“ইসলামী রাষ্ট্রের” বিরোধীতায় মাওলানা মওদুদী
বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ টি ইসলামী দল রয়েছে। সব দলের নিজস্ব “ইসলামী রাষ্ট্র” ধারনা রয়েছে। এক দলের “ইসলামী রাষ্ট্র” ধারণা অন্য দল গ্রহণ করেন না। যেমন, জামায়াতে ইসলামীর “ইসলামী রাষ্ট্র” ধারণাটি শাসনতন্ত্র আন্দোলন গ্রহণ করেন না। আবার শাসনতন্ত্র আন্দোলনের “ইসলামী রাষ্ট্র” ধারণাটি খেলাফত মজলিস গ্রহণ করেন না।
কেবল বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান গঠন হবার সময়েও এ পরিস্থিতি ছিলো। মুসলিম লীগের “ইসলামী রাষ্ট্র” ধারণাটাকে জামায়াতে ইসলামী সমালোচনা করতো।
১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার পথ’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় মওলানা মওদুদী মুসলিম লীগের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্যের কথা প্রকাশ করেন। তখন তিনি মুসলিম লীগের “ইসলামী রাষ্ট্র” এর বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেন:
“কোনো প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই যারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে, তাদের মন মস্তিষ্কে যে ইসলামী রাষ্ট্রের কোনো ধারণাই বর্তমান নেই, তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ থাকতে পারেনা।”
মাওলানা মওদুদী আরো বলেন:
“আমি দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্রের নাম শিশুদের খেলনায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন পন্থা ও শ্রেণীর লোকেরা ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা ও তা প্রতিষ্ঠার খেয়াল ব্যক্ত করছেন। কিন্তু এই লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্যে এমন সব অদ্ভুত পথ ও পন্থার প্রস্তাব তারা করছেন, যেসব পথ ও পন্থায় এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সেরকমই অসম্ভব, মটর গাড়ীতে করে আমেরিকায় পৌঁছা যেরকমই অসম্ভব। এরকম অসার কল্পনার (Loose thinking) কারণ হলো, কোন না কোন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণে তাদের অন্তরে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খায়েশ পয়দা হয়ে গেছে, যার নাম হবে “ইসলামী রাষ্ট্র”। কিন্তু এই রাষ্ট্রটির ধরণ ও বৈশিষ্ট্য কি হবে, নিরেট বৈজ্ঞানিক (Scientific) পন্থায় তারা তা জানার চেষ্টা করেনি।”
(- মাওলানা মওদুদী, ইসলামী বিপ্লবের পথ, পৃ: ৭)
মাওলানা আরো বলেন:
“যে “জাতীয় রাষ্ট্রের” উপর ইসলামের উপর লেবেল প্রদর্শন করা হবে, ইসলামী বিপ্লবের পথ রোধ করার ক্ষেত্রে তার দুঃসাহস হবে অমুসলিমদের চাইতেও অধিক। যেসব কাজে অমুসলিম সরকার কারাদণ্ডের শাস্তি প্রদান করে, সেইসব ব্যাপারে এ ধরণের “মুসলিম জাতীয়তাবাদী সরকার” ফাঁসি ও নির্বাসনের শাস্তি প্রদান করবে।”
উপরের দুটি উক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে মাওলানা মওদুদী মুসলিম লীগের “ইসলামী রাষ্ট্র”-এর বিরোধিতা করেছিলেন।
ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধিতা করলেই কেউ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় না। ইসলামী রাষ্ট্রের নানা পদ্ধতি ও নানা ধরণ রয়েছে।