আমাদের সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা
বুয়েটের এক শিক্ষককে মারধর করেছে ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা করেছে নারীদের বস্ত্রহরণ। পয়লা বৈশাখে দশ ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে নিহত দুই। সংঘর্ষের জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের দায়ে ৮ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার।
-এ সংবাদগুলো গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। প্রায় সবগুলো গণমাধ্যম এ ঘটনাগুলোর জন্যে দায়ী করেছে ছাত্রলীগকে। কিন্তু সমস্যা কি শুধু ছাত্রলীগের না আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার?
আজ যারা ছাত্রলীগের নামে এগুলো করছে, সরকার পরিবর্তন হলে কাল তারাই আবার ছাত্রদলের নামে এসব করবে। গত নির্বাচনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলাম; তাই ছাত্রলীগ করতে হত। দেখেছি, ছাত্রলীগের নেতারা সব গোপনে ছাত্রদলে যোগ দিয়েছিল। পরে বিএনপি নির্বাচন না করায় নেতারা আবার ছাত্রলীগে ফিরে এসেছে।
আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমস্যাগুলোকে কেবল ছাত্রলীগের সমস্যা মনে করি, তাহলে বোধয় মারাত্মক ভুল করব।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের এসব অপকর্ম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে যে সংবাদগুলো আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, তা কেবল গত এক সপ্তাহে ঘটেছে, এমন না। নিয়মিত-ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ঘটনা গুলো ঘটে যাচ্ছে। অথচ অধিকাংশ ঘটনা-ই গণমাধ্যমে আসে না এবং তারা আনতেও চায় না; কখনো নেতাদের ভয়ে, কখনো সেক্যুলার গোষ্ঠীর সম্মান রক্ষার্থে। বাহির থেকে সাধারণ মানুষদের অনেক কিছুই জানতে পারে না।
মানুষ জানে না, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেবতা না মানার ফলে কত শত শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। মানুষ জানে না, বিশ্ববিদ্যালয়েরগণ-রুমে শিক্ষার্থীদের উপর প্রতিদিন কতটা অমানবিক নির্যাতন করা হয়; কিভাবে ছাত্রীদের খারাপ কাজ করার জন্যে বাধ্য করা হয়; কিভাবে ভদ্র, শান্ত, চরিত্রবান ছেলে-মেয়েরা এ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আস্তে আস্তে অভদ্র, অসৎ ও চরিত্রহীন হয়ে যায়। এ সব অনেক কিছুই সাধারণ মানুষ জানে না।
সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার ফলে ছাত্রদের শিক্ষা-চরিত্র-আচরণ কতটা অধঃপতনে গিয়েছে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী খারাপ হয়ে যায় –তাও বলা যায় না। যারা ভালো থাকতে চায় তাদেরকে জীবনের সবচেয়ে বড় সংগ্রামটা এ শিক্ষাব্যবস্থারবিপরীতে করে যেতে হয়। অভিজ্ঞতা থেকেই কথা গুলো বলছি।
আম্মু যখন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িস তো কিছুই শিখতে পারলি না; তখন খুব দুঃখ হয়। মনে হয়, আসলেই তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অহংকার, হিংসা, দুর্নীতি, গুণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই শিখতে পারি নি।
আমাদের সমস্যা কেবল ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের না; আমাদের সমস্যা সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার। এখানে ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব না।
April 18, 2015 at 11:29 PM ·