ভালো কথা বা ডিসকোর্স কি?
কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ মুমিন-মুসলিমদেরকে ভালো কথা বা ডিসকোর্স দ্বারা দুনিয়া-আখিরাতে শক্তিশালী করেন। (কোরআন,১৪:২৭)।
প্রশ্ন হলো, ভালো কথা বা ডিসকোর্স কী?
ভালো কথার সংজ্ঞা ও উদাহরণ কোরআনে দেয়া হয়েছে।
ভালো কথা হলো এমন একটি গাছের মতো, যার শিকড়গুলো মাটিকে মজবুতভাবে ধরে আছে, এবং যার ডালপালাগুলো আকাশের দিকে বাড়তে থাকে স্বাধীনভাবে। আর খারাপ কথা হলো এমন গাছ, যার শিকড়কে মাটির নিচ থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে, এবং গাছটি আর আকাশের দিকে বাড়তে পারছে না, বরং মাটিতে পড়ে আছে।(সূত্র : আল কোরআন, ১৪:২৪-২৬)
কোরআনের এ কথাটাকে আরেকটু ভালো করে বুঝার জন্যে এখানে ‘মাটির নিচ’কে আমাদের ফেলে আসা অতীত হিসাবে ধরে নিবো, এবং আকাশকে আমরা সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ হিসাবে ধরে নিবো।
ভালো কথা হলো এমন কথা যার শক্তি-যুক্তি-রেফারেন্স গ্রহণ করা হয় অতীতের ঘটনা ও স্কলারদের থেকে, এবং যে কথাটা ভবিষ্যতের জন্যে প্রয়োজনীয় ও সম্ভাবনাময়। অন্যদিকে খারাপ কথা হলো তা, যার ভিত্তি অতীতের ঘটনা ও স্কলারদের চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন, এবং যে কথাটা ভবিষ্যতের জন্যে সম্ভাবনাময় নয়।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা যখন কথা বলি বা ডিসকোর্স তৈরি করি, তখন একপক্ষ অতীত থেকে রেফারেন্স নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেন না। আবার অন্যদিকে একপক্ষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কথা বলেন, কিন্তু অতীত থেকে শক্তি গ্রহণ করেন না। অর্থাৎ, কেউ মাটির নিচের শিখড় ধরেই আছেন, আকাশের দিকে স্বাধীনভাবে উঠতে ও উড়তে চান না। আবার কেউ আকাশে উড়ার জন্যে মাটি থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলেছেন।
কিন্তু শক্তিশালী ন্যারেটিভ বা ডিসকোর্স তৈরি করার জন্যে মুসলিমদেরকে অতীত থেকে যেমন রেফারেন্স নিতে হবে, তেমনি ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করতে হবে। কোরআনের মতে, মুসলিমরা যদি শক্তিশালী হতে চায়, তাহলে তাদেরকে শক্তিশালী কথা বা ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে।
এ কথাটিকে আরেকটু সহজভাবে বলেছেন জালালউদ্দিন রুমি। তিনি বলেন, মুসলিমদের দুটি পা হলো কম্পাসের মতো। এর একটি পা ইসলামের উপরে দৃঢ় থাকে, অন্য পা সারাবিশ্বে ঘুরে বেড়ায়। অন্যভাবে বললেন, মুসলিমদের শক্তিশালী বয়ান তখনি তৈরি করতে পারবে, যখন একদিকে তাঁরা তাঁদের ঐতিহ্য থেকে শক্তি আরোহণ করবে, অন্যদিকে সে শক্তি দিয়ে উন্মুক্তভাবে সারা বিশ্ব চষে বেড়াবে।
5 April 7:50pm