মানুষ বুঝার রাজনীতি
“মানুষ” শব্দটি গঠিত হয়েছে দুটি অংশ থেকে—’মন’ ও ‘উষ’।
‘মন’ হলো চেতনা, অনুভূতি, চিন্তা এবং বুদ্ধিমত্তার প্রতীক, আর ‘উষ’ শব্দের অর্থ ‘উজ্জ্বল’ বা ‘আলো’।
সুতরাং, মানুষ অর্থ আলোকিত চেতনা। যে চেতনা স্রষ্টার আলোয় উদ্ভাসিত হয়, তাকে-ই মানুষ বলা হয়।
মানুষ জন্মের পর থেকেই স্রষ্টার সান্নিধ্য কামনা করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, মানুষের মাথা আকাশের কাছাকাছি যেতে থাকে—যেন স্রষ্টার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।
যতই বয়স বাড়ে, ততই মানুষের মন ও মস্তিষ্ক আকাশের দিকে, স্রষ্টার কাছাকাছি চলে যায়। এক অদৃশ্য আকর্ষণে মানুষ স্রষ্টার সান্নিধ্য পেতে চায়।
মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করার উপায়
মানুষ শব্দের আরবি হলো “إِنْسَان” (ইনসান)। ভাষাবিদদের মতে দুটি শব্দমূল থেকে ইনসান শব্দটি এসেছে।
১. নাসিয়া (نَسِيَ) থেকে ইনসান শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হলো “ভুলে যাওয়া”। মানুষ ভুলে যাওয়া প্রাণী।
মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই বারবার তাদের অতীতের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। ইতিহাস মানুষকে শিক্ষা দেয়, কোন ভুল থেকে কীভাবে শিক্ষা নেওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়ানো যায়। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও কৌশল গড়ে তুলতে হবে, যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নতির পথ সুগম হয়।
২. আনাসা (أنَسَ ) থেকে ইনসান শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হলো “সামাজিক হওয়া”, “ঘনিষ্ঠ হওয়া” ও “সম্পর্ক নির্মান করা”। মানুষ একা থাকতে পারে না, একে অপরের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষ চলে।
মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করতে হলে দুইটা সম্পর্ক জানতে হবে।
এক. মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক কীসের ভিত্তিতে হয়?
মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভাষা ও ধর্মের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা মানুষের আবেগকে স্পর্শ করে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করে, এবং ধর্ম নৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তি প্রদান করে, যা সমাজের ভিত্তি শক্তিশালী করে।মানুষের সাথে রাজনীতি করতে হলে, ভাষা ও ধর্মকে বিরোধের হাতিয়ার না বানিয়ে ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
দুই. মানুষের সাথে পৃথিবীর সম্পর্ক কী?
মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি তথা খলিফা হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ মানবজাতির উপর পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিকে রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন (সূরা হাজ্জ ২২:৬৫)। রাজনীতি করতে হলে শুধু ব্যক্তি বা সমাজকে নয়, বরং সমগ্র পৃথিবী ও এর সমস্ত সম্পদকে রক্ষা ও সুরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।