করোনা ভাইরাস কি কেয়ামতের আলামত?

করোনাভাইরাসকে অনেকে কেয়ামতের আলামত বলছেন। এবং বলছেন যে, আর কয়েক বছরের মাঝে ইমাম মাহদী চলে আসবেন।

যদি করোনাভাইরাস কেয়ামতের আলামত হয়, তাহলে তার চেয়ে হাজার-লক্ষ গুণে বড় কেয়ামতের আলামত হলো নূহ (আ)-এর প্লাবন। তখন পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ-ই মারা গিয়েছিলো। কিন্তু আমরা দেখেছি, নুহ (আ)-এর প্লাবনের মত এত বড় আলামতের পরেও এখনো পৃথিবী টিকে আছে।

আসলে কেয়ামতে জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। এমনকি আল্লাহর রাসূল (স)-ও জানতেন না কখন কেয়ামত হবে। জিবরাঈল (আ) যখন রসূলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন –

يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ ‏”‏ مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ

“ইয়া রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিয়ামত কখন হবে? রাসূল বললেন, “এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি অধিক অবহিত নন।” 
(সহীহ মুসলিম, ইফা, হাদিস – ৫)

রাসূল (স) নিজে কেয়ামতের কথা না জানলেও আমাদের অনেক হুজুর একেবারে ঘণ্টা-সেকেন্ড সহ বর্ণনা করে বলে দিতে পারেন, ঠিক কখন কেয়ামত হবে। অথচ আল্লাহ নিজেই তাঁর নবীকে কেয়ামতের জ্ঞান দেননি। আল্লাহ বলেন –

يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

“(হে নবী) তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? আপনি বলে দিন, কেয়ামতের খবর তো একমাত্র আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। কেবল তিনিই তা নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করবেন। আসমান ও জমিনের জন্য সেটি অতি কঠিন একটি বিষয়। যখন কেয়ামত তোমাদের উপর আসবে, তখন তা অজান্তেই এসে যাবে। তারা আপনাকে এ কারণে জিজ্ঞাস করে যে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। আপনি বলে দিন, কেয়ামতের সংবাদ একমাত্র করে আল্লাহর কাছেই রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ-ই তা উপলব্ধি করে না।” [সূরা ৭/আ’রাফ – ১৮৭]

এ আয়াতটি থেকে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট।

১। সাধারণ মানুষ কেয়ামত সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী।
২। কিন্তু, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ কেয়ামত সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
৩। রাসূল (স) নিজেও কেয়ামত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, কিন্তু মানুষ মনে করতো, রাসূল (স) কিয়ামত সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন।
৪। কিয়ামত কখনো সবাইকে জানান দিয়ে আসবে না। কেয়ামত আসবে হঠাৎ করে, আগে থেকে কেউই তা বলতে পারবে না।

পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতিদিন দু’এক জন মানুষ নিজেকে মেহদি অথবা ঈসা (আ) দাবী করে বের হয়ে আসেন। কয়েকদিন পরে আবার মারাও যান। কিন্তু, তাঁদের দাবী অনুযায়ী কেয়ামত আর হয় না। এর কারণ হচ্ছে, কিয়ামতের জ্ঞান আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নেই। যারা করোনাভাইরাসকে কেয়ামতের আলামত হিসাবে ধরে নিয়ে কয়েকদিন পর কেয়ামত হয়ে যাবে বলে মানুষকে বলে বেড়াচ্ছেন, তারা আসলে মানুষকে হতাশ করছেন।

23 March 10:30pm2020

আরো পোস্ট