কোর’আন কীভাবে মানুষকে ক্যাটাগরি করে?
আমরা যেভাবে মানুষকে ক্যাটাগরি করি, কোর’আনে কিন্তু মানুষকে সেভাবে ক্যাটাগরি করা হয় না।
আমরা মুসলিমদেরকে হাজারো ভাগে ভাগ করি। যেমন, শিয়া, সুন্নি, জামাতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, কওমী, আলীয়া, আহলে হাদীস, সালাফী, হানাফী, জেহাদী, দেওবন্দী, তাবলীগী, মডারেট, সূফী, পীরপন্থী, চরমনাই, হিজবুত তাওহীদ, আওয়ামী লীগ, ওলামা লীগ, বিএনপি, ইত্যাদি।
কিন্তু,
কোর’আন মানুষকে এভাবে ক্যাটাগরি করে না।
কোর’আনের হিসাব হলো, যিনি যতবেশি কোর’আন অধ্যয়ন করেন এবং তা অনুযায়ী জীবন যাপন করেন, তিনি ততবেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন। অর্থাৎ, আপনি যে দলেই থাকুন না কেনো, যতবেশি কোর’আনের নিকটবর্তী হবেন, ততবেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন। এবং যতবেশি কোর’আন থেকে দূরে সরে যাবেন, ততবেশি পথভ্রষ্ট হবেন।
বিষয়টি বোঝার জন্যে আমরা নিচের চিত্রটি দেখতে পারি।
১ নং বৃত্তের মধ্যে যারা আছে, তাঁরা কোর’আনের বেশি নিকটবর্তী; সুতরাং তাঁরা বেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর, যারা কোর’আন থেকে যত দূরবর্তী বৃত্তে অবস্থান করে, তারা ততবেশি ভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
ইবনে তাইমিয়া তাঁর মাজমু-আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন –
“হতে পারে কোন ব্যক্তি ভুল দলে থাকার পরও ভাল কাজ এবং ইখলাসের কারণে জান্নাতে অধিকতর উচ্চ আসনে দাখিল হতে পারে। আবার, কেউ সঠিক দলে থেকেও গুনাহ এর কাজে লিপ্ত থাকলে বা অন্তরে অহংকার বোধ থাকলে সে জাহান্নামে চলে যেতে পারে।”
অর্থাৎ, কেউ জামায়াতি বা সালাফী হলেই যেমন তিনি জান্নাতে চলে যাবেন না, তেমনি কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ হলেই তিনি জাহান্নামে চলে যাবেন না। আল্লাহ তায়ালা দেখবেন, আমাদের মাঝে কে কতবেশি কোর’আন অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করেছে।
সুতরাং, কে কোন দলে আছে সেটা বিষয় না, বিষয় হলো কে কতটা কোর’আনের সাথে আছে। সব দল থেকে বাচাই করে সৎ মানুষদেরকেই নিয়েই আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে একটি জান্নাতি দল গঠন করবেন। কেউ দুনিয়াতে বসেই নিজেকে জান্নাতি দলের সদস্য ভাববার কোনো উপাই নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন –
إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا
নিশ্চয়ই এই কোর’আন এমন একটি পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক দৃঢ়। এবং এটি সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। [সূরা ১৭/বনী ইসরাঈল – ৯]
এ আয়াত অনুযায়ী আমরা বলতে পারি, কোর’আন দ্বারা যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে পারেন, তিনি যে দলেই থাকুন না কেনো, সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিয়মিত কোর’আন অধ্যয়ন করার এবং তা অনুযায়ী চরিত্র গঠন করার তৌফিক দান করুক।