ধর্ম ও নিউটনের ১২টি সূত্র
বিজ্ঞানের ‘অ, আ’ শুরু হয় স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্রগুলো মুখস্থ করার মাধ্যমে। প্রথম প্রথম নিউটনের সূত্রগুলো যখন পড়তাম, তখন গতির তৃতীয় সূত্রটি আমার খুব কাজে লাগতো। ক্লাসে বন্ধুরা কেউ আমাকে মারলে, আমি যদি কিছু করতে না পারতাম, তখন তাকে নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি শুনিয়ে দিতাম – “প্রত্যেক ক্রিয়ার-ই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”।
সর্বজনীন মহাকর্ষ ও গতির তিনটি সূত্র আবিষ্কার করার কারণে নিউটনকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী মনে করা হয়। তাই, আমি একসময় ভাবতাম, ‘আহ! আমি যদি নিউটনের মত একজন বড় বিজ্ঞানী হতে পারতাম’। কিন্তু, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চিন্তাগুলো সব পরিবর্তন হয়ে যায়। এখন ভাবি, ‘আহ! আমি যদি নিউটনের মত এত বড় একজন সূফী, দরবেশ ও ধর্মীয় স্কলার হতে পারতাম’।
আপনি হয়তো আমাকে প্রশ্ন করবেন, নিউটন আবার ধর্মীয় স্কলার হলেন কবে? খুবই ভালো প্রশ্ন। আসলে, নিউটন সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। কারণ, আমাদের পাঠ্য বইয়ে নিউটন সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা-ই দেয়া হয় না। পাঠ্য বইয়ের কথা বাদ দিন, বাংলা ভাষায় আজ পর্যন্ত নিউটনের সামগ্রিক জীবন নিয়ে কোনো কিছু লেখা হয়নি। বাঙালিদের মাঝে এত এত বিজ্ঞানমনস্ক লোক, অথচ নিউটনের মত এমন একজন মানুষকে নিয়ে বাংলা ভাষায় বিস্তারিত কোনো লেখা-ই নেই। দুর্ভাগ্য এ জাতির!
বাঙালিরা নিউটনকে চিনে কেবল একজন বিজ্ঞানী হিসাবে। অথচ তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো – তিনি একজন ধর্মীয় স্কলার ও দরবেশ। নিউটনের মত এত বড় একজন ধর্মীয় স্কলার বর্তমান যুগেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, ক্ষমতা, সৃষ্টি ও ধর্ম নিয়ে নিউটন বিস্তর গবেষণা করেছিলেন। এমনকি, বিজ্ঞানের চেয়েও তাঁর জীবনে বেশি সময় দিয়েছেন তিনি আল্লাহর ইবাদতে ও ধর্ম গবেষণায়। বিশ্বাস না হলে একটি উদাহরণ দিচ্ছি।
গণিত ও বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করার জন্যে নিউটন সারাজীবনে মাত্র ১ মিলিয়ন শব্দ লিখেছিলেন, অথচ আল্লাহর অস্তিত্ব ও ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা হাজির করার জন্যে নিউটনকে লিখতে হয়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন শব্দ। যেমন, পদার্থের গতির অবস্থা বুঝানোর জন্যে নিউটন দিয়েছিলেন ৩ টি সূত্র, কিন্তু ঈসা (আ)-কে সঠিকভাবে বুঝানোর জন্যে তাঁকে দিতে হয়েছিল ১২ টি সূত্র। ঈসা (আ) যে স্বয়ং আল্লাহ নন, বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল – এটা খ্রিস্টানদেরকে বুঝানোর জন্যে নিউটন খ্রিস্টান পাদ্রী ও পোপদের বিরুদ্ধে নিয়মিত সংগ্রাম করেছিলেন। তাই তাঁকে ধর্ম নিয়ে হাজার-হাজার পৃষ্ঠা লিখতে হয়েছিল। খ্রিষ্টান ধর্ম যখন সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেল, যখন ইঞ্জিলকে