ক্ষুদে চিন্তা – ১
১
আমরা যখন বিয়ে করতে চাই, তখন এমন মেয়ে দেখি, যে আমার চেয়ে সুন্দর। এমন পরিবারের মেয়ে দেখি, যাদের মান-সম্মান আমাদের চেয়ে বেশি, যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। অর্থাৎ, মেয়ের সবকিছুই হতে হবে আমার চেয়ে ভালো।
বিয়ের পরে মেয়ে যখন দেখে, তাঁর জামাই সবদিক থেকে তাঁর অযোগ্য, এবং সে যখন তাঁর জামাইকে অবজ্ঞা শুরু করে, তখন আমরা বলি, আজকাল মেয়েরা তাঁদের স্বামীদেরকে দাম দেয় না। এখানে দোষ কার? আমাদের নাকি মেয়েদের?
২
ইমাম গাজালি তিনটি কারণে আল ফারাবি ও ইবনে সিনা-কে ভ্রান্ত বলেছেন। ১) পুনরুত্থান শারীরিকভাবে হবে না, বরং আধ্যাত্মিক ভাবে হবে। ২) আল্লাহ সামগ্রিক বিষয়ে জানেন, কিন্তু বিশেষায়িত বিষয়ে জানেন না। ৩) আসমান-জমিন কখনো নাই হয়ে যাবে না, ধ্বংস হয়ে অন্য আকার ধারণ করবে। উপরোক্ত তিনটি কারণে গাজালি উনাদেরকে ভ্রান্ত মনে করেন। কিন্তু একইভাবে আবার আকলের ব্যবহার, ক্রিটিকাল থিংকিং এবং দার্শনিক চিন্তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
৩
রাসূল (স) প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। বরং, প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পরেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
যারা চার বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেন, তাঁরা আগে রাসূলের সুন্নাত পালন করুন।
৪
মূর্খরা তর্ক করে অন্যকে হারিয়ে দেয়ার জন্য, আর জ্ঞানীরা তর্ক করে অন্যের মন জয় করার জন্যে।
৫
অনেকেই ইসলাম বুঝার আগে মাজহাবপন্থী থাকে, এরপর একটু একটু ইসলামের জ্ঞান হওয়ার পর সালাফি বা আহলে-হাদিসপন্থী হয়, তারপর ইসলামের আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করার পর আবার মাজহাবের পথ ধরে।
ইসলামের জ্ঞান অর্জন হবার আগে মাজহাবপন্থী হওয়া এবং ইসলামের জ্ঞান অর্জন হবার পরে মাজহাব মানার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
৬
তুরস্কের প্রতিটি মসজিদেই নারীদের নামাজ পড়ার জায়গা রয়েছে; এবং বড় মসজিদগুলোতে নারী ও পুরুষ উভয়ে একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে। পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ মসজিদে নারীদের জন্যে স্থান রয়েছে, যদিও তা তুরস্কের মতো এতো সচরাচর নয়। আরব দেশগুলোতে নারীরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারে, যদিও পুরুষ ও নারীদের স্থান ভিন্ন ভিন্ন। চীনে অনেক নারী মসজিদ রয়েছে, এবং সেসব মসজিদের ইমামও একজন নারী। মালয়েশিয়ার নারীরাও মসজিদে এসে নামাজ পড়ে। আফ্রিকার কিছু মসজিদে নারীদের জন্যে স্থান রয়েছে, আবার কিছু মসজিদে নেই।
কিন্তু, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হলো উপমহাদেশ অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নারীরা। কারণ, এসব দেশে হাতেগোনা দু’একটি মসজিদ ব্যতীত অন্য মসজিদগুলোতে নারীদের জন্যে কোনো স্থান নেই, এবং নারীদের জন্যে আলাদা কোনো মসজিদও নেই।
৭
