মাকাসিদে শরিয়াহ জানার প্রয়োজনীয়তা

কেবল নামাজ-রোজা পালন করতে বলার নাম শরিয়াহ। আর, কেন নামাজ-রোজা পালন করতে হবে, তা যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে বুঝিয়ে বলার নাম মাকাসেদে শরিয়াহ বা শরিয়ার উদ্দেশ্য।

আল্লাহর ইবাদত করলে আমরা জান্নাতে যাবো, আর ইবাদাত না করলে আমরা জাহান্নামে যাবো, এটা বলার নাম শরিয়াহ। কিন্তু, কেন আল্লাহর ইবাদাত করটা আমাদের প্রয়োজন, তা যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বুঝিয়ে বলার নাম মাকাসেদে শরিয়াহ।

অর্থাৎ, ইসলামের কার্যক্রমগুলো যুক্তির মাধ্যমে বোঝার যে চেষ্টা, সেটাকেই মাকাসেদে শরিয়া বলা হয়।

যেমন রাসূল (স) বলেন যে, স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্কটাও সদকাহ। সাহাবীগণ এই কথার মর্ম বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! কেউ তার স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করলে সেখানে আবার সাওয়াব হয় কিভাবে?”

রাসূল (স) বললেন, “কেউ যদি অবৈধ উপায়ে কোনো নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে, তাহলে কি সে পাপের ভাগি হবে না? একইভাবে কেউ যদি তা বৈধ উপায়ে নিজের স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে, তাহলে সে পূর্ণ অর্জন করবে।” [মুসলিম, ২/৬৯৭]

উপরোক্ত হাদিসটায় দেখুন। যখন রাসূল (স) বললেন, স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্কটাও সাদাকাহ; তখন তিনি শরিয়তের একটি নিয়ম বললেন। কিন্তু, সাহাবীদের জিজ্ঞাসার জবাবে যখন রাসূল (স) শরিয়তের নিয়মটা যুক্তি দিয়ে সাহাবীদেরকে বুঝিয়ে বললেন, তখন রাসূল (স) মাকাসেদে শরিয়াহ বা শরিয়াহ উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বললেন।

বর্তমানে যারা ওয়াজ-নসিহত করেন, তারা কেবল শরিয়ার নিয়ম নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু, যুক্তি দিয়ে রাসূল (স)-এর মতো শরিয়াহর নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করে বলে দিতে পারেন না।

ইমাম গাজালি তাঁর এহইয়াউ উলুমুদ্দিন গ্রন্থে ঠিক এই কাজটিই করেছেন। শরিয়তের নিয়মগুলো উল্লেখ করার পরে তিনি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন শরিয়তের নিয়মগুলো আমাদের প্রয়োজন। আমাদের ভারতবর্ষের শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা গ্রন্থেও একইভাবে শরিয়ার নিয়মগুলো যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বুঝিয়েছেন।

দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের হুজুররা কেবল শরিয়াহ নিয়ে কথা বললেও শরিয়ার নিয়মগুলো যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দেন না।

সূত্র –

وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ: «أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ»
[صحيح مسلم 2/ 697]

আরো পোস্ট