পরিবর্তন করে ফেলা হলো, যখন ঈসা (আ)-কে আল্লাহ হিসাবে উপাসনা না করলে মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হত, ঠিক সে-সময় নিউটন খ্রিস্টান ধর্মের আদি, বিশুদ্ধ ও পবিত্র রূপটি ফিরিয়ে আনার জন্যে দিনরাত ধর্মীয় গ্রন্থগুলো নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। অথচ দুঃখের বিষয়, পাঠ্য বইয়ে এবং বাঙালি বিজ্ঞানমনস্কদের লেখায় আমি এসব কোনো কিছুই পাইনি।
যাই হোক, উপরে নিউটনের যে ১২টি সূত্রের কথা উল্লেখ করেছিলাম, আপাতত সেগুলোর অনুবাদ এখানে তুলে দিচ্ছি। সূত্রগুলোর মূল ইংরেজি ভার্সন দেখতে চাইলে এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
আল্লাহর অস্তিত্ব ও ঈসা (আ) সম্পর্কে নিউটনের ১২টি সূত্র।
সূত্র – ১। আল্লাহ এক, চিরঞ্জীব প্রতিপালক, সর্বত্র বিরাজমান, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, এবং আসমান ও জমিনের স্রষ্টা। আল্লাহ ও মানবের মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টিকারী মানুষ হলেন- নবী ঈসা (আ)।
সূত্র – ২। আল্লাহ তায়ালা হলেন অদৃশ্য, কোনো দৃষ্টি তাকে দেখে না, অথবা দেখতে পারে না। তিনি ব্যতীত অন্য যা কিছু আছে তা দৃশ্যমান হয়।
সূত্র – ৩। আল্লাহ নিজেই নিজের মধ্যে জীবন্ত এবং তাঁর নিজ হতে বান্দাদের জীবন দান করেন।
সূত্র – ৪। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। তাঁর অন্তরে মূলত সকল জ্ঞান রয়েছে। তিনি ঈসা নবীর কাছে ভবিষ্যৎ বিষয়ের জ্ঞান প্রেরণ করেন। নবী-রাসূলগণ ব্যতীত আসমানে বা জমিনে অথবা জমিনের নিচে এমন কেউ নেই যে সরাসরি আল্লাহ থেকে ভবিষ্যৎ বিষয়ের জ্ঞান লাভ করতে পারে। আর, এ কারণেই ঈসা (আ)- এর সাক্ষ্য নবুয়তের স্পৃহা এবং তিনি হলেন আল্লাহর বাণী বা রূহুল্লাহ বা আল্লাহর নবী।
সূত্র – ৫। আল্লাহ অবিচল। কোনো স্থান-ই তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্য বা উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে উঠতে সক্ষম নয়। তাঁর উপস্থিতি-ই হলো প্রকৃতির অনন্ত অপরিহার্যতা। তিনি ব্যতীত অন্য সকল সত্ত্বা এক স্থান থেকে অন্যত্র চলাচল করে।
সূত্র – ৬। সকল ইবাদাত, যেমন সালাত, জিকির, বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, সব কিছু ঈসা (আ) আগমনের পূর্বেও কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল, এখনো তেমনি কেবল আল্লাহর জন্যেই। ঈসা (আ) তাঁর প্রভুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত ইবাদাত হ্রাস করার জন্যে আগমন করেননি।
সূত্র – ৭। আল্লাহর উদ্দেশ্যে নবীর নাম দিয়ে দোয়া করলে তা খুবই ফলপ্রসূ হয়।
সূত্র – ৮। আমাদের সৃষ্টি, আমাদের প্রদত্ত খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র এবং এই জীবনের অন্যান্য কল্যাণ প্রদানের জন্য আমরা কেবল আল্লাহ তায়ালার প্রতিই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। কারণ, নবীর নামের সাহায্যে আমরা যা কিছুই সরাসরি আল্লাহর কাছে চাই আল্লাহ তা আমাদের দান করেন।
