“বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি”

অনার্সে ঢাবির এফ রহমান হলে থাকতে হয়েছে চার বছর। তাই, আবাসিক হলগুলোর নোংরা ও দূষিত রাজনীতি অনেক দেখতে হয়েছে।

প্রথম বছর গণরুমে ছিলাম। ছোট্ট একটা রুমে ৩০ জন ছাত্র থাকতো। সবাই ফ্লোরে ঘুমাতে হতো। অনিচ্ছায় প্রথম বছর ছাত্রলীগ করার ফলে পরের বছরগুলোতে অন্যরুমে একটা সিট পেয়েছিলাম। একজনের সিটে আমরা দু’জন থাকতাম, এবং ৪ জনের রুমে আমরা ৮ জন থাকতাম। সিট বরাদ্দ হয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে। হল প্রভোস্টের কাজ ছিলো কেবল বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করা। এ ছাড়া তিনি আর কিছুই করতে পারতেন না।

এবার রাজনীতির স্টাইলটা বলি।

ধরুন, আপনার নাম রাসেদ। আপনার বাবা অনেক কষ্টে কৃষি কাজ করে আপনার পড়াশুনার জন্যে টাকা পাঠিয়েছেন। আপনি টাকাগুলো বিকাশ থেকে তুলে এনে, হলের টেবিলের উপর মানিব্যাগ রেখে গোসল করতে গেলেন। গোসল করে এসে দেখলেন যে মানিব্যাগে টাকা নেই। রুমমেটদের একজনকে হয়তো আপনার সন্দেহ হলো। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে আপনার উপর রেগে গেলো। রাগারাগির এক পর্যায়ে সে আপনাকে বলবে, “এই তুই তো শিবির। আজকেই তোকে হল থেকে বের করবো”।

যেই কথা সেই কাজ। যে টাকা চুরি করেছে, সে রাতেই হলের ছাত্রলীগের একজনকে মিথ্যা অভিযোগ করে বলে যে, “রাসেদ শিবির করে। আমি তাকে নীলক্ষেতে শিবিরের একজনের সাথে বসে নাস্তা করতে দেখেছি।”

ব্যস, কাজ শেষ। ঐ রাতেই আপনাকে মেরে হল থেকে বের করে দেয়া হবে। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো পুলিশে দিবে না, কিন্তু অধিকাংশদেরকে পুলিশে দিয়ে দেয়া হয়। আর, ঐ যে চোর ছাত্রটি, সে ছাত্রলীগের নতুন একটি পদ পেয়ে যায়। এভাবেই চলে হলের রাজনীতি। এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছি আমি। এমনকি নিজেও নির্যাতিত হয়ে হল থেকে বের হয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি হলো, কোনো ছাত্র নিজের অপরাধ ঢাকার জন্যে অন্য নির্দোষ ছাত্রদেরকে শিবির ব্লেম দিয়ে দেয়া এবং এরপর মারধর করার লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া।

17 April 2018 at 21:44 

আরো পোস্ট