ধর্মীয় বিষয়ে মতপার্থক্য ও এ থেকে মুক্তির উপায়

ধর্মীয় বিষয়ে এক মুসলিমের সাথে অন্য মুসলিমের মতপার্থক্য থাকাটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এটা যে কেবল আমাদের যুগে হচ্ছে, তা নয়। সাহাবীরা একে অপরের সাথে মতপার্থক্য করেছেন, এমন অসংখ্য উদাহরণ হাদিসের বইগুলোতে রয়েছে।

যেমন, ফাতিমা বিনতে কাইসের (রা) সাথে উমারের (রা) মতপার্থক্য

মুসলিমদের তালাক সম্পর্কিত সকল মাসয়ালায় ‘ফাতিমা বিনতে কাইসের’ উদাহরণ দেয়া হয়। তিনি বেশ কয়েকবার বিয়ে করেছেন, এবং বেশ কয়েকবার তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন –

طَلَّقَنِي زَوْجِي ثَلَاثًا، فَلَمْ يَجْعَلْ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُكْنَى وَلَا نَفَقَةً
[الآثار لأبي يوسف ص: 132]

“আমাকে আমার জামাই তিনবার তালাক দিয়েছে। তালাকের পরে জামাইয়ের ঘরে থাকা বা চলে যাওয়াটাকে আমার জন্যে বাধ্যতামূলক করেননি রাসূল।”

অন্য হাদিসে ফাতিমা বিনতে কাইস বলেছেন, তার জামাই তাঁকে তালাক দেয়ার পরে তিনি তার ভাইয়ের বাসায় চলে যান।

এ হাদিস অনুযায়ী, কোনো নারীকে তালাক দেয়ার পরে সে নারী ৩ মাস জামাইয়ের ঘরে অবস্থান করার দরকার নেই; নিজের ভাই বা বাবার বাসায় চলে যেতে পারবেন।

কিন্তু হাদিসটা যখন উমার (রা) শুনলেন, তখন তিনি হাদিসটা অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন –

لَا نَأْخُذُ بِقَوْلِ امْرَأَةٍ لَا نَدْرِي صَدَقَتْ أَمْ كَذَبَتْ، وَنَدَعُ كِتَابَ اللَّهِ

“মহিলার (ফাতিমা বিনতে কাইসের) কথা আমরা গ্রহণ করবো না। সে সত্য বলেছে না মিথ্যা বলেছে, আমরা জানি না। আমরা আল্লাহর কিতাবকে বাদ দিতে পারবো না।” সূরা তালাকের প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন, “হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালন কর্তা আল্লাহকে ভয় করো। নারীদেরকে তাদের গৃহ থেকে বের করে দিয়ো না। তারাও যেন বের না হয়।”

উপরোক্ত হাদিসে ফাতিমা বিনতে কাইস (রা)-এর সাথে উমার (রা) মতপার্থক্য করেছেন। কিন্তু দুই জনেই সম্মানিত সাহাবী। একজন ভুল আর অন্য জন সঠিক তা আমরা বলতে পারি না। আমরা বলতে পারি, দুইজনেই ঠিক ছিলেন।

ধর্মীয় বিষয়ে কোনো একটি মতপার্থক্যের কারণে, একজনকে সঠিক অন্যজনকে ভুল বলা হলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ থেকে মুক্তি মিলে যদি আমরা মতপার্থক্যকে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করি।

28March at 18:19 pm2020

আরো পোস্ট