বাংলাদেশ কি একটি ইসলামী রাষ্ট্র?
এ প্রশ্নের উত্তরে উস্তাদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সহ অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশ একটি ইসলামী রাষ্ট্র। কিন্তু অনেকেই সেটা মানতে চান না। তারা বলেন, বাংলাদেশে তো জিনার শাস্তি হয় না, সুদের কারবার চলে, তাহলে কীভাবে এটি একটি ইসলামি রাষ্ট্র হয়?
যারা বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র বলতে চান না, তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি সেকুলার রাষ্ট্র। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, সেকুলার আদর্শ ও মূলনীতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে বিচার করলে বাংলাদেশ কি পূর্ণ সেকুলার রাষ্ট্র? বাংলাদেশের সেকুলারগণ কি বাংলাদেশ নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট? তারা কি মনে করেন যে, বাংলাদেশকে আর সেকুলার করার প্রয়োজন নেই, যা আছে তাই যথেষ্ট? অবশ্যই না। সেকুলারগণ মনে করেন, বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট সেকুলার হতে পারেনি, বাংলাদেশের আরো সেকুলার হতে হবে।
একইভাবে বাংলাদেশের নামের আগে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ শব্দটি থাকলেও কেউ কি মনে করে যে, বাংলাদেশে পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম রয়েছে এখন? অবশ্যই উত্তর হলো না।
এর থেকে আমরা কয়েকটি জিনিস বুঝি। বাংলাদেশের নামের আগে ইসলাম থাকলেও এ দেশে ন্যায়বিচার কায়েম হয়ে যাবে, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ, বাংলাদেশ নামের আগে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ থাকা সত্ত্বেও যদি এখানে গণতন্ত্র কায়েম করা না যায়, এখানে ইসলাম নামে থাকলেও ন্যায়বিচার কায়েম করা যাবে না।
এখন প্রশ্ন হলো, পূর্ণ সেকুলারিজম না থাকা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশকে সেকুলার বলছি, পূর্ণ গণতন্ত্র না থাকা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ বলছি। তাহলে পূর্ণ ইসলাম না থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র বলতে পারবো না?
আসল কথা হলো, কোনো একটি দেশের নামের সাথে কি আছে বা না আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশটা কতটা ইসলামী মূল্যবোধ ধারণ করে আছে, এবং আর কী কী মূল্যবোধ ধারণ করা প্রয়োজন, সে হিসাবটা সবচেয়ে জরুরী।
একজন মানুষ জন্মের পরেই যেমন বালেগ হয়ে যায় না, তেমনি একটি রাষ্ট্র কোনো মতাদর্শের নামে প্রতিষ্ঠা হলেই সে মতাদর্শ বাস্তবায়ন হয়ে যায় না। সেটা ইসলাম হোক, সেকুলারিজম হোক বা গণতন্ত্র হোক।
একটি রাষ্ট্র কম সেকুলার হলেও সেটাকে যেমন আমরা সেকুলার রাষ্ট্র বলি, তেমনি একটি রাষ্ট্র কম ইসলামি হলেও সেটাকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা যায়। মতাদর্শিক রাষ্ট্র কেবল নাম প্রয়োগের মধ্য দিয়ে হয় না, সেটাকে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করতে হয়। যে দেশগুলোকে আমরা গণতন্ত্রের মডেল হিসাবে চিন্তা করি, সে দেশের মানুষও মনে করেন, তাদের দেশ যথেষ্ট গণতান্ত্রিক নয়। সেকুলারিজমের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশগুলোর কোনো দেশ-ই পূর্ণভাবে সেকুলার বা পূর্ণভাবে অ-সেকুলার নয়।একইভাবে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো পূর্ণভাবে ইসলামী বা পূর্ণভাবে অ-ইসলামী বলা যায় না।