খাদ্য ও পানি হলো শরীরের দাস। শরীর হলো পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দাস। পঞ্চ ইন্দ্রিয় হলো ব্রেইনের দাস। ব্রেইন হলো হৃদয়ের দাস। এবং হৃদয় হলো আল্লাহর হুকুমের দাস।
৮
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারী পদ্ধতি হলো জাতিসঙ্ঘ। কারণ, জাতিসঙ্ঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কোনো পরিবর্তন নেই।
৯
পৃথিবী পরিবর্তনের সকল চিন্তা ক্ষুধার্ত পেট থেকে বের হয়েছে।
১০
বাংলাদেশী ইসলামপন্থীদের কেউ কেউ বলেন, “বিপ্লবীদের হাতি পালতে নেই”। অর্থাৎ, ইসলামী আন্দোলন যারা করেন এবং যারা বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের বিয়ে করা উচিত না।
উপরোক্ত সূত্রের কারণেই বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলোতে বিয়ে করার পর বিদায় দিয়ে দেয়া হয়।
অথচ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুইজন বিপ্লবী, মুহাম্মদ (স) এবং কার্ল মার্কস উভয়ে বিয়ে করেছিলেন ২৫ বছর বয়সে। এবং তাঁদের উভয়ের বিপ্লবের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো তাঁদের জীবনসঙ্গিনীর।
১১
ইসলামের নামে কেউ আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেন, কেউ নিজের দিকে দাওয়াত দেন। আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিলে আল্লাহর অনুসারী বাড়ে, আর নিজের দিকে দাওয়াত দিলে নিজের অনুসারী বাড়ে।
১২
প্রতিটি মানুষের চেহারা যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি প্রতিটি মানুষের চিন্তাও ভিন্ন ভিন্ন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। অথচ, কেউ কেউ মনে করেন, সবার চিন্তা একই রকম হওয়া প্রয়োজন।
আমাদের চেহারার ভিন্নতা যেমন একতার জন্যে সমস্যা না, তেমনি আমাদের চিন্তার ভিন্নতাও একতার জন্যে সমস্যা না। সমস্যা হলো অহংকার। অহংকার-ই একতাকে নষ্ট করে, যেমন ইবলিশ অহংকারের কারণে ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
নিরহঙ্কারী চিন্তার বৈচিত্র্য কখনো একতাকে নষ্ট করে না, বরং ঐক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
১৩
রাগ হলো গাড়ির ড্রাইভিং চাকার মতো।
ড্রাইভিং চাকা ছাড়া যেমন কোনো গাড়ি হয় না, তেমনি রাগ ছাড়াও কোনো মানুষ হয় না। গাড়ির ড্রাইভিং চাকাকে যেমন নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তেমনি রাগকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ড্রাইভিং চাকাটা ছেড়ে দিলে বা উল্টাপাল্টা ঘুরালে যেমন গাড়ি এক্সিডেন্ট করে, তেমনি অতিরিক্ত রাগ করলে এবং যে কারো উপর ঝাড়লে মানুষের জীবনও এক্সিডেন্ট করে।
পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। সঠিক সময়ে, সঠিক ব্যক্তির উপর, সঠিক মাত্রায় রাগ করতে পারার যোগ্যতা অর্জন করাই সঠিক মানুষের কাজ।
১৪
সত্যকে মানুষ ভয় পায়, তাই, সত্যকে সবাই মেনে নিতে পারে না। যেমন, মৃত্যু একটি চিরসত্য বিধান। কিন্তু মানুষ মৃতুকে ভয় পায় এবং তা মেনে নিতে পারে না।
১৫
