মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও ইসলামের আদর্শ
রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানুষ মোটা দাগে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। একটি হলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শক্তি, অন্যটি হলো ইসলামি আদর্শের শক্তি। প্রশ্ন হলো, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে ইসলামের আদর্শের পার্থক্য আসলে কতটুকু?
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হিসাবে বলা হয়েছে যে,
“in order to ensure for the people of Bangladesh equality, human dignity and social justice, declare and constitute Bangladesh to be sovereign People’s Republic and thereby confirm the declaration of independence”
দেখুন: http://www.docstrangelove.com/uploads/1971/sbbk/documents/Proclamation%201971_M_Dalil_Vol_03_MMR.pdf
অর্থাৎ, “বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি।” (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, তৃতীয় খন্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৪)
অর্থাৎ, আমাদের স্বাধীনতার আদর্শ তিনটি।
১) equality বা সাম্য
২) human dignity বা মানবিক মর্যাদা
৩) social justice বা সামাজিক ন্যায়বিচার
এবার আসুন, ইসলামের আদর্শ কী? তা দেখি।
উস্তাদ জাসের আওদা বলেন,
establishing justice and equality is a fundamental objective and purpose for sending messengers and divine scriptures to mankind. It is one of the universal general Maqaṣid of the Sharia among other Maqaṣid mentioned by scholars in their different theories on the issue. (Jasser Auda, Sharia and Politics, pdf, p: 19)
অর্থাৎ, মানবজাতির নিকট যে আল্লাহর যে অহী বা বার্তা এসেছে তার মৌলিক লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সাম্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। বিভিন্ন তত্ত্বের মাধ্যমে স্কলারগণ ইসলামি শরিয়তের যে উদ্দেশ্যগুলো ঠিক করেছেন, তন্মধ্যে সাম্য ও ন্যায়বিচারকে সবাই উল্লেখ করেছেন।
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতার বা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে ইসলামি শরিয়তের মৌলিক আদর্শের সাথে কোনো রিরোধ নেই। বরং বলা চলে, ইসলামের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ একই। তাই যারাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী তারাই ইসলামি আদর্শের বিরোধী। অথবা, যারাই ইসলামি আদর্শের বিরোধী, তারাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধী।
এবার আসি পরের প্রশ্নে। বর্তমানে কারা সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধী?
উপরের তিনটি মূলনীতি নিয়ে যদি আপনি বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলকে মূল্যায়ন করেন, তাহলে বর্তমানের আওয়ামী লীগ হবে সবচেয়ে বড় স্বাধীনতাবিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী। কারণ, তাদের সময়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া কারো সরকারী চাকরি হয় না, তার মানে আওয়ামী লীগ সাম্য বিরোধী। কোভিড-১৯ এর সময়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা প্রাইভেট হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা পেয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ রাস্তায় মরেছে। তার মানে তাঁরা মানবিক মর্যাদা ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগের সময়ে খুন-ধর্ষণ হচ্ছে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি, এবং এর কোনো বিচার হচ্ছে না। ফলে মুক্তিযুদ্ধের যে তিনটি আদর্শ রয়েছে, তার সবচেয়ে বেশি বিরুদ্ধাচরণ করেছে আওয়ামীলীগ। এবং তারাই এ সময়ের সবচেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী শক্তি।
যেহেতু আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধী, এবং যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মানেই ইসলামের আদর্শ, তাই বলা চলে আওয়ামীলীগ বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইসলামি আদর্শবিরোধী শক্তি।