ইস্তানবুলে সেক্যুলারদের জয়ের কারণ কি? এবং এতে ইসলামপন্থীদের কেমন ক্ষতি হতে পারে?
একজন জানতে চেয়েছেন, ইস্তানবুলে সেক্যুলারদের জয়ের কারণ কি? এবং এতে ইসলামপন্থীদের কেমন ক্ষতি হতে পারে?
আমার উত্তর ছিলো –
১) আগে তুরস্কে ছিলো বাংলাদেশের মতো, প্রধানমন্ত্রীই সব। এখন তুরস্ক হলো আমেরিকার মতো, রাষ্ট্রপতি-ই সব। আগে এরদোয়ানের চেয়ে একে পার্টির গুরুত্ব বেশি ছিলো, কিন্তু এখন রাষ্ট্রপতি-পদ্ধতির মাধ্যমে দলের চেয়ে এরদোয়ানের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। তাই এখন এরদোয়ানের দল হারলেও আগের চেয়ে সমস্যা কম।
২) বিদেশী প্রচার মাধ্যমগুলো অনেক দিন থেকে প্রচার করে আসছে যে, “এরদোয়ান হলো স্বৈরাচার। এরদোয়ান ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে আছে একমাত্র স্বৈরাচার হবার কারণে। তুরস্কে কোনো গণতন্ত্র নেই।” এতোদিন যারা এসব বলে আসছিলো, তাদের মুখ দেখানোর এখন আর জায়গা নেই। ইস্তানবুলের নির্বাচনে পরপর ২ বার এরদোয়ানের দল হেরে যাওয়ায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তুরস্কের গণতন্ত্র অনেক শক্ত।
৩) নির্বাচনের আগে প্রায় দুই বছর ধরে এরদোয়ানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ভালো ছিলো না। ফলে ডলারের বিপরীতে তুরস্কের লিরার মান খুবই কমে যায়। দুই বছর আগে ১ ডলার = ৩ তার্কিশ লিরা ছিলো। কিন্তু গত দুই বছরে ১ ডলারের বিপরীতে তার্কিশ লিরা হয়েছে ৬ থেকে ৬.৫০ পর্যন্ত। অর্থাৎ, দুই বছর আগে যারা ১০০ ডলারের মালিক ছিলো, তারা গত দুই বছরে তাদের অর্ধেক সম্পদ হারিয়ে ফেলে ৫০ ডলারের মালিক হয়ে গেছে। এ কারণে এরদোয়ানের প্রতি ব্যবসায়ীদের প্রচুর ক্ষোভ ছিলো। ইস্তানবুল ও আনকারা যেহেতু ব্যবসায়ীদের কেন্দ্র, তাই এ দুই স্থানে এরদোয়ানের দল হেরে গেছে। এরদোয়ান অবশ্য এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনের পর আমেরিকার সাথে আবার সম্পর্ক ভালো করার এবং লিরার দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
৪) ইস্তানবুলের বর্তমান মেয়র জনাব ইমামওলু যদিও সেক্যুলার দল CHP থেকে নির্বাচিত হয়েছে, কিন্তু, ইমামওলুর সাথে সেক্যুলার দলের নেতাদের কথাবার্তায় কোনো মিল নেই। সেক্যুলার দলের নেতারা এখনো তাঁদের মতাদর্শিক কথাবার্তা বলেন, কিন্তু ইমামওলু তাঁর নির্বাচনী কোনো বক্তব্যে কখনোই সেক্যুলার মতাদর্শ নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তিনি বরং তাঁর অসংখ্য বক্তব্যে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছেন।
৫) সেক্যুলার দলের প্রার্থী ইমামওলু ইস্তানবুল নির্বাচনের আগে রাসূল (স)-এর সাহাবী আইয়ুব আল আনসারীর কবর জেয়ারত করেন। আইয়ুব সুলতান মসজিদে গিয়ে সূরা ইয়াসিন তেলোয়াত করেন। এবং নির্বাচনে জয়ী হবার পরে হুজুর ডেকে দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম কার্যদিবস শুরু করেন। ইমামওলুর এমন কার্যক্রমের কারণে অসংখ্য ইসলামপন্থীরা সেক্যুলার ইমামওলুকে ভোট দেন। যেমন, তুরস্কের ইসলামপন্থী সাদাত পার্টি এবং ফেতুল্লাহ গুলেনের ইসলামপন্থীরা সেক্যুলার দলের ইমামওলুকে ভোট দেন। ফলে এই নির্বাচনটা ইসলামপন্থী বনাম সেক্যুলারপন্থী এমন হয়নি।
৬) ইমামওলু সব ক্ষেত্রে এরদোয়ানকে অনুসরণ করে। ইমামওলু চান, এরদোয়ানের মতো ইস্তানবুলের মেয়র থেকে রাষ্ট্রপতি হতে। এ জন্যে আপাতত মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কাজ ইমামওলু কখনোই করবেন না। কারণ, তিনি এখন দেশের সকল মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।
৭) আসলে ইস্তানবুলে সেক্যুলারগণ জয়ী হয় নাই, বরং এরদোয়ানের বিপক্ষের সকল ইসলামপন্থী, এরদোয়ানের দল থেকে বের হয়ে যাওয়া মানুষগুলো এবং সেক্যুলারগণ মিলে এই নির্বাচনে এরদোয়ানের দলকে হারিয়েছেন। এরদোয়ান যদি তাঁর দলকে সঠিকভাবে দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন, তাহলে তাঁর দল আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকবে।
2 July 2019 at 12:06 pm