মুখস্তবিদ্যার ক্ষতিকর দিকসমূহ
পড়াশুনার ক্ষেত্রে মুখস্থবিদ্যা কতটা ক্ষতিকর, তা ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দিমা’য় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ইবনে খালদুনের মতে, কোনো জাতি বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি মুখস্থবিদ্যার প্রতি বেশি জোর দেয়, তাহলে সে শিক্ষা দিয়ে তাদের কোনো লাভ হয় না।
ইবনে খালদুন বলেন –
فتجد طالب العلم منهم بعد ذهاب الكثير من أعمارهم في ملازمة المجالس العلمية سكوتاً لا ينطقون و لا يفاوضون و عنايتهم بالحفظ أكثر من الحاجة. فلا يحصلون على طائل من ملكة التصرف في العلم و التعليم ثم بعد تحصيل من يرى منهم أنه قد حصل تجد ملكته قاصرة في علمه إن فاوض أو ناظر أو علم و ما أتاهم القصور إلا قبل التعليم و انقطاع سنده. و إلا فحفظهم أبلغ من حفظ سواهم لشدة عنايتهم به، و ظنهم أنه المقصود من الملكة العلمية و ليس كذلك.
(অনুন্নত অঞ্চলের) ছাত্ররা জীবনের অধিকাংশ সময় জ্ঞানের সভায় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে দিলেও তারা নিশ্চুপ থাকে। নিজ থেকে তারা কোনো কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করে না, এবং কারো প্রতি কোনো কিছু আরোপ করার ক্ষমতাও তাদের থাকে না। কারণ, তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত মুখস্থ নিয়েই পড়ে থাকে। ফলে, দীর্ঘ সময় ব্যয় করেও তারা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারে না, এবং অন্যকে জ্ঞান প্রদান করতেও পারে না। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের জ্ঞান অর্জন সম্পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হয়, তারাও কোনো দায়িত্ব পালনে যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে. না, এবং বিতর্কে ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ভালো করছে না। তাদের এসব ত্রুটির একমাত্র কারণ হচ্ছে তারা প্রকৃত শিক্ষা ও এর ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে; যদিও তাদের মুখস্থ করার শক্তি অন্যদের চেয়ে বেশি, এবং মুখস্থ করার জন্যে তারা তাদের সর্বশক্তি ব্যয় করছে। তাদের ধারণা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে কেবল মুখস্থবিদ্যাকেই বলে। অথচ, শিক্ষা মানে তা নয়।)
ইবনে খালদুনের উপরোক্ত কথার সাথে আমাদের দেশের কওমি মাদ্রাসার বেশি মিল পাওয়া যায়। যদিও সরকারী মাদ্রাসা ও বাংলা মিডিয়াম স্কুল-কলেজেও মুখস্থ করানোর প্রবণতা রয়েছে।
যাই হোক, ইবনে খালদুন এই মুখস্থবিদ্যা থেকে মুক্তির পথও বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন –
و أيسر طرق هذه الملكة فتق اللسان بالمحاورة و المناظرة في المسائل العلمية فهو الذي يقرب شأنها و يحصل مرامها.
(জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, পারস্পরিক কথোপকথন (আড্ডা) ও বিতর্কের (থিসিস-এন্টিথিসিস) মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা।)
সুতরাং, কওমি মাদ্রাসা সহ আমাদের সকল শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
22 September 2018 at 11:34 ·