দু’জন নওমুসলিমের মুসলিম হওয়ার কারণ
খ্রিস্টান থেকে নতুন মুসলিম হয়েছে, এমন দু’জন ছাত্রকে তাফসীর পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাকে। এদের একজন Foday Koromah, অন্যজন Daniyah Sheriff
আজকে ফোদায়কে বললাম, “তুমি কেন মুসলিম হয়েছো?”
ফোদায় বললো, “আমাদের দেশ লাইবেরিয়ায় মুসলিম ১৫%, বাকিরা খ্রিস্টান। আমি নিজেও খ্রিস্টান ছিলাম তিন বছর আগে। নিয়মিত গির্জায় যেতাম, এবং বাইবেল পড়তাম। অনেকটা খ্রিস্টান ধর্মের স্কলার হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটা জিনিস আমি প্রায় ভাবতাম। আমাদের খ্রিস্টানরা প্রত্যেকে নির্দিষ্ট একটি গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতে হয়। এক গির্জার অনুসারী অন্য গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি নেই। কিন্তু মুসলিমরা দেখি সব মসজিদেই নামাজ পড়তে পারে। এ জিনিসটা আমি খুব ভাবতাম।
দ্বিতীয়ত, মুসলিমরা যে গোত্রের-ই হোক না কেন, একে অপরের সাথে দেখা হলেই বলে, “আসসালামুয়ালাইকু”; কিন্তু আমাদের খ্রিস্টানরা এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের দেখা হলে, কোনো কথাই বলে না। খ্রিস্টানরা এক গোত্র অপর গোত্রকে দেখতে পারে না, কিন্তু মুসলিমরা সবাই একসাথে মিলে চলে।
তৃতীয়ত, আমাদের খ্রিস্টানরা প্রার্থনা করে ঘণ্টা বাজিয়ে, নাচানাচি করে। কিন্তু মুসলিমরা সুন্দর করে দাঁড়িয়ে কাতারবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়ে। এ জিনিসটা আমাকে খুব আকর্ষণ করতো। একদিন আমি বাইবেল পড়তে পড়তে দেখলাম, সেখানে লেখা আছে, ফেরেশতারা কাতারবদ্ধ হয়ে প্রার্থনা করে, এবং মাটিতে সেজদা দেয়। বাইবেল পড়ে যখন আমি বুঝতে পারলাম, মুসলিমরাই কেবল ফেরেশতাদের মতো প্রার্থনা করে, তখন আমি নিজেও মুসলিম হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম, এবং মুসলিম হয়ে গেলাম।”
এরপর আমি ফোদায়কে জিজ্ঞেস করলাম, “ইসলাম গ্রহণ করার কারণে পারিবারিক কোনো সমস্যা হয়নি?”
সে বললো, “বিশাল সমস্যা হয়েছে। আমি বিবাহিত; আমার দুই সন্তান আছে। আমার স্ত্রী যখন শুনলো, আমি মুসলিম হয়েছি, সে আমার সন্তানদের ফেলে তার বাপের বাড়ি চলে গেছে। আমার সন্তানদেরকে আমার মা দেখাশুনা করতো তখন। কিন্তু আমার মা-বাবাও আমার উপর খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন, এখনো অসন্তুষ্ট। আমি আমার স্ত্রীকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার স্ত্রী বলে, “ইসলাম নারীদেরকে অপমান করে, চার বিয়ে করতে বলে, আমি এ ইসলাম গ্রহণ করবো না।”
ফোদায় আরো বলে, “আমি তখন ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না, তাই আমার স্ত্রীকে ভালোভাবে বুঝাতে পারিনি। এখন নিজেও ইসলাম শেখার চেষ্টা করছি, এবং আমার স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। এখন সে আগের চেয়ে অনেকটা নরম হয়েছে, কিন্তু এখনো ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমি আল্লাহর কাছে রাতদিন দোয়া করি, যেনো আমার পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে।”
ফোদায়কে জিজ্ঞাস করার পরে Daniyah কে জিজ্ঞাস করলাম, কেন সে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
দানিয়াহ বললো, “আমার বয়সী এক ছেলেকে দেখতাম, আযান দিলেই সে অজু করতে চলে যেতো, এবং পানি দিয়ে হাত-মুখ-পা ইত্যাদি ধৌত করতো। বিষয়টা আমার আছে খুব ফালতু ও অযৌক্তিক লাগতো। আমি তাকে দেখে দেখে উপহাস করতাম ও হাসতাম। কিন্তু মুসলিম ছেলেটা কখনো রাগ করতো না। একদিন তার বাবা আমাকে তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়, এবং আমাকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করে ইসলামের কথা বলে। আমি তাদের দয়ামায়া দেখে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছি।”
আমার এ দুইজন ছাত্রের কথা শুনে আজকে নিজের অজান্তেই কান্না চলে আসলো। খ্রিস্টান দেশে মুসলিমদের যে একতা ও দয়ামায়া দেখে খ্রিস্টানরা মুসলিম হয়, আমাদের দেশে মুসলিমদের সে একতা ও দয়ামায়া নেই।
3 December 2019 at 8:00 pm