অনেকের ধারণা আমরা জীবনে একবার মারা যাই। এই ধারনা সঠিক নয়। জীবনের প্রতিদিন ঘুমের সময় আমরা মারা যাই, এবং প্রতিদিন আবার জেগে উঠি। প্রতি সেকেন্ডে আমাদের শরীরের কোষগুলো মারা যাচ্ছে, এবং নতুন কোষ জন্মাচ্ছে।
গতকাল পর্যন্ত আমরা যা যা করেছিলাম, তার ফল আজকে এখন ভোগ করছি। এবং আজকে-এখন আমরা যা যা করছি, তার ফল ভোগ করবো আগামী দিন এবং এর পরের দিনগুলোতে। এভাবেই চলতে থাকবে আখিরাত পর্যন্ত। দুনিয়াতে থাকাকালীন সময়ে আমরা যা যা করবো, দুনিয়ার পর সেই ফল ভোগ করবো। এটাই পৃথিবী এবং পৃথিবী পরবর্তী জীবনের নিয়ম।
১৬
পৃথিবী ও দুনিয়ার জীবন হলো একটি ডিমের মতো। ডিমকে উত্তাপ দেয়ার পর ডিম থেকে যেমন মোরগের বাচ্চা বের হয়, তেমনি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার পর পৃথিবী থেকেই আখিরাত প্রকাশিত হবে। ডিমের উপর থেকে দেখলে যেমন ডিমের ভিতরের মোরগের বাচ্চাটিকে বুঝা যায় না, তেমনি দুনিয়ায় থেকে দেখলে আখিরাতকে বুঝা যায় না।
– উস্তাদ সাইদ নুরসী।
১৭
শবে বরাত নিয়ে একদিকে বাড়াবাড়ি করেন পীরপন্থীরা, অন্যদিকে বাড়াবাড়ি করেন আধুনিক সালাফি ও আহলে হাদিসগন। এই দুই বাড়াবাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান নিয়েছেন উস্তাদ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি)।
যারা শবে বরাত নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান, তারা উস্তাদের ‘শবে বরাত’ বইটি পড়তে পারেন। অথবা, শবে বরাত সম্পর্কিত ইউটিউব থেকে তাঁর বক্তব্য শুনতে পারেন।
‘শবে বরাত’ বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন এখান থেকে –
http://assunnahtrust.com/wps/archives/1051
১৮
শবে বরাত – হাজার বছরের একটি বাঙালি সংস্কৃতি।
১৯
সমালোচনাকারীর চেয়ে সমালোচিত ব্যক্তি বেশি মর্যাদাবান।
২০
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কেট, বাবার বাড়ী, স্বামীর বাড়ী, আত্মীয় স্বজনের বাড়ী, সবস্থানে নারীরা যেতে পারে; কেবল একটি স্থানে নারীরা যাবার অনুমতি পায় না, তা হলো আল্লাহর ঘর মসজিদ।
২১
যাদের সৃজনশীল কাজ করার যোগ্যতা থাকে না, তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। যেমন, ৭১ টিভির সাংবাদিকগণ।
২২
বিশ্বের প্রথম মানচিত্র। অঙ্কন করেছেন মুসলিম ভূগোলবিদ ইবনে ফাদলুল্লাহ আল উমারি। খলিফা মামুন এর সময়ে (৮১৩-৮৩৩ খ্রি)।
২৩
মানুষ কখনোই আমার বিরোধিতা করে না। মানুষ বিরোধিতা করে আমার অহংকারের।
ধরুন, আমি বা আপনি, কেউ যদি আমাদের বিরোধিতা করেন, তখন আমরা ততটুকুই তাঁর উপর রেগে যাই, যতটুকু আমাদের অহংকার আছে।
অর্থাৎ, কারো বিরোধিতা যখন আমাদের অহংকারকে ভেঙ্গে দিতে চায়, তখন আমরা রেগে যাই, এবং মনে করি সে আমার বিরোধিতা করছে।
কিন্তু আপনার যদি অহংকার না থাকে, তাহলে অন্যের বিরোধিতা আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হবে। আর, আপনার যদি অহংকার থাকে, তাহলে অন্যের স্বাভাবিক কথাও আপনার কাছে বিরোধিতা মনে হবে।
২৪
