সুফি ড্যান্স ও এর অর্থ
মাওলানা রুমির একটা নাচ আছে। এটাকে অনেকে সুফি ড্যান্স বলেন। একজন আমাকে প্রশ্ন করলেন, এ ডান্সের মানে কী?
প্রথম কথা হলো, তাসাউফের সাথে রুমির নাচের কোনো সম্পর্ক নেই। দুইটা ভিন্ন জিনিস। তাসাউফ হলো আত্মার শুদ্ধিকরণ। আর এ নাচটা হলো রুমিপন্থী সূফীদের একটি সংস্কৃতি।
যদিও রুমির সুফি নাচটা একটা সংস্কৃতি, কিন্তু এ নাচের মাধ্যমে তারা কিছু অর্থ প্রদান করে।
১) নিজেদের অজ্ঞতা থেকে খোদায়ি আলোয় আলোকিত হবার একটি সাংস্কৃতিক রূপ হলো এ নাচ।
২) নাচের শুরুতে সবাই একটা সেজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এবং যতজন একসাথে নাচেন, সবাইকে সবাই পারস্পারিক শ্রদ্ধা জানান। কারণ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছাড়া দীর্ঘ পথ একসাথে চলা যায় না।
৩) নাচের শুরুতে সবার গায়ে একটি কালো জামা পরা থাকে। এটা হলো মানুষের অজ্ঞতা। আস্তে আস্তে কালো জামাটা খসে পড়ে, এবং সাদা জামাটা বের হয়। সাদা জামাটা হলো আল্লাহর আলোয় আলোকিত হবার চিহ্ন।
৪) নাচের শুরুতে দুই হাত বুকের সাথে বাধা থাকে; এর মানে মানুষ অজ্ঞ থাকলে খুবই স্বার্থপর হয়। এরপর দুটি হাত আকাশের দিকে উঠে; এর মানে আল্লাহর কাছে তার করুনা চাওয়া। এরপর, এক হাতের আঙ্গুলগুলো সোজা আকাশের দিকে বা আল্লাহর দিকে থাকে, আর আরেক হাতের আঙ্গুলগুলো সোজা জমিনের দিকে বা সৃষ্টি জগতের দিকে থাকে। এর অর্থ হলো, আল্লাহর থেকে রহমত নিয়ে মানুষের মাঝে বিতরণ করা। অথবা, আল্লাহর থেকে জ্ঞান ও রিজিক সংগ্রহ করে, মানুষের মাঝে তা বিলি করা।
৫) নাচের সময়ে ঘুরার সাথে সাথে এক হাত আস্তে আস্তে জমিনের দিকে নামতে থাকে; এর মানে হলো, মানুষ আল্লাহর রঙে যত আলোকিত হয়, তত জমিনের সব মানুষের জন্যে কল্যাণকামী হয়।
৬) নাচের সময় দুটি পা কম্পাসের মতো থাকে। একটি পা দৃঢ় থাকে, অন্য পা চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে। এর ব্যাখ্যায় রুমি বলেন, “মুসলিমদের দুটি পা হলো একটি কম্পাসের মতো, একটি পা ইসলামের উপর দৃঢ় থাকে, অন্য পা সারাবিশ্বে ঘুরে বেড়ায়।”
৭) নাচের সময়ে তারা দুইভাবে ঘুরে। একটা পা ঘুরে পৃথিবীর স্টাইলে, অন্য পা ঘুরে সূর্যের স্টাইলে।
নাচের আসল কথা হলো, নিজেকে আল্লাহর আলোয় আলোকিত করতে হলে সারা পৃথিবীর ও সারা বিশ্বজগতের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান ও করুণা সংগ্রহ করে মানুষের সাথে তা শেয়ার করতে হবে। এটাই সুখের মূলমন্ত্র, যাকে নাচের মাধ্যমে প্রতিকায়ন করা হয়।
9Apr 7:41pm 2020