নারী দিবসের লেখা – ২৩

ইসলামে নারী ও পুরুষের সমান অবস্থান নিয়ে লেখার পর এক ভাইয়া কমেন্ট করেছেন–

“আপনার এ পোস্টে বুঝলাম যে, ইসলাম সম্পদ দিয়ে মানুষের বিচার করে না। তার তাক্বওয়া, দ্বীনদারই দিয়ে বিচার করে। কিন্তু, এটা বুঝা যাইতেসে না যে, কেন ইসলাম বোনদের আট আনা, আর ভাইদের ষোল আনা দিল?”

–এ প্রশ্নটি করার মাধ্যমে ঐ ভাইয়াকে ধর্ম বিদ্বেষী একটি ভাইভা বোর্ডে আটকে দেয়া হল।

কিন্তু, ইসলাম কি সত্যিই বোনদের আট আনা, আর ভাইদের ষোল আনা প্রদান করে?

আসলে, যারা কোর’আন পড়ে না, তারাই ইসলামের ব্যাপারে এসব মিথ্যা অভিযোগ করে। তারা অন্ধ ও মূর্খ, তাই তারা দিনকে রাত বলে। তাদের নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু, আমরা যারা মুসলিম, আমাদের উচিত কোর’আনটা ভালোভাবে পড়া।

আমাদের মুসলিমদের কোর’আনের জ্ঞান না থাকার কারণেই ধর্ম-বিদ্বেষীরাআমাদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে।

যাই হোক, সরাসরি কোর’আনে চলে যাই। ভাই-বোনকে সম্পত্তি বণ্টনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ فَإِن كَانُوٓا۟ أَكْثَرَ مِن ذَ‌الِكَ فَهُمْ شُرَكَآءُ فِى ٱلثُّلُثِ

“কোনো ব্যক্তি মারা যাবার পর যদি তার পিতা-পুত্র অথবা স্ত্রী না থাকে, কিন্তু একজন ভাই বা একজন বোন থাকে, তাহলে প্রত্যেকে এক ষষ্ঠাংশ সম্পত্তি পাবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক ভাই-বোন থাকে, তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে”। [সূরা ৪/নিসা – ১২]

কোর’আনের এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ভাই ও বোনের সমান অধিকার ও সমান সম্পত্তি। অর্থাৎ, কোনো মানুষ মারা গেলে তার পিতা-পুত্র বা স্ত্রী না থাকলে, মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তার ভাই যা পাবে, তার বোনও তা পাবে। ভাই অথবা বোন যদি একজন হয়, তাহলে সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ পাবে। আর, ভাই অথবা বোন যদি একাধিক হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির ঋণ শোধ করার পর বাকি সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ সমানভাবে ভাই ও বোনের মাঝে বণ্টন করা হবে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বলি।

ধরুন, জোবায়ের আল মাহমুদ আজ মারা গেল। কিন্তু সে যেহেতু বিয়ে করে নাই, তাই তার বউ-পোলাপান নাই। ধরুন, জোবায়েরের বাবাও নাই। জোবায়েরের আছে একমাত্র ভাই ওমায়ের।

মারা যারার সময় জোবায়েরের পকেটে ছিল ৬ টাকা। সুতরাং, এই ৬ টাকা থেকে জোবায়েররের একমাত্র ভাই ওমায়ের পাবে ১ টাকা।

ধরুন, জোবায়েরের কোনো ভাই নেই। আছে একমাত্র বোন মিতু। তাহলে, জোবায়েরের রেখে যাওয়া ৬ টাকা থেকে মিতু পাবে ১ টাকা। অর্থাৎ, ভাই হোক অথবা বোন হোক, উভয়ে জোবায়েরের সমান সম্পত্তি পাবে।

ধরুন, জোবায়েরের একজন ভাইও আছে, আবার একজন বোনও আছে। তাহলে জোবায়েরের রেখে যাওয়া ৬ টাকার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২ টাকা দুই ভাইবোন উভয়ের মাঝে ভাগ করে দেয়া হবে। তখন ওমায়ের পাবে ১ টাকা, এবং মিতুও পাবে ১ টাকা। উভয়ে সমান সমান টাকা পাবে। এখানে ওমায়ের ছেলে হবার কারণে বেশি সম্পদ পাবে না, আবার মিতু মেয়ে হবার কারণে কম সম্পদ পাবে না।

শুধু ভাইবোন না, কোর’আনের অনেক স্থানেই নারী ও পুরুষকে সমান সম্পত্তি দেয়া হয়েছে।

যেমন ধরুন, জোবায়ের যদি বিয়েসাদি করে মারা যায়, তাহলে জোবায়েরের দাদা একজন পুরুষ হয়েও যা পাবে, জোবায়েরের দাদি একজন নারী হয়েও তা পাবে। এখানেও, নারী ও পুরুষ সমান সম্পত্তি পাবে।

সুতরাং, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তারা আসলে অজ্ঞ ও মূর্খ। কোর’আন না জানার কারণেই তারা এসব কথা বলেন। কিন্তু আমাদের মুসলিমদেরকে ভালোভাবে কোর’আন জানতে হবে।

3 মে, 2017, 8:58 PM

আরো পোস্ট