আমরা শুনার চেয়েও বলতে বেশি পছন্দ করি। অথচ, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শুনার জন্যে কান দিয়েছেন দুটি, কিন্তু বলার জন্যে মুখ দিয়েছেন কেবল একটি। যদি শুনার চেয়ে বলার উপকারিতা বেশি হতো, তবে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কথা বলার জন্যে মুখ দিতেন দুটি, এবং কথা শুনার জন্যে কান দিতেন একটি।
২৫
মূর্খরা যা দেখে, তাই বিশ্বাস করে। আর, জ্ঞানীরা যা বিশ্বাস করে, তাই দেখে।
উদাহরণ,
মিডিয়া যা বিশ্বাস করে, তা দেখায় দর্শকদের।
আর দর্শকরা যা দেখে, তা বিশ্বাস করে।
২৬
ইউরোপের শিল্পী-সাহিত্যিকরা আগে মুসলিমদের বিরোধিতা করতেন একভাবে, এখন বিরোধিতা করেন অন্যভাবে।
২০০ বছর আগেও, ইউরোপের শিল্পীরা ছবি এঁকে এবং সাহিত্যিকরা গল্প-উপন্যাস লিখে বলতেন যে, মুসলিম খলিফাদের হেরেমে নারীরা অশালীন পোষাকে চলাফেরা করে, সুতরাং মুসলিমরা বর্বর। উদাহরণ স্বরূপ, গুগলে ‘Pool in a Harem’ লিখে সার্চ দিলেই বুঝবেন, আগে কার্টুন এঁকে কিভাবে মুসলিমদেরকে অপমান করা হতো। বলা হতো, হেরেমের নারীরা অশালীন ও বর্বর।
কিন্তু, এখন ইউরোপের শিল্পী-সাহিত্যিকরা বলেন যে, মুসলিম নারীরা হিজাব ও নিকাব পরে চলাফেরা করে, সুতরাং এরা বর্বর। ইউরোপের কাছে আসলে হেরেম, হিজাব, নিকাব এগুলো মূল বিষয় না, মূল বিষয় হলো ইসলামের বিরোধিতা।
২৭
কোর’আনের ব্যাখ্যাকারী সাহাবী, ইবনে মাসউদ (রা) বলেন –
إنا صعب علينا حفظ ألفاظ القرآن، وسهل علينا العمل به، وإن مَنْ بعدنا يسهل عليهم حفظ القرآن ويصعب عليهم العمل به
“আমাদের জন্যে কোর’আন মুখস্থ করাটা ছিলো কঠিন, কিন্তু কোর’আনের উপর আমল করাটা ছিলো সহজ। আর, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোর’আন মুখস্থ করাটা হবে সহজ, কিন্তু কোর’আনের উপর আমল করাটা হয়ে যাবে কঠিন।”
[সূত্র: হিদায়াতুল কোর’আন, মাকতাবায়ে শামেলা]
২৮
উমর (রা) অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ইসলামী শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করতেন। যেমন, দুর্ভিক্ষের সময়ে তিনি চোরের হাত কাটা নিষেধ করে দিয়েছিলেন।
একবার চুরির অভিযোগে এক লোককে উমর (রা)-এর কাছে নিয়ে আসা হলো। তিনি চোরকে বললেন –
أسرقت؟ قل: لا
“তুমি কি চুরি করেছো? বল – “না”।
তখন লোকটি বললেন, “না”।
এরপর উমর (রা) তাঁকে ছেড়ে দিলেন।
[সূত্র: মুসনাফে আবদুর রাজ্জাক, ১৮৯২০, মাকতাবায়ে শামেলা]
২৯
উসমানী খিলাফতের ৬২৫ বছরে শরিয়া আইনের মাধ্যমে মাত্র ১ জন যিনাকারিণীকে হত্যা করা হয়েছিলো। কিন্তু আমাদের সেক্যুলার দেশে ধর্ষণ, জিনা ও অবাধ যৌনাচারের কারণে প্রতিদিন-ই নারীদের হত্যা করা হচ্ছে।
সূত্র: টার্কি ভাষায় লিখিত তুরস্কের সরকারী পত্রিকা।
https://goo.gl/vmr7N6
উসমানী খিলাফতের ৬২৫ বছরে শরিয়া আইনের মাধ্যমে মাত্র ১ জন যিনাকারিণীকে হত্যা করা হয়েছিলো। কিন্তু আমাদের সেক্যুলার দেশে ধর্ষণ, জিনা ও অবাধ যৌনাচারের কারণে প্রতিদিন-ই নারীদের হত্যা করা হচ্ছে।
সূত্র: টার্কি ভাষায় লিখিত তুরস্কের সরকারী পত্রিকা।
https://goo.gl/vmr7N6
৩০
ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল সহ অধিকাংশ ফকিহ এর মতে, নারীদের ব্যবহৃত গয়নার উপর যাকাত নেই।
এর কারণ হলো,
পুরুষদের জন্যে এক বছরের খাওয়ারের টাকাটা যেমন অতীব প্রয়োজন। নারীদের জন্যে গয়না তেমন অতীব প্রয়োজনীয়। আর, অতীব প্রয়োজনীয় জিনিসের যাকাত দিতে হয় না।
৩১
দর্শন হলো চিন্তাশীল মানুষের ধর্ম। আর ধর্ম হলো কর্মশীল মানুষের দর্শন।
৩২
শিশুদেরকে কোনো কাজ নিষেধ করলেও তারা সেটি করতে থাকে। আমরা তখন মনে করি যে, শিশুটি আমাদের কথা শুনছে না।
আসল ব্যাপারটা হলো, শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না। আমরা যখন তাদেরকে কোনো কিছু করতে ‘না’ করি, সাথেসাথেই তারা তা ভুলে যায়, এবং কাজটি আবার করতে থাকে।
এ কারণে ইসলামী শরিয়তে শিশুদের কোনো অন্যায়কে অন্যায় মনে করা হয় না। কিন্তু আমরা শিশুদের অন্যায়কে অন্যায় মনে করে তাদেরকে মারধর করি। এটি ইসলামী শরিয়তে ঠিক না। একটি শিশু বালেগ বা পূর্ণ বয়স্ক হবার আগে তাকে কোনো শাস্তি দেয়া উচিত নয়।
৩৩
ক্রিকেট খেলার মনস্তাত্ত্বিক রূপ হলো, ১১ জন মানুষ মাঠে সক্রিয়ভাবে খেলবে, আর ১১ কোটি মানুষ নিষ্ক্রিয়ভাবে খেলা দেখবে ও ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিবে।
মনস্তাত্ত্বিক এই বিষটা ধর্মের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়। সমাজের অল্প কিছু মানুষ সক্রিয়ভাবে কোর’আন-হাদিস পড়ে, আর আমরা কোটি কোটি মুসলিম নিষ্ক্রিয়ভাবে তাঁদের কথা শুনি।
৩৪
পশ্চিমা এনলাইটেনমেন্ট মানে ফটো স্টুডিওর মতো অতিরিক্ত লাইট দিয়ে মানুষের আসল চেহারাকে মুছে দিয়ে সব মানুষকে সাদা বানিয়ে ফেলা।
৩৫
পৃথিবীতে আমাদেরকে দুটি জিনিস অর্জন করতে হয়। ১) জ্ঞান, ২) সম্পদ । অনেকে জ্ঞান অর্জনের জন্যে সম্পদ বিসর্জন দেন, আবার অনেকে সম্পদ অর্জনের জন্যে জ্ঞানকে বিসর্জন দেন।
মনে রাখা প্রয়োজন, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সকল মানুষ ও সৃষ্টির জন্যে রিজিকের ওয়াদা করেছেন, কিন্তু সকলের জন্যে জ্ঞানের ওয়াদা করেননি। সুতরাং সম্পদকে প্রাধান্য না দিলে আমরা ক্ষুধার্ত হয়ে মরে যাব না। কিন্তু জ্ঞানকে প্রাধান্য না দিলে আমরা অবশ্যই মূর্খ থেকে যাব।
৩৬
ক্রিকেট খেলা দেখার সাথে ধূমপান করার মিল আছে।
যারা ধূমপান করেন, তাঁরা জানেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর, তবুও তাঁরা ধূমপান করেন। আর যারা ক্রিকেট খেলা দেখেন, তাঁরাও জানেন যে, ক্রিকেট খেলা দেখলে সময়ের অপচয় হয় এবং ক্যারিয়ার ও ব্যবসার ক্ষতি হয়, তবুও তাঁরা খেলা দেখেন।
৩৭
দর্শন ও কালাম শাস্ত্রের মাঝে একটি মৌলিক পার্থক্য হলো – দর্শনে আল্লাহর গুণাবলীর কারণে তাঁকে স্বীকার করা বা অস্বীকার করার প্রশ্ন উত্থাপন করা যায়। কিন্তু, কালাম শাস্ত্রে আল্লাহর গুণাবলী নিয়ে অনেক ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও, আল্লাহর ধারণাকে কেউ অস্বীকার করে না।
৩৮
পৃথিবীতে তিন ধরণের মানুষ চিন্তা ও প্রতিচিন্তাকে সহ্য করতে পারে না।
১। মূর্খ ধার্মিক – ধর্ম নিয়ে কেউ ভিন্ন চিন্তা করলে বলবে কাফির।
