ইসলাম হচ্ছে একটি আন্দোলন ও কর্মমুখী ধর্মের নাম
ইসলাম একটি আন্দোলন ও কর্মমুখী ধর্ম। অলসভাবে বসে বা শুয়ে থাকার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই।
কোর’আনের প্রথম আদেশ হলো – “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেন।” [৯৬/১]
আর, দ্বিতীয় আদেশ হলো – “হে! কম্বল মুড়িয়ে থাকা ব্যক্তি! উঠে দাঁড়াও এবং সতর্ক করো” [৭৪/১-২]
প্রথম আদেশে সৃজনশীল প্রভুর নামে জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে, যাতে পৃথিবীতে আমরাও সৃজনশীল কিছু তৈরি করতে পারি। এরপর, দ্বিতীয় আদেশে শরীরে জড়িয়ে রাখা কম্বলটি ফেলে দিতে বলা হয়েছে, এবং উঠে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।
কোর’আনে যত স্থানে জ্ঞানগত ঈমানের কথা বলা হয়েছে, ততস্থানেই কর্ম বা আমলের কথা বলা হয়েছে।
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
“আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিন, যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে। নিশ্চয় তাঁদের জন্যে রয়েছে এমন জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে”। [সূরা বাকারা – ২৫]
ঈমান মানুষের জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত, আর আমল মানুষের কর্মের সাথে সম্পর্কিত। ইসলামের জ্ঞান ও কর্ম একইসাথে চলে। জ্ঞান ছাড়া যেমন কর্ম বৃথা, তেমনি কর্ম ছাড়াও জ্ঞান বৃথা।
সহজে বুঝার জন্যে আমরা একটি ট্রেনকে কল্পনা করতে পারি। ধরুন, ট্রেনটির নাম ইসলাম। দুটি লাইনের উপর ভর করে ইসলাম নামক ট্রেনটি সামনে চলতে পারে। এখানে একটি লাইনের নাম হলো ঈমান বা জ্ঞান, এবং অপর লাইনটির নাম হলো কর্ম। ট্রেনটি সামনে চলতে হলো দুটি লাইন-ই পাশাপাশি থাকতে হয়। কেবল একটিমাত্র লাইনের উপর ভর করে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। যে কোনো একটি লাইন বিচ্যুত হলেই ট্রেনটি এক্সিডেন্ট করে। তেমনি, জ্ঞান ও কর্ম যে কোনো একটি লাইন থেকে কারো ইসলাম যখন বিচ্যুত হয়ে যায়, তখন তাঁর ধর্ম অচল হয়ে যায়।
__________
আল কোর’আনে ‘জ্ঞান’ শব্দটির জন্যে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ইলম [علم]। এখানে তিনটি অক্ষর রয়েছে [ع – ل – م]। অন্যদিকে ‘কাজ’ শব্দটি বুঝানোর জন্যে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো আমল [عمل]। এখানে তিনটি অক্ষর রয়েছে – [ع – م – ل] ।
অর্থাৎ, ‘ইলম’ ও ‘আমল’ শব্দ দুটি একই শব্দমূল থেকে এসেছে। কোর’আনের ভাষায়, জ্ঞান ও কর্ম একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ঠিক ট্রেনের দুটি লাইনের মতোই।
কেবল জ্ঞানের জন্যে জ্ঞান, (knowledge for sake of knowledge) অথবা শিল্পের জন্যে শিল্প (art for art’s sake) – এই ধারণাগুলো ইসলামে নেই। ইসলামে ‘জ্ঞান’ ও ‘কাজ’ দুটি বিষয় পরস্পর দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এ কারণেই মুসলিম দার্শনিক আল্লামা ইকবাল তাঁর “The reconstruction of religious thought in islam” বইয়ের শুরুতেই বলেছিলেন – “The Qur’an is a book which emphasizes deed rather than idea.”
ইসলামের প্রতিটি কাজ যেমন জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তেমনি প্রতিটি জ্ঞান-ও কর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণে যে জ্ঞান প্রয়োগ করা যায় না, ইসলাম তাকে জ্ঞান হিসাবে স্বীকার করে না। একইভাবে, ঈমানহীন বা জ্ঞানহীন কাজের কোনো মূল্য ইসলামে নেই।
থিউরি ও প্র্যাকটিসকে সমানভাবে মূল্য দেয় ইসলাম। অনেকেই ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক থিউরিকে অনেক গুরুত্ব দিলেও ইসলামের আন্দোলনকে মোটেও গুরুত্ব দেন না। আবার, অনেকেই ইসলামী আন্দোলনকে অনেক গুরুত্ব দিলেও ইসলামী জ্ঞান বা থিউরিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। এদের উভয়ের উদাহরণ হলো ঐ ট্রেনটির মতো, যা একটি লাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।
সুতরাং, ইসলাম হচ্ছে একটি আন্দোলন ও কর্মমুখী ধর্মের নাম। এখানে জ্ঞান ও কর্ম সমান্তরালভাবে চলে। ঈমান বা জ্ঞান ছাড়া কর্ম সফল হতে পারে না, তেমনি কর্ম ছাড়াও জ্ঞান সার্থক হতে পারে না।
20 December 2017 at 20:46 ·