ঝগড়াহীন সম্পর্ক কি লবণহীন তরকারীর মত?

বউয়ের সাথে এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ কোনো ঝগড়া হয়নি বলে কয়েকজন প্রিয় মানুষ আমাকে লিখেছেন –

১ – “ঝগড়াহীন সম্পর্ক লবণহীন তরকারীর মতো”
২ – “ঝগড়া না হলে তো ভাই সম্পর্কের মজাই পেলেন না”
৩ – “ঝগড়াহীন দুটি মানুষের সম্পর্ক, নাকি পাথরের?”
৪ – “ঝগড়াহীন হলে তো পানসে হয়ে গেলো না?”
৫ – “আসলেই ঝগড়া হয়নি? এটা তো অসম্ভব!”
৬ – “কিঞ্চিত ঝগড়া না হলে কি জমে?”

আসলে এখানে আমি ঝগড়া বলতে রাগ বা অভিমান বুঝাইনি। সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাগ-অভিমান থাকেই, কিন্তু সেটাকে তর্কাতর্কি কিংবা ঝগড়ার স্তরে নিয়ে যাওয়া বোকামি।

যে কোনো সম্পর্ক বিচ্ছেদের শুরু হয় অভিমান দিয়ে। অভিমান থেকে রাগের সৃষ্টি, রাগ থেকে ঝগড়ার সৃষ্টি, এবং ঝগড়া থেকে বিচ্ছেদের সৃষ্টি। সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিমান না করে থাকাটা আসলেই কষ্টকর, কিন্তু এই অভিমানকে যখন রাগের স্তরে নিতে চাই, তখনি কিছু আয়াত-হাদিস মনে পড়ে যায়। ফলে কোনো অভিমান কখনো রাগ বা ঝগড়ায় রূপান্তরিত হয় না।

কোর’আনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা হারুত ও মারুতকে কিছু জাদু শিক্ষা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। হারুত ও মারুত সেই জাদু মানুষকে শিক্ষা দেয়ার আগে বলে দিতেন, “তোমরা এসব জাদু দিয়ে কোনো অন্যায় কাজ করবে না; যদি করো, তাহলে তোমরা কাফের হয়ে যাবে”। হারুত ও মারুতের কাছ থেকে শয়তান সেই জাদুগুলো শিখে নিয়ে মানুষকে শিক্ষা দিতে লাগলো। শয়তান থেকে মানুষ সেই জাদু শিখে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে শুরু করলো। আর যারা এই অন্যায় কাজ করলো, আখিরাতে তাদের জন্যে কিছুই রইলো না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি, শয়তানরাই কুফর করেছিল। শয়তানরা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। হারুত ও মারুত উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তোমরা কাফের হয়ো না। অতঃপর হারুত ও মারুতের কাছ থেকে তারা এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া সেই জাদু দিয়ে কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।” [সূরা বাকারা – ১০২]

জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ إِبْلِيسَ يَضَعُ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمَّ يَبْعَثُ سَرَايَاهُ، فَأَدْنَاهُمْ مِنْهُ مَنْزِلَةً أَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً، يَجِيءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا، فَيَقُولُ: مَا صَنَعْتَ شَيْئًا، قَالَ ثُمَّ يَجِيءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: مَا تَرَكْتُهُ حَتَّى فَرَّقْتُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ امْرَأَتِهِ، قَالَ: فَيُدْنِيهِ مِنْهُ وَيَقُولُ: نِعْمَ أَنْتَ ” قَالَ الْأَعْمَشُ: أُرَاهُ قَالَ: «فَيَلْتَزِمُهُ»
[صحيح مسلم 4/ 2167]

“ইবলিস পানির উপর তার আরশ স্থাপন করে। এরপর তার সৈন্যবাহিনী (মানুষের নিকট) প্রেরণ করে। সৈন্যবাহিনীদের মধ্যে ইবলিসের সর্বাধিক নৈকট্য অর্জনকারী সে-ই, যে সবচেয়ে বেশী ফিতনা সৃষ্টি করতে পারে। এরপর, সৈন্যবাহিনীদের একজন এসে বলে, “আমি অমুক অমুক কাজ করেছি”। ইবলিস বলে, “তুমি কিছুই করনি”। তারপর, আরেকজন এসে বলে, “স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হবার আগ পর্যন্ত আমি তাদের ছাড়ি নাই। এমনকি স্বামী থেকে তার স্ত্রীকে আলাদা করে দিয়েছি”। তারপর ইবলিস ঐ সৈন্যকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে, “কতই না ভালো তুমি”। রাবী আ‘মাশ বলেন, “অতঃপর ইবলিস তার সাথে আলিঙ্গন করে।” [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৯৯৯, (ই.ফা. ৬৮৪৬, ই.সে. ৬৯০২)]
—–
অর্থাৎ, যখনি দেখবেন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অভিমান দেখা দিয়েছে, তখনি বুঝতে হবে, আপনার মাথায় শয়তান ঢুকেছে।

১৯/১/২০১৯

আরো পোস্ট