বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির গুরুত্ব
বাংলাদেশে মোটা দাগে তিন ধারার রাজনীতি রয়েছে।
১) ভাষা ভিত্তিক বা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বা আওয়ামী রাজনীতি।
২) ধর্ম ভিত্তিক বা ইসলামী রাজনীতি বা জামায়াতে ইসলামী বা খেলাফতে আন্দোলনের রাজনীতি।
৩) দেশ ভিত্তিক বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বা বিএনপির রাজনীতি।
অর্থাৎ, কেউ ভাষা ভিত্তিক রাজনীতি করে, কেউ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করে এবং কেউ দেশ ভিত্তিক রাজনীতি করে।
যারা কোনো দেশের রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের চেয়ে ভাষা ও ধর্মের উপর ভিত্তি করে রাজনীতি করেন, তারা কয়েকটি বিষয় এড়িয়ে যান।
যেমন,
ভাষা ও ধর্ম হলো মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। মানুষ সহজাতভাবেই ভাষা শিখে এবং আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে। ভাষা শেখার জন্যে বা আল্লাহর সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার জন্যে মানুষের কোনো রাষ্ট্র প্রয়োজন হয় না। একজন মানুষ কোনো ধনী দেশে জন্ম গ্রহণ করুক, বা গরিব দেশে জন্ম গ্রহণ করুক, রাষ্ট্রহীন স্থানে জন্ম নিক, বা রাষ্ট্রের ভিতরে জন্ম নিক, যে অবস্থাতেই মানুষ জন্ম গ্রহণ করুক না কেন, মানুষ তার ভাষাটা শিখে ফেলে এবং ধর্ম ও আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে। রাষ্ট্র থাকলেও ভাষা ও ধর্মের চর্চা হয়, রাষ্ট্র না থাকলেও ভাষা ও ধর্ম চর্চা হয়। ফলে ভাষা ও ধর্ম কখনো রাষ্ট্র নির্ভর হয় না।
ভাষা ও ধর্মের এলাকা এবং রাষ্ট্রের এলাকা এক নয়। ভাষা ও ধর্মের সীমানা রাষ্ট্রের সীমানার বাইরেও বিস্তৃত থাকে। রাষ্ট্র গঠন হবার আগেও যেমন ভাষা ও ধর্মের অস্তিত্ব থাকে, তেমনি রাষ্ট্র বিলুপ্তির পরেও ভাষা ও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে। ফলে রাষ্ট্রের রাজনীতি আর ভাষা ও ধর্মের রাজনীতি এক নয়। রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্যে রাজনীতির যত প্রয়োজন হয়, ভাষা ও ধর্মকে রক্ষা করার জন্যে রাজনীতির তত দরকার হয় না। রাজনীতি ছাড়াই ভাষা ও ধর্ম উভয়ের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে।
কেউ যখন ভাষা ভিত্তিক বা ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে চায়, তখন নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হয়। যেমন যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করেন, তারা ভারতের কলকাতার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেন, কখনো কখনো বাংলাদেশের স্বার্থের চেয়ে কলকাতার স্বার্থকে বড় করে দেখেন। আবার যারা ধর্মীয় জাতীয়তা বাদের রাজনীতি করেন, তারা কখনো কখনো বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের স্বার্থকে বড় করে দেখেন। এতে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হুমকিতে পড়ে।
ভাষা ও ধর্ম চিরস্থায়ী। আর রাষ্ট্র হলো ক্ষণস্থায়ী। কোনো ধর্ম বা ভাষা যদি রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ধ্বংসের সাথে সাথে ভাষা ও ধর্ম হুমকির মুখে পড়ে। ফলে ভাষা ও ধর্মকে যেমন স্বাধীনভাবে অন্যের উপর নির্ভর না করে বেড়ে উঠতে হয়, তেমনি রাষ্ট্রকেও স্বাধীনভাবে অন্যের উপর ভর না করে বেড়ে উঠতে হয়। তখন রাষ্ট্রের ক্ষতি ধর্মের উপর গিয়ে পড়বে না।