২। সরকার – দেশ নিয়ে কেউ ভিন্ন চিন্তা করলে বলবে রাষ্ট্রদ্রোহী।
৩। আধুনিক – সমকালীন বিশ্বকে প্রশ্ন করলে বলবে পশ্চাৎপদ।
৩৯
দ্বীন – সকল নবী ও রাসূলের জন্যে একই। কখনোই পরিবর্তন হয় না।
শরিয়ত – আল্লাহ প্রদত্ত, কিন্তু সাধারণত প্রত্যেক নবী ও রাসূলের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
ফিকহ – এটি মানুষের তৈরি। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে প্রত্যেক মানুষের জন্যে ফিকহ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
৪০
ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত বলতেন – “I think therefore I am” অর্থাৎ, আমি চিন্তা করতে পারি, কারণ “আমি” বলে একটি জিনিসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
রনে দেকার্তের আগে মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনাও একই কথা বলেছেন, তবে আরো সুন্দর করে। ইবনে সিনা বলেছিলেন – “”I think therefore Allah is” অর্থাৎ, আল্লাহর অস্তিত্ব আছে বলেই আমি চিন্তা করতে পারি।
৪১
তুরস্কের অনেক এলাকায় এখন বরফ। শীতকালে বরফের কারণে যখন সম্পূর্ণ এলাকা ডেকে যায়, তখন মুসলিমদের ঐতিহ্য অনুযায়ী তুরস্কের মানুষেরা পাখিদের জন্যে পাহাড়ের উপরে গিয়ে খাদ্য দিয়ে আসে, যাতে খাদ্যের অভাবে পাখীরা মারা না যায়।
অনেকে বলেন, খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ এর সময় থেকে এই প্রথা চালু হয়েছে। তিনি তাঁর লোকজনকে আদেশ দিতেন – “যাও, পাহাড়ে গিয়ে পাখিদের জন্যে খাবার রেখে এসো। মুসলিম দেশে একটি পাখীও যাতে খাদ্যের অভাবে মারা না যায়।”
ছবিটি ফেইসবুক থেকে নেয়া।
৪২
কাউকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভালোবাসা হলো শিরক। [সূত্র: আল কোর’আন – ২/১৬৫]
কিন্তু, আমরা কখন বুঝবো যে, কাউকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভালোবাসি নাকি?
যখন কাউকে ভালোবাসার কারণে কোনো মিথ্যা বা অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়, তখন আমরা বুঝবো যে, আমরা আল্লাহর চেয়ে অন্যকে বেশি ভালোবাসি।
৪৩
পৃথিবীর সকল ভাষা আল্লাহ তায়ালার দান। আরবি ভাষা আল্লাহ তায়ালার ভাষা, আর ইংরেজি ভাষা শয়তানের ভাষা, ব্যাপারটা এমন না। একজন মানুষ যতো বেশি ভাষা জানেন, তিনি তত বেশি সমৃদ্ধ হন। মাদ্রাসার ছাত্রদের যেমন ইংরেজি জানা উচিত, তেমনি স্কুলের ছাত্রদেরও আরবি জানা উচিত। অবশ্য, মাদ্রাসার ছাত্ররা যতবেশি ইংরেজি পারেন, স্কুলের ছাত্ররা ততবেশি আরবি পারেন না। সে হিসাবে মাদ্রাসার ছাত্রদের ভাষাগত যোগ্যতা স্কুলের ছাত্রদের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু আরবি বা ইংরেজি নয়, আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের মতো, আমাদেরকে উর্দু, হিন্দি ও ফার্সি ভাষাটাও শেখা উচিত। আর, বর্তমান সময়ের রাজনীতি বুঝার জন্যে টার্কি ভাষাটাও জানা উচিত।
ফার্সি ভাষা শেখার একটি ভালো ইউটিউব চ্যানেল কমেন্টে শেয়ার করলাম।
