সিলেট ঘুরে এসে…
সিলেটে ছিলাম দু’দিন; ঘুরেছি-দেখেছি-শিখেছি অনেক কিছু, বিশেষত সিলেটের ভাষা শুনে বোঝার সক্ষমতা বেড়েছে অনেক দূর।প্রথম দিন গেলাম হাকালুকি হাওড়ে; Khandaker Raquib ভাইয়ার সাথে; তিনিই আস্তে আস্তে আমায় ভ্রমণ শেখাচ্ছেন। ঢাকা ছেড়ে আমরা যখন অন্য কোথাও -কোনো গ্রামে বা প্রান্তে- যাই, মানুষগুলোর আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হই। সরলতা-সক্ষমতা-স্বাভাবিকতা-স্বচ্ছতায় তারা শহরের চেয়ে এগিয়ে। শেখার আছে অনেক কিছু তাদের কাছে।এর আগে একটি কওমি মাদ্রাসার হালাকায় অংশ নিলাম; ‘মুসলমানদের পতনে কি হারাল বিশ্ব’ বইটির উপর আলোচনা হচ্ছিল সেখানে। আলোচনা শুনে বুঝলাম, শীঘ্রই কওমি মাদ্রাসাগুলো তাঁদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে; বাংলাদেশের হাল ধরবে। বিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হল আজকের ‘প্রথম আলো’ দেখে; মইনুল ইসলাম লিখেছেন : ‘কওমি মাদ্রাসা কি আইনের ঊর্ধ্বে?’; তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কওমি মাদ্রাসাগুলোকে কি স্বাধীনতা দেয়া উচিত?এ-সব ধর্ম-দেশ-বিদ্বেষী পত্রিকাগুলো যখন কারো পিছনে শত্রুতা শুরু করে, কারো স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, কাউকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়; তখন বুঝতে হবে, আগামীর বাংলাদেশ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তারা হীনমন্যতায় ভুগছে। ঐতিহাসিক ৫ই মে এর পর বাংলাদেশের হাল যে কওমি মাদ্রাসার হাতে চলে গিয়েছে, তা এখন মোটামুটি স্পষ্ট।পরের দিন বিকেলে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’ –এ গেলাম। সেখানে গিয়েও দেখলাম কওমি মাদ্রাসার উপস্থিতি। রেজিস্টার খাতায় দেখলাম, ৪৮ জন এসেছে বই পড়তে; অর্ধেকেরও বেশি টুপি-পাঞ্জাবি পরা মাদ্রাসার ছাত্র। দেখে ভালো লাগল। দেশের মগজহীন মানুষগুলো যখন বুদ্ধিভিত্তিক পশ্চাৎপদতার দুষ্ট চক্রে বন্দী, তখন কওমি মাদ্রাসার জ্ঞান অন্বেষণ চোখে পড়ার মত।শাহ জালালের মাজার দেখার একটা ইচ্ছা ছিল অনেক দিন থেকে; মানত করার উদ্দেশ্যে না, বাংলাদেশের রাজনীতি বুঝতে; কেনো এখান থেকে হাসিনা-খালেদা-এরশাদ’রা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন? যতদূর বুঝলাম : শাহ জালালের মত একজন মহান পুরুষকে নিয়ে ভণ্ডরা যেভাবে ব্যবসা করেন, প্রতারণা করেন; হাসিনা-খালেদা-এরশাদ’রাও তাই করেন জনগণ নিয়ে।মাজার হল প্রতারণা শেখার মহাবিদ্যালয়; রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা তার একনিষ্ঠ ছাত্র-ছাত্রী। এ-নিয়ে বিস্তারিত বলার ইচ্ছা ছিল; সময় ও ধৈর্য নেই।মাজারগুলোকে শত-বছর ধরে টিকিয়ে রাখার পিছনে নারীদের অবদান অনেক; এ-ক্ষেত্রে পুরুষ-অজ্ঞতা নারী-অজ্ঞতার কাছে হার মানে; যদিও সাধারণ মানুষের নির্বুদ্ধি-অশিক্ষা-অজ্ঞতাই মাজার ব্যবসায়ীদের প্রধান পূঁজি। কেবল মাজার-ব্যবসায়ীদের দায়ী করলেই এ-দায় শেষ হয় না, শিক্ষিত-আলেম-উলামারাও হয়তো এর জন্যে অনেকাংশে দায়ী। তাঁদের অবহেলা-অসচেতনতার কারণে মাজারগুলো ব্যবসা করে যাচ্ছে। শিক্ষিত-আলেম-উলামাদের কাছে সাধারণ মানুষ ইসলাম শেখার অনুমতি পান না বলেই ধর্ম চর্চা করতে তারা মাজারের দিকে যায়।শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন ফারহাত ভাই। ধন্যবাদ দিয়ে এ মানুষটাকে ছোট করব না। আমার দেখা ভালো মানুষগুলোর একজন। সিলেটে যাবার পর থেকে আসা পর্যন্ত প্রায় ৫০ ঘণ্টা আমরা তাঁর সাথেই ছিলাম; সর্বোত্তম মেহমানদারির নমুনা স্থাপন করেছেন তিনি।যা বলছিলাম- মাজারের মত বিশ্ববিদ্যালয়েও নষ্ট-ভ্রষ্ট-দুষ্টদের আখড়া আছে, জাফর ইকবাল নাকি তাদের গুরু। শুনেছি, যেখানে যত বড় আউলিয়া থাকেন, সেখানে শয়তানটাও তত বড় হয়। জাফর ইকবালের কর্মকাণ্ড না দেখলে এ-কথা বিশ্বাস হত না। শাহ জালালের পুণ্যভূমিতে তিনি মূর্তি নির্মাণ করিয়েছেন; যেমন মূসা (আ) এর পুণ্যভূমিতে সামিরী গো-বৎসের মূর্তি নির্মাণ করেছিল। সিলেটের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা মূর্তি নির্মাণের বিরোধিতা করেছে সবসময়। তারপরেও দেখেছি, একটি বিরাট মূর্তি-নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে; সুযোগ পেলেই তারা আবার শুরু করবে।লেখাটা একটু বড় হয়ে গেলো বোধয়। ওকে। একটি মসজিদের কথা বলেই শেষ করছি। মিম্বারের উপর লেখা ছিল : ‘জামায়াত নিকটবর্তী’। বিভিন্ন মসজিদে আগে লেখা থাকত- ‘লাল বাতি জ্বালানো অবস্থায় নামাজ পড়া হারাম’। কেউ কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর লেখা হত- ‘লাল বাতি জ্বালানো অবস্থায় সুন্নতের নিয়ত করবেন না’। এখন লেখা হচ্ছে –‘জামায়াত নিকটবর্তী’।ফারহাত ভাই সহ আরো যারা যারা আমাদের সঙ্গ দিয়েছেন, অনেক কিছু দেখিয়েছেন, খাইয়েছেন; তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।
May 28, 2015 at 11:24 PM ·