সূত্র – ৯। আমাদের জন্য সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে ঈসা (আ)-এর নিকট আমাদের প্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি আল্লাহর কাছে সঠিকভাবে প্রার্থনা করি, তাহলে তিনিই আমাদের জন্যে সুপারিশ করবেন।
সূত্র – ১০। পরিত্রাণের জন্য নবীর নাম নিয়ে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো নিকট প্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই।
সূত্র – ১১। কোনো ফেরেশতা বা রাজা-বাদশাহকে আল্লাহর গুণবাচক উপাধিতে ভূষিত করলে তা প্রথম আদেশের বিরুদ্ধে যায় না। কিন্তু, কোনো ফেরেশতা বা রাজা-বাদশাহকে আল্লাহর মত ইবাদাত করলে, তা প্রথম আদেশের বিরুদ্ধে চলে যায়। প্রথম আদেশের অর্থ হলো- “তোমরা আমি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না”।
সূত্র – ১২। আমাদের নিকট আল্লাহ হলেন এক ও একক। তিনি আমাদের ও সকল বস্তুর প্রভু। তিনি নবী ঈসা (আ)-এরও প্রভু। এ কারণে, সর্বশক্তিমান প্রভু হিসাবে আমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই ইবাদাত করি।
উৎস: Isaac Newton, Keynes Ms. 8, King’s College, Cambridge, UK
এই ১২টি সূত্র মাধ্যমে নিউটন খ্রিস্টান ধর্মের বিশুদ্ধ রূপ, আল্লাহর অস্তিত্ব ও ঈসা (আ) সম্পর্কে খ্রিস্টানদেরকে একটি সত্য বার্তা প্রদান করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো নিউটনের এই ১২টি সূত্র একসাথে আপনি কোর’আনের মাত্র একটি আয়াতেই পেয়ে যাবেন। তাই, আপনাকে উপরোক্ত ১২টি সূত্র কষ্টকরে মুখস্থ করতে হবে না, বরং কোর’আনে সূরা নিসার ১৭১ নং আয়াতটি মুখস্থ করলেই সব সূত্র একসাথে মুখস্থ হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ انتَهُوا خَيْرًا لَّكُمْ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
“হে কিতাবিগণ! তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর সম্পর্কে সত্য ব্যতীত কোনো কথা বলো না।[সূত্র – ২, ৩]
নিশ্চয় মরিয়ম-তনয় ঈসা মসীহ হলেন আল্লাহর রসূল ও তাঁর বাণী। আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে মরিয়মের নিকট রূহ ও তাঁর বানী প্রেরণ করেন।[সূত্র – ৪]
অতএব, তোমরা আল্লাহ এবং তার রসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর।[সূত্র -১, ৯]
আর, তোমরা একথা বলো না যে, আল্লাহ হলেন তিনজন।[সূত্র -১১]যদি একথা পরিহার কর, তবে তোমাদের মঙ্গল হবে। [সূত্র -৭, ৮]
নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়া থেকে তিনি পবিত্র।[সূত্র – ৬, ১২]
আসমানে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তার।[সূত্র – ৫, ৪]
আর, অভিভাবক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূত্র – ৯, ১০]
[সূরা ৪/নিসা – ১৭১]
দেখুন, কোর’আনের সাথে কি অসাধারণভাবে নিউটনের সবগুলো সূত্র মিলে গেল। সুবহানাল্লাহ!
তো…, আপনার আশেপাশে অবিশ্বাসী কেউ থাকলে, তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন তো সে নিউটনের এ ১২টি সূত্রের কথা শুনেছে কিনা? আমি নিশ্চিত, এ সম্পর্কে সে কিছুই বলতে পারবে না। এটাই আমাদের বিজ্ঞানমনস্কতা!!!