https://www.youtube.com/channel/UCYRyoX3ru_BfMiXVCGgRS6w
৪৪
কোনো চিন্তাকে যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশ্ন করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা দর্শন হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু যখন সে চিন্তাকে আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয় না, তখন তা আইডোলজিতে পরিণত হয়ে যায়।
৪৫
ধর্মের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও জ্ঞানের অভাবে ধর্মান্ধতা ও উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়।
জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও ধর্মের অভাবে দুর্নীতি ও অত্যাচারের সৃষ্টি হয়।
৪৬
একজন বিবাহিত নারীবাদী পুরুষ ইমতিয়াজ মাহমুদের সাথে একজন অবিবাহিত নারীবাদী নারী জান্নাতুন নাঈম প্রীতির অবৈধ সম্পর্ক প্রমাণ করে যে, নারীবাদীরাও বহুবিবাহের পক্ষে।
৪৭
বাংলাদেশে ইসলামী যারা রাজনীতি করতে চায়, তাদের জন্যে একজন আদর্শ পুরুষ খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা। আমরা যখন রাজনৈতিকভাবে আমাদের আদর্শ পুরুষদেরকে চিনতে ভুল করি, তখন মাজার-পূজারি মানুষেরা সেই মহান পুরুষদের নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। খান বাহাদুর আহছানউল্লাকে নিয়েও এখন তাই করা হচ্ছে।
সংযুক্ত ডকুমেন্টারিতে দেখুন –
আহছানউল্লা সারাজীবন জুলমের বিরুদ্ধে লড়েছেন, কিন্তু তিনি মারা যাবার পর মাজার-পূজারিদের ব্যবসার পুঁজি হয়ে গিয়েছে।
৪৮
অন্ধকারের কোনো কারণ বা অস্তিত্ব নেই, সূর্যের অনুপস্থিতেই অন্ধকারের সৃষ্টি হয়।
তেমনি, আমাদের সমাজে মন্দের কাজের পিছনে কোনো কারণ নেই, ভালো কাজের অনুপস্থিতেই মন্দ কাজের সৃষ্টি হয়।
৪৯
উস্তাদ ইউসুফ আল কারদায়ী বলেন –
“সত্যিকার অর্থে আমি বিশ্বাস করি না যে, মেহদী নামে কেউ আসবে। কারণ, মেহদী সম্পর্কে পর্যাপ্ত সহীহ হাদিস আমি কোথাও খুঁজে পাইনি। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে একটি হাদিসও নেই।”
৫০
ইউরোপ ও অ্যামেরিকার নিজস্ব কোনো ধর্ম নেই। যদিও আমরা দেখি, ইউরোপ ও অ্যামেরিকার অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান, কিন্তু খ্রিস্টান ধর্ম ইউরোপ বা অ্যামেরিকার নিজের কোনো ধর্ম নয়।
ঈসা (আ)-এর জন্ম ফিলেস্তিনে, এবং মুহাম্মদ (স)-এর জন্ম মক্কায়। দু’জন-ই এশিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেছেন। ফলে, খ্রিস্টান ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম উভয়টির প্রচার শুরু হয়েছে এশিয়া মহাদেশ থেকে।
ঈসা (আ) যেহেতু মুহাম্মদ (স)-এর ৫৭০ বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন, তাই খ্রিষ্টান ধর্ম রাসূল (স)-এর জন্মের আগেই ইউরোপে প্রবেশ করেছে।
ইউরোপ ও আমেরিকা একমাত্র খ্রিষ্টানদের-ই রাষ্ট্র, এটা মনে করা ভুল। মুসলিমরা যদি সুন্দরভাবে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় প্রবেশ করে সেখানে ইসলামের দাওয়াত চালিয়ে যায়, তাহলে সেখানেও ইসলামের বিজয় হতে পারে।