ইবনে খালদুনের তত্ত্ব ও আধুনিক রাজনীতি
বর্তমানে যারা ‘খিলাফত বা ধর্মীয় রাষ্ট্রের’ কথা বলেন, তাদের একতার প্রধান উৎস বা আসাবিয়াহ হলো ধর্ম। অর্থাৎ, তারা কেবল ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র গড়তে চায়। তারা ভিন্ন ধর্মের কাউকে তাদের নিজেদের দলে বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাখতে চান না।
খালদুনের সাথে ‘আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্রের’ মৌলিক পার্থক্য এখানেই। খালদুনের মতে, রাষ্ট্র গঠনের জন্যে একতার প্রধান উৎস বা আসাবিয়াহ হবে রক্ত-গোত্র-ভাষার ভিত্তিতে। ধর্ম এসে সে সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করতে পারে, কিন্তু ধর্ম রাষ্ট্র গড়ার জন্যে প্রাথমিকভাবে একতার উৎস নয়। খালদুনের মতে, শরিয়ত কায়েম করতে হলেও আগে সঠিক অর্থে জাতীয়তাবাদ প্রয়োজন।
খালদুন তার এই সূত্রটি দিয়েছেন রাসূল (স)-এর একটি হাদিস থেকে। রাসূল (স) বলেছেন, “ইমামগণ কোরাইশদের মধ্য থেকে হবে”। রাসূলের (স) এ কথার কারণেই রাসূলের পরবর্তী খলিফা হয়েছেন কোরাইশদের মধ্য থেকে। অথচ, আনসারগণ চেয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে সাদ ইবনে আবু উবাইদা যাতে খলিফা হয়। [মুকাদ্দিমা, ১ম খণ্ড, ৩৫৭]
যদি কেবল ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই খলিফা নিয়োগ করা হতো, তাহলে হয়তো সাদ (রা) খলিফা হতেন। কিন্তু, যেহেতু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সাথে ভাষা ও গোত্রীয় জাতীয়তাবাদের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছিলো, তাই আবু বকর (রা)-কেই খলিফা নির্বাচিত করা হয়েছিলো।
আমাদের ধর্মীয় রাজনীতিতে দেশ ও ভাষাকে বাদ দিয়ে যে রাজনীতির চর্চা হয়, খালদুনের তত্ত্ব অনুসারে তা ভুল পদ্ধতি।