বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র কি চিন্তা শেখাতে পারে?

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অনেক বই আমি পড়েছি। তাদের বইগুলো মানুষকে অনেক হাসাতে পারে, কখনো কখনো কাঁদাতেও পারে; কিন্তু চিন্তা করা শিখাতে পারে না। যে বইগুলো চিন্তা করতে শেখাতে পারে না, সে বইগুলো মানুষকে আলোকিত করতে পারে না। ইবনে খালদুনের ‘মুকাদ্দিমা’, কিংবা কার্ল মার্ক্সের ‘পুঁজি’র মত বইগুলো যেমন মানুষের চিন্তাকে নাড়া দিতে পারে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইগুলো সেভাবে মানুষের চিন্তাকে নাড়া দিতে পারে না।

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তার ছাত্র আহমদ ছফাকে বলেছিলেন, কিছু বই লাইন বাই লাইন পড়তে হয়, আর কিছু বইয়ের কেবল শিরোনাম দেখলেই হয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইগুলো লাইন বাই লাইন পড়ার বই নয়, সেগুলো হলো শিরোনাম দেখেই রেখে দেয়ার বই। দুই ঘণ্টার বাংলা সিনেমা যেমন বিশ মিনিটে শেষ করা যায়, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইগুলো তেমন কয়েক পৃষ্ঠা পরপর দু’এক লাইন পড়লেই হয়।

জ্ঞান অর্জনের জন্যে বই পড়ার চেয়ে চিন্তা করা বেশি প্রয়োজন। একবার ইবনে আব্বাস (রা)-কে প্রশ্ন করা হলো, আপনি এতো জ্ঞান কিভাবে অর্জন করলেন? তিনি বলেন, প্রশ্ন করতে পারা একটি মুখ ও চিন্তা করতে পারা একটি হৃদয়ের মাধ্যমে।

জ্ঞান অর্জনের উপায় হলো –

১) নিজের মধ্যে জাগ্রত হওয়া প্রশ্নগুলোকে ভালোভাবে গুরুত্ব দেয়া।
২) নিজে নিজে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা।
৩) লজ্জা ও অহংকার দূর করে অভিজ্ঞদের কাছে প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করা।
৪) এবং প্রয়োজনে বইয়ের সাহায্য নেয়া।

বই চিন্তা করার প্রধান হাতিয়ার নয়। আধুনিক সময়ে বই ছাড়াও বিভিন্নভাবে চিন্তা চর্চা করা যায়। সুতরাং, যারা বই পড়ে না, তারা আলোকিত হতে পারে না, এমন ধারণা ভুল। জালাল উদ্দিন রুমি বা তুরস্কের ইউনুস এমরের মতো সূফীরা জীবনের শুরুতে প্রচুর বই পড়তেন। তারা মনে করতেন, কেবল বই পড়লেই বুঝি আলোকিত মানুষ হওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের উস্তাদগণ তাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, পৃথিবীটাই হলো আসল বই। কেবল কাগজের বই পড়ে পৃথিবীকে ভালোভাবে বুঝা যায় না, এবং আলোকিত মানুষও হওয়া যায় না। আলোকিত মানুষ হতে হলে আসল বই অর্থাৎ নিজেকে ও পৃথিবীকে পড়তে হবে।

বিশ্বসাহিত্যের বইগুলো মানুষকে চিন্তা দিতে পারে না, কিন্তু বই পড়ার অহংকার দিতে পারে। তাদের বইগুলো নাটক-সিনেমার মতো মানুষকে বিনোদন দিতে পারলেও, আলোকিত করতে পারে না।

আরো পোস্ট