ইমাম শাফেয়ী কি ইস্তিহসানের বিরোধীতা করেছিলেন?
হ্যাঁ, ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ইস্তিহসানের ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ইস্তিহসানকে ইসলামি ফিকহের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করতেন। তার মতে, ইস্তিহসান মূলত কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি না করে ব্যক্তিগত পছন্দ বা মতামতের উপর নির্ভরশীল। তিনি এটিকে “ইচ্ছাধীন বিচার” বা “ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতি ঝোঁক” বলে মনে করতেন, যা শরীয়তের চূড়ান্ত প্রমাণ থেকে বিচ্যুতির কারণ হতে পারে।
ইস্তিহসান (استحسان) মূলত এমন একটি ফিকহি পদ্ধতি, যেখানে কোনো কেসের স্পষ্ট কিয়াস (তুলনামূলক যুক্তি) থাকা সত্ত্বেও, কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে তা এড়িয়ে এমন একটি সমাধান গ্রহণ করা হয় যা কিয়াসের চেয়ে উত্তম বা বেশি কার্যকর বলে বিবেচিত হয়। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং তার অনুসারীরা ইস্তিহসানকে ফিকহের একটি বৈধ উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
ইমাম শাফেয়ীর আপত্তির কারণ:
- কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি অগ্রাধিকার: ইমাম শাফেয়ী বিশ্বাস করতেন যে, ইস্তিহসান কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট নির্দেশনার বাইরে চলে যেতে পারে।
- ব্যক্তিগত মতামত: তিনি মনে করতেন যে ইস্তিহসান ব্যবহার করা হলে বিচারকের ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত শরীয়তের উপর প্রাধান্য পেতে পারে, যা শরীয়তের মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
- ফিকহের শৃঙ্খলা: ইস্তিহসানের ব্যবহার ফিকহের শৃঙ্খলাকে দুর্বল করতে পারে, কারণ এটি কিয়াস বা স্পষ্ট যুক্তির পরিবর্তে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে উৎসাহিত করে।
ইমাম শাফেয়ী তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আর-রিসালাহ” এবং “কিতাবুল উম্ম”-এ ইস্তিহসানের বিরোধিতা করেছেন এবং স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, এবং কিয়াসই ফিকহের মূল উৎস হওয়া উচিত।
তবে এটি উল্লেখযোগ্য যে, ইমাম শাফেয়ী ইস্তিহসানের পুরো ধারণাকে বাতিল করেননি। বরং তিনি এমন ইস্তিহসানকে গ্রহণযোগ্য মনে করতেন, যা কুরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ফিকহি নিয়মের মধ্যে রয়েছে।