যখন কোনো সমাজে পারস্পারিক সম্পর্ক বা আসাবিয়াহ বৃদ্ধি পায়, তখন মানুষ অনেক সহজে অনেক বেশি কাজ করতে পারে। ফলে তাদের আয় বাড়তে থাকে ও সুখ বাড়তে থাকে।
কিন্তু সমস্যা হলো, জীবনের প্রয়োজনে মানুষ যখন একত্রিত হয়, তখন তারা স্বার্থ-সচেতন হয়ে যায়। একজনের শ্রমের ফল অন্য জনে খেতে চায়। এ থেকে শুরু হয় মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব; এবং এ থেকেই শুরু হয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার প্রবণতা।
এ জন্যে রাসূল (স) এবং ইবনে খালদুন উভয়ের কথা হলো, যখন ব্যক্তি জীবনে বা সমাজ জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক বাড়ে, তখন মানুষ ধনী হতে থাকে, এবং দীর্ঘায়ু লাভ করেন।