মিডিয়া দেখে বাংলাদেশকে বুঝতে যাবেন না, প্লিজ
অবাক হই, যখন দেখি এখনও কিছু মানুষ খুব আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে পত্রিকা পড়েন, খবর দেখেন। তারা এখনও মনে করেন, মিডিয়া গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, এ দেশের মিডিয়া কখনই গণমানুষের কথা বলেনি। হোক ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।
কিছু বন্ধুকে দেখি, ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা না পড়া পর্যন্ত দাঁত ব্রাশ করেন না। রাতে দুই-তিন ঘণ্টা সংবাদ/টক-শো না দেখে ঘুমাতে যান না। পত্রিকা আর খবর দেখেই তারা দেশের হাল-হাকিকত বা চলমান গণ-অভ্যুত্থানের খবর জানতে চান। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে যতই সময় অতিক্রম হয়েছে, বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ততই সরকারের বিশ্বস্ত ‘প্রাইভেট সেক্রেটারি’ হয়ে উঠেছে।
মিডিয়া কখন-ই আমাদের সত্য জানতে দেয় না। তারা শুধু আমাদের চোখের সামনে একটা পর্দা ধরে রাখে, যাতে আমরা প্রকৃত সত্য না দেখতে পারি। আজকাল বিশ্ব মিডিয়া যতটা না সত্য গোপন করে, তারচেয়ে শতগুণে বেশি মিথ্যা বলে বাংলাদেশের মিডিয়া; হয় শাসকের ভয়ে, নয় অযোগ্যতায়। তারা কখনোই গণমানুষের কথা বলার সাহস করেনি।
আজ ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক ব্লগারের উদ্দেশ্যে ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম দু’টি প্রশ্ন করে হাত তুলতে বলেন। সেখানে ডানপন্থী, বামপন্থী, আঁতেল সব ধরণের ব্লগার উপস্থিত ছিল। তিনি জানতে চাইলেন-
এক. ‘আপনারা কতজন বিটিভি-কে বিশ্বাস করেন?’ একজন ব্লগারও হাত তুললেন না।
দুই. ‘আপনারা কতজন প্রাইভেট মিডিয়া-কে বিশ্বাস করেন?’ অবাক হবার ব্যাপার, এবারেও কেউ হাত তুললেন না।
তার মানে কী দাঁড়ালো? দেশের সব মিডিয়া-ই এখন বিটিভি বা সরকারের ‘প্রাইভেট সেক্রেটারি’-তে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাপারটা যে শুধু এখন হচ্ছে তা না। বিভিন্ন পত্রিকার পুরাতন সংখ্যাগুলো পড়ে দেখলে আপনিই অনুমান করতে পারবেন, মিডিয়া কখন কতটা সরকারের দালালি করেছিল।
দু’টি উদাহরণ দিচ্ছি…
১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা শেখ মুজিবের গুণগান গেয়ে গেয়ে যাচ্ছিল, নিয়মিত বাকশালের নানা উপকারিতা গণমানুষের সামনে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু যে দিন শেখ মুজিব নিহত হলেন, তার পরের দিন থেকে শুরু করে প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত ‘শেখ মুজিব’ শব্দটি ইত্তেফাক পত্রিকায় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর আমাদের জাতীয় চার নেতা ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে নিহত হলেন। ২ তারিখ ও ৭ তারিখ দুই-দুইটা সেনা অভ্যুত্থান হল। অথচ, পত্রিকায় এসব কোনো খবর-ই প্রকাশ হল না। চার নেতা নিহত হবার ১ সপ্তাহ পর দৈনিক ইত্তেফাক খুব ছোট্টকরে একটি নিরীহ খবর ছেপে বলল, ‘উল্লেখ্য যে, তারা গত ২ নভেম্বরে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে নিহত হয়েছেন’।
এভাবে আরও অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে, এখন সে দিকে যাচ্ছি না। শুধু একটাই অনুরোধ, মিডিয়া দেখে বাংলাদেশকে বুঝতে যাবেন না, প্লিজ।
February 22, 2015 at 10:40 PM ·