ফির‘আউনি কায়দায় অত্যাচারিত বাংলাদেশ এবং আমাদের করনীয়

ফির‘আউনি কায়দায় অত্যাচারিত বাংলাদেশ এবং আমাদের করনীয় সম্পর্কে কোর‘আনের কিছু আয়াত।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

[সূরা তা-হা, আয়াত – ৪৩ থেকে ৪৬]
ٱذْهَبَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُۥ طَغَىٰ
فَقُولَا لَهُۥ قَوْلًۭا لَّيِّنًۭا لَّعَلَّهُۥ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
قَالَا رَبَّنَآ إِنَّنَا نَخَافُ أَن يَفْرُطَ عَلَيْنَآ أَوْ أَن يَطْغَىٰ
قَالَ لَا تَخَافَآ ۖ إِنَّنِى مَعَكُمَآ أَسْمَعُ وَأَرَىٰ

৪৩) তোমরা উভয়ে ফির‘আউনের কাছে যাও, সে সীমালঙ্ঘন করেছে।
৪৪) তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।
৪৫) তারা বলল – হে আমাদের রব, আমরা আশঙ্কা করি, সে আমাদের উপর নির্যাতন করবে বা সীমালঙ্ঘন করবে।
৪৬) তিনি বললেন – তোমরা ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমি শুনি ও দেখি।

ভূমিকা-
যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যখন মাজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়ে যালিমের বিরুদ্ধে দলবদ্ধভাবে কিছু করা সম্ভব হয় না। তখন কেবল আল্লাহর সাহায্য চাইতে হয় এবং পরিকল্পিত কিছু কাজ করতে হয়। আলোচ্য আয়াতগুলোতে সে সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

লক্ষণীয় বিষয় – ১
আয়াতে মূসা (আ)-কে বলা হয়েছে, ফির‘আউনের সাথে নম্র ভাষায় কথা বলতে, যাতে সে উপদেশ গ্রহণ করে কিংবা ভয় পায়। দেখুন, ফির‘আউনের মত যালিম লোকের সাথেও আল্লাহ তায়ালা নম্র ভাষায় কথা বলতে বলেছেন। কারণ, মানুষকে গরম-গরম কথা বললে সে কখনো উপদেশ গ্রহণ করে না; বরং তার মাঝে প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে ওঠে। মানুষের সাথে নম্রভাবে কথা বললেই কেবল সে উপদেশ গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়।

প্রশ্ন – ১
আয়াতে আল্লাহ বলেছেন – “সম্ভবত ফির‘আউন উপদেশ গ্রহণ করবে কিংবা ভয় পাবে”। প্রশ্ন হলো – নম্রভাবে কথা বললে কি যালিমরা ভয় পায়? উত্তর – হ্যাঁ, ভয় পায়। তবে এর জন্যে বক্তাকে যথেষ্ট যুক্তি ও বুদ্ধির ব্যবহার করতে হয়। কড়া-কড়া কথার মধ্যে যথেষ্ট আবেগ থাকলেও, যুক্তি-বুদ্ধির ব্যবহার থাকে না। নম্রভাবে কথা বলে কাউকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। যেমন মূসা (আ) নম্র ভাষায় কথা বলে, তাঁর যুক্তি ও বুদ্ধির মাধ্যমে ফির‘আউনকে ভয় লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ভয় পেয়ে সে বলল –“হে মূসা! তুমি কি আমাদের নিকট এসেছ তোমার যাদু দিয়ে আমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করে দেয়ার জন্যে? [সূরা তা-হা, আয়াত – ৫৭]

ফির‘আউন যখন ভয় পেয়ে এ কথা বলল, তখনো কিন্তু মূসা (আ) তাঁর কোনো মুজিযা প্রদর্শন করেননি। তিনি ফির‘আউনকে কেবল যৌক্তিক কিছু কথা শুনিয়ে দেয়ার পরই ফির‘আউন ভয় পেয়ে গেলো। এই সূরার ৫৭ নং আয়াতে ফির‘আউন ভয় পেয়েছে; আর ৬৯ নং আয়াতে গিয়ে মূসা (আ) তাঁর মুজিযা প্রদর্শন করেছেন, যখন ফির‘আউনের দল আগেই যাদু নিয়ে হাজির হয়।

