ইসলামি চিন্তার মানচিত্র
ইসলামিক চিন্তার ইতিহাসে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যেসব মানুষ, গ্রন্থ, স্থান, স্থাপনা ও ঘটনা ভূমিকা রেখেছে, সেসব এখানে পরিচিত করানো হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের স্মৃতির হারানো অংশ ইসলাম চিন্তার মানচিত্রে একত্রিত হবে।
ইসলামি চিন্তাধারা যেন একটা গ্লাস। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ফলে এর দ্বারা আমরা এখন আর কোনও উপকার পাচ্ছি না। ইসলামি চিন্তার ভাঙ্গা ও বিচ্ছিন্ন টুকরোগুলোকে একত্রে জোড়া লাগানোর কাজটা আমরা করতে চাই। সে জন্যে এটার নাম দিয়েছি আমরা ইসলামি চিন্তার মানচিত্র।
আমাদের চিন্তার ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হচ্ছে
“ইসলাম চিন্তার মানচিত্রে” একটি সময়কে আমরা বিশদভাবে উপস্থাপন করবো, যাকে ইউরোপে চিন্তার ইতিহাস থেকে ‘নাই’ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই কাজের মাধ্যমে ইসলামি চিন্তাধারার ইতিহাসকে সাধারণ চিন্তার ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ওরিয়েন্টালিস্ট (প্রাচ্যবাদী) চিন্তার ইতিহাসে ইসলামি চিন্তাধারার ইতিহাসকে যেভাবে বিভাজন করা হয়েছে, এবং যে সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা বিজ্ঞানসম্মত ছিল না এবং তা “ইতিহাস চুরির” সমতুল্য ছিল। আমাদের লেখায় ওরিয়েন্টালিস পদ্ধতি পরিত্যাগ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে, ইসলামি চিন্তাধারার নিজস্ব ঐতিহ্যের ভিত্তিতে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, নিরপেক্ষ, গতিশীল এবং ধারাবাহিক সময়কাল নির্ধারণের মাধ্যমে ইসলামি চিন্তাধারার ইতিহাস পুনর্লিখিত হয়েছে।
প্রায় এক হাজার বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চিন্তার ইতিহাসের প্রধান কেন্দ্র হয়ে থাকা “দারুল ইসলাম”-কে বিশ্ব চিন্তার ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে। এটাকে একটি “ভূগোলিক চুরি” বলা যেতে পারে।
“ইসলাম চিন্তার মানচিত্র”-এর মাধ্যমে মাওয়ারাউন্নাহর, খোরাসান, বিলাদুর রুম, মাগরিব, সিন্ধ-হিন্দ এর পাশাপাশি বুখারা, সিভাস, কোনিয়া, সমরকন্দ, বাল্খ, হেরাত, আমাসিয়া-এর মতো প্রাচীন ইসলামি শহরগুলোকে বিশ্ব চিন্তার ইতিহাসে পুনরায় মূল কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
ইসলামি চিন্তার ইসহাসটা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও পড়ানো হয় না। অথচ এটা মুসলিমদের প্রাথমিক জ্ঞানের বিষয় হওয়ার কথা ছিলো। ইসলামি চিন্তার ইতিহাসকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করাই আমাদের লক্ষ্য।
একটি নতুন সময়কাল নির্ধারণ এবং সামগ্রিক পাঠ প্রস্তাবনা
১৪০০ বছর ধরে গঠিত এবং বিকশিত ইসলাম চিন্তার ইতিহাসকে সঠিকভাবে বোঝা ও ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সঠিক সময়কাল নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইসলামি চিন্তার ইতিহাসের কোনও সুসংগঠিত এবং সঙ্গতিপূর্ণ সময়কাল আমাদের সামনে নেই।
ইসলামি চিন্তার ইতিহাস আলোচনা শুরু হলে প্রথমেই আমরা একটা ভুল করি। ইসলামি চিন্তার ইতিহাসকে উন্নতির যুগ ও পতনের যুগ হিসাবে ভাগ করি। কেউ কেউ এটাকে ইমাম গাজালির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় হিসাবে ভাগ করে। এমনভাবে ভাগ করার পদ্ধতিটা একটি মতাদর্শিক চিন্তা থেকে করা হয়, এবং এটি খুব সরল একটি বিভাজন।
ইসলামি চিন্তার উন্নতির যুগ ও পতনের যুগ – এভাবে ভাগ করলে দেখা যায় যে, ইসলামি চিন্তা ক্রমাগত পতন হয়ে স্থবির হয়ে যায়। এরপর আর নতুনভাবে কোনও চিন্তার ধারাবাহিকতা ছিলো না। কিন্তু এটা বাস্তব নয়।
ইসলামি চিন্তার মানচিত্রের মাধ্যমে ইসলামি চিন্তার সময়কালকে আমরা নতুন ও বাস্তবসম্মতভাবে বিভাজন করবো। যা কল্পনা ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা থেকে উদ্গত নয়, বরং বাস্তবতার নিরিখে তৈরি।