ছাত্র ও শিক্ষকের মাঝে যে দেয়ালটি দাঁড়িয়ে থাকে তার নাম স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্র ও শিক্ষকের মাঝে যে দেয়ালটি দাঁড়িয়ে থাকে তার নাম স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়। -এগুলো প্রায়ই জ্ঞান অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়; বিশেষকরে বাংলাদেশের মত দেশ হলে তো আর কোনো কথাই নেই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় মানেই সন্ত্রাসী উৎপাদন কেন্দ্র।

সমস্যা ছাত্রদের না, শিক্ষাব্যবস্থার। ইমাম আবু হামিদ আল গাজালি তাঁর ‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ বইয়ে শিক্ষা বিষয়ে অনেকগুলো পরামর্শ প্রদান করেছেন। সেখান থেকে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে দিলাম।

ইমাম গাজালির দৃষ্টিতে আমাদের শিক্ষা সমস্যা ও তার সমাধান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান চর্চা হলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চা হয় না, হয় তথ্যের আদান-প্রদান। ইমাম গাজালি এ ধরনের ব্যবস্থাকে গাধা লালন-পালন করার সাথে তুলনা করেছেন। যে গাধা জানে না তার উপর কোন্‌ মূল্যবান সম্পদটি রাখা হয়েছে।

ইমাম গাজালির মতে, শিক্ষার্থীরা মাতৃভূমির প্রতি সচেতন থাকবে, কিন্তু জাতীয় কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত হবে না। বাংলাদেশে এই নিয়মটির ঠিক উল্টো কাজ করা হয়। দেশের যাবতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয় ছাত্রদের মাধ্যমে, আর এরপর শিক্ষকরা রাতে টক-শো গিয়ে সমাধান করার নামে টাকা-পয়সা নিয়ে আসেন।

অহংকার ও শিক্ষা পরস্পর ব্যস্তানুপাতিক। জ্ঞান বাড়লে অহংকার কমে যায়; আর অহংকার বাড়লে জ্ঞান কমে যায়। ইমাম গাজালির মতে শিক্ষার্থীদের অহংকার থাকতে পারবে না। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অহংকার ছাড়া আর কিছুই শেখাতে পারে না। এক একজন শিক্ষক এক একজন দেবতা।

শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় পড়া উচিত। যখন এক বিষয় জানা হবে তখন অন্য বিষয়ে শিক্ষা শুরু করা উচিত। -ইমাম গাজালির এ নিয়ম বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অকল্পনীয়। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পড়ার সুযোগ পায় না। একবার যে বিষয় পড়া শুরু করে পরে তা আর পরিবর্তন করা যায় না।

এমন কোনো শাস্ত্র শিক্ষার্থীর পড়া উচিত না, যার আগে আরো অনেক শাস্ত্র রয়েছে, যা শিক্ষার্থীর অজানা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব কিছুই মেনে চলা হয় না।

শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে নিজের পরিবর্তন, অন্যের নির্মূল নয়। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাই অন্যের ক্ষতি করতে ব্যস্ত।

অর্থের কারণে কেউ পড়তে পারবে, আর কেউ পারবে না –এটা হতে পারে না। ইমাম গাজালির মতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পারিশ্রমিকের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা প্রদান করবেন না। অথচ বাংলাদেশের মানুষ অর্থের অভাবে ছেলে-মেয়েদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারেন না।

শিক্ষা প্রদানের সর্বোত্তম পন্থা হল- শিক্ষার্থীদের সৎ-চরিত্র শিক্ষা দেয়া। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে এক একজন হয় একটা বিশ্বসেরা সন্ত্রাসী।

ইমাম গাজালি তাঁর বইয়ে এ-রকম সহস্রাধিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন; যার একটি উপদেশও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুসরণ করা হয় না। এখান থেকে সন্ত্রাসী বের না হয়ে মানুষ তৈরি হবে কিভাবে?

April 21, 2015 at 11:56 PM ·

আরো পোস্ট