করণীয় বিষয় – ১
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রায়ই দেখি, যালিম সরকারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে, কড়া ভাষায় অনেক কথা বলা হচ্ছে, কেউ কেউ গালাগালিও করছে। এভাবে কথা বললে আসলে কোনো লাভ হয় না, বরং ক্ষতিই বেশি হয়। সরকার জালিম হলেও তাকে আমাদের গঠনমূলক উপদেশ ও পরামর্শ দিতে পারি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা উপদেশ দেই না বলে সরকার ভারত থেকে উপদেশ আমদানি করে। অনেকে বলবেন – বাংলাদেশের যালিম সরকারকে উপদেশ দিয়ে লাভ নেই। দেখুন, আল্লাহ তায়ালা জানতেন যে, ফির‘আউন মূসা (আ)-এর উপদেশ গ্রহণ করবে না, তবুও তিনি মূসা (আ)-কে পাঠালেন, নম্র ভাষায় উপদেশ দিয়ে আসার জন্যে।

কাউকে উপদেশ দিতে হলে তাকে নানাভাবে বুঝাতে হয়। চিন্তা করার সুযোগ দিতে হয়। বলতে হয় – “দেখো, আমি তোমার ভালোর জন্যেই কথাগুলো বলছি।” বাংলাদেশের সরকার অনেক বড় যালিম। ঠিক। কিন্তু, তাকে উপদেশ দেয়ার মত ভালো মানুষ আজ কই? আমাদেরকেই সে দায়িত্ব নেয়া উচিত।

লক্ষণীয় বিষয় – ২
বাংলাদেশে এখন ভয়ঙ্কর জুলুম-নির্যাতন চলছে। এসব দেখে আমরা অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছি। আমরা ভাবছি – ইসলাম তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, আমরা নিজেরাও আজ ইসলামকে ভালোভাবে জানা ও বুঝার চেষ্টা করছি না। মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার চেয়ে ইসলামকে ‘রক্ষা’ করাই এখন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মনে হচ্ছে। অথচ, ইসলাম কখনো ধ্বংস হবার নয়। আমাদের হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত। পৃথিবীতে কেউ কখনো ইসলামের বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করতে পারেনি; পারবেও না, ইনশাল্লাহ। দেখুন, ফিরআউন ছিল বিশ্ব-কাঁপানো যালিম। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা মূসা (আ)-কে ফির’আউনের কাছে যেতে বললেন। প্রথমে মূসা (আ) ভয় পেলেন ও কিছুটা হতাশ হলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নির্ভয় দিয়ে বললেন – “ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গেই আছি।”

করণীয় বিষয় – ২
যালিমের শক্তি দেখে আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। মাজলুমের সাথে আল্লাহ আছেন। তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত। তিনি সবকিছু দেখেন, শুনেন এবং পরিকল্পনা করেন। যুগে যুগে তিনি যালিমদের পরিকল্পিত ছকে ফেলেই তাদেরকে ধূলিসাৎ করেছেন। সুতরাং বাংলাদেশের ইসলাম নিয়ে কোনো ধরণের হতাশা বা ভয় আমাদের মাঝে থাকা উচিত নয়।

হতাশা কেবল মানুষকে উত্তেজিত করে। সঠিক ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতে দেয় না।

আমরা নিজেরা নিজেদেরকে কতটা ইসলামের সাথে সম্পর্কিত করতে পেরেছি, কতটা সঠিক ও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছি – এটাই এখন দেখার বিষয়। মাজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়ে যালিমের বিরুদ্ধে লড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু, নিজের দ্বারা সৃষ্ট জুলুমের বিরুদ্ধে নিজে লড়া তার চেয়েও বড় কাজ। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের এখন সে কাজগুলো করা উচিত।

December 1, 2015 at 10:15 PM · 

আরো পোস্ট