যে শিক্ষা অস্থিরতা তৈরি করে, তা কি শিক্ষা?
বিভিন্ন নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার নামে যা দেয়া হচ্ছে তার নাম শিক্ষা নয়, অস্থিরতা। শিক্ষা তাই যা মানুষকে ধৈর্যশীল ও প্রজ্ঞাবান হতে শিখায়। কিন্তু যা মানুষকে অস্থির করে ফেলে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, তা শিক্ষা নয়।
অন্যকে হারিয়ে নিজে জিতার নাম শিক্ষা নয়, এর নাম খেলা। শিক্ষা হলো নিজেকে ও অন্যকে আলোকিত করা। নিজেকে ও অন্যকে পৃথিবী ও পৃথিবী পরবর্তী জীবনের জন্যে প্রস্তুত করে তোলার নাম-ই শিক্ষা।
বাবা-মা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাই অন্যকে হারিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় অস্থির। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খেলার মাঠের মতো আমাদের মাঝে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে। এর নাম শিক্ষা নয়।
ইংরেজি ভাষায় কোনো কিছু ভালোভাবে জানা-বুঝাকে আমরা বলি UnderStand । এখানে Stand শব্দটির অর্থ হচ্ছে থামা বা দাঁড়ানো। অর্থাৎ, অস্থিরতা, প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা যায় না।
যদি আমরা সত্যি সত্যি নিজে জ্ঞানী হতে চাই, বা অন্য কাউকে জ্ঞানী বানাতে চাই, তাহলে সমাজের অস্থির প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকতে হবে।
২
কোর’আনের প্রতিটি আয়াতের শেষে যে চিহ্নটি থাকে, তাকে আমরা বলি ‘ওয়াকফ’ (وقف)। ওয়াকফ এর একটি অর্থ হচ্ছে থামা বা দাঁড়ানো। এবং ওয়াকফ এর দ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থটি হলো ভালোভাবে বুঝা। অর্থাৎ, কোর’আন কেবল দ্রুত পড়ে গেলেই হয় না, বরং প্রতিটি আয়াতের শেষে থামতে হয়, এবং প্রতিটি আয়াত ভালোভাবে বুঝতে হয়।
জ্ঞান অর্জনের একটি মূল সূত্র হলো, দ্রুত নয় বরং ধীরে ধীরে পড়তে হয়।
কারণ, আরবি ভাষায় ওয়াকফ এর দুটি অর্থ। ১ – থামা, দাঁড়ানো; ২ – ভালোভাবে বুঝা। বাংলা ভাষায় কোনো কিছু ভালোভাবে জানাকে আমরা বলি ওয়াকিবহাল। এই ওয়াকিবহাল শব্দটিও আরবি ওয়াকফ শব্দ থেকে এসেছে। ইংরেজি ভাষায় কোনো কিছু ভালোভাবে বুঝাকে আমরা বলি UnderStand । এখানে Stand শব্দটির অর্থ হচ্ছে থামা বা দাঁড়ানো।
সুতরাং, জ্ঞান দ্রুত অর্জন করা যায় না। জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি বিষয়ের উপর অনেক সময় ধরে থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এটি সম্ভব হয় না। কারণ, প্রযুক্তি আমাদেরকে বলে, সব কিছু দ্রুত করে ফেলো। অথচ, জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে দ্রুততা মানুষকে বিপদের সম্মুখীন করে।
৫/১২/২০১৮