কোর‘আন পড়া হয়নি কেন? ( একটি আত্মজিজ্ঞাসা)
এমন অনেক সময় পার করেছি, যখন এক মাসে একটি অক্ষরও কোর’আন পড়া হয়নি। পড়ার খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়া হত না। যথেষ্ট সময় ও সুযোগ ছিল না, -এ অজুহাত হয়তো দিতে পারি; কিন্তু এতে কেবল নিজের কাছে নিজের সততাই ভেঙ্গে পড়বে। সব কাজই তো করেছিলাম, কেবল কোর‘আন পড়া হয়নি কেন?
আজ হঠাৎ নিজেকে নিজে চিন্তার কাঠগড়ায় দাঁড় করলাম। কেনো কোর‘আন পড়তাম না তখন? –এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করলাম। কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছি, যা হয়তো বা অন্যদের সাথেও মিলে যেতে পারে। তাই এখানে শেয়ার করলাম।
এক.
কোনো একদিন হয়তো কোর‘আন নিয়ে বসলাম। কেবল পড়তে শুরু করব, এমন সময় মাথায় আসলো, একটু ফেইসবুকে ঢুঁ মেরে আসি। দুই মিনিট পরেই না হয় কোর‘আন পড়া শুরু করব। যেই ভাবা সেই কাজ। দুই মিনিটের জন্যে ফেইসবুকে গেলাম; কিন্তু দুই মিনিট তো আর শেষ হচ্ছে না। দুই ঘণ্টা পরেও আমার সে ‘দুই মিনিট’ শেষ হলো না। ফলে সেদিন আর কোর‘আন পড়া হলো না; অন্য একটি জরুরি কাজে চলে যেতে হল।
দুই.
অসংখ্য সমস্যায় ক্ষত-বিক্ষত আমাদের দেশ ও সমাজ। আগে ভাবতাম – এসব সমস্যার সমাধান জানতে হলে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিজীবীদের বই পড়তে হবে। সাধারণত, কোর‘আনে এসব সমস্যার সমাধান ও তর্ক-বিতর্কগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করতাম না। ফলে কোর‘আন পড়ার তখন তেমন আগ্রহ হত না। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করুক। এখন, যে কোনো সমস্যার সমাধান আগে কোর’আনে খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। তাই এখন আগের চেয়ে কোর‘আন পড়তে অনেক বেশি ভালো লাগে।
তিন.
কোর’আনে মুমিন-মুসলিমদের জন্যে পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে, অন্যদিকে কাফের-মুশরিক-জালিমদের জন্যে বলা হয়েছে মহা শাস্তির কথা। আগে ভাবতাম – পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে আমাদের ‘ঈমানদারদের’ জন্যে; আর শাস্তির কথা বলা হয়েছে অন্যদের জন্যে। ফলে, আমরা যারা ঈমান এনেছি, তাদের কোর‘আন না পড়লেও চলবে। ইনশাল্লাহ, আমরা ‘ঈমানদাররা’ সব জান্নাতে চলে যেতে পারব।
চার.
কোর‘আনকে কখনো নিজে নিজে বুঝার চেষ্টা করতাম না। কোর‘আনের মাধ্যমে যে আল্লাহ্ তায়ালার সাথে একাএকা কথা বলা যায়, এ ধারণাটাও তখন ছিল না। ফলে যখন কোর’আন নিয়ে অন্য মানুষদের বুঝ নিজের মাথায় প্রবেশ করানোর জোর চেষ্টা করতাম, তখন প্রায়ই মাথা বিদ্রোহ করে বসত। যা-ই পড়তাম, কিছুই মাথায় যেতো না। আবার কখনো দেখা যেতো, বিদ্রোহের পরিবর্তে মাথা অবশ হয়ে গেলো। আর আরামে টেবিলের উপর ঘুম চলে আসল।
পাঁচ.
সত্যি বলতে, পত্রিকার একটি সংবাদ বা কলামকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হত, কোর‘আনকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হত না। কারণ একটাই – সমসাময়িক বিষয়গুলো জানলে পরে লোকে আমাকে ‘জ্ঞানী’ ভাববে। কিন্তু কোর‘আনের চিরন্তন বিষয় ও কার্য-কারণগুলো জানলে আশেপাশের মানুষেরা মোল্লা বললেও ‘জ্ঞানী’ বলবে না। তাই কোর‘আন পড়া হত না।
December 11, 2015 at 10:28 PM ·