|

মাজহাবের উৎপত্তি ধর্মকে বিভক্তি করা নয়, একত্রিত করা – ১

হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি ইত্যাদি মাজহাবের কারণে ইসলাম বিভক্ত হয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকে। আসলে বিষয়টা ঠিক উল্টো। হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি ইত্যাদি মাজহাবের উৎপত্তি হয়েছে মূলত ইসলামের মতবিরোধ দূর করার জন্যে।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। ধরুন, কেউ কোনো উপকার করলে আমরা বলি – جزاك الله

প্রশ্ন হলো, আরবি এ বাক্যটিকে আপনি কীভাবে বাংলায় লিখবেন? আপনি অনেকভাবেই এটি বাংলায় লিখতে পারেন। যেমন, জাজাকাল্লাহ, যাযাকাল্লাহ, জাযাকাল্লাহ, যাজাকাল্লাহ, জাজাকাআল্লাহ, জাযাকাআল্লাহ, জাজাকা আল্লাহ, ইত্যাদি।

কেউ কেউ বলতে পারেন, ‘এত ঝামেলা বাদ, আমি আরবিতেই লিখবো’। আবার কেউ কেউ বলতে পারেন, ‘না, আমি যাকে লিখবো, তিনি আরবি ভাষা জানেন না, তাই আমি বাংলায় লিখবো’।

ধরুন, আপনি বাংলায় একজনকে ম্যাসেজ করার সময়ে প্রথমে লিখলেন ‘জাজাকাল্লাহ’, এক লাইন পরেই আবার লিখলেন ‘জাযাকাল্লাহ’; এখানে কোন বানানটা শুদ্ধ?

অথবা ধরুন, আপনার বাচ্চাকে শেখানোর সময়ে আপনি লিখেন ‘জাজাকাল্লাহ’, আপনার স্ত্রী লিখেন ‘জাযাকাল্লাহ’, এবং স্কুলের স্যার লিখলেন ‘জাজাকাআল্লাহ’; এখন বাচ্চার তো মাথা ঘুরানো শুরু করবে। বাচ্চাকে কোনটা শেখাবেন?

جزاك الله শব্দটি বাংলা ভাষায় আপনি চাইলে অন্তত ১০ রকমে লিখতে পারবেন। বাংলা ভাষায় যদি এক হাজার আরবি শব্দ থাকে, আপনি সেগুলোকে ১০ হাজার স্টাইলে লিখতে পারবেন। এতে নানা ঝামেলা তৈরি হবে।

এখন বাংলা একাডেমি এসে বললো যে, আপনারা এতো চিন্তা করার দরকার নেই। আরবি শব্দ বাংলায় লিখতে গিয়ে আপনারা যে ঝামেলায় পড়ছেন, তা থেকে আপনাদেরকে আমরা মুক্তি দিবো। আমরা বিদেশি শব্দ লিখার একটা নিয়ম বানিয়ে দিচ্ছি। আপনারা সবাই যদি আমাদের নিয়ম ফলো করেন, তাহলে সবার বানান একই রকম হবে, আর কোনো বিরোধিতা থাকবে না। جزاك الله -কে আপনারা সবাই ‘জাজাকাল্লাহ’ লিখবেন।

ইসলামি ফাউন্ডেশন এসে বললো, ‘আরেহ! আরবি শব্দের বিষয়ে আমাদের অধিকার সবচেয়ে বেশি। বানানের নিয়মটা তাই আমরাই ঠিক করবো। এখন থেকে সবাই جزاك الله -কে ‘জাযাকাল্লাহ’ লিখবেন।

এখান থেকেই তৈরি হলো বাংলা লেখার দুটি মাজহাব বা বানানরীতি : ‘বাংলা একাডেমি’ ও ‘ইসলামি ফাউন্ডেশন’। আপনি যে কোনো একটি ফলো করতে পারেন। আপনি যদি বলেন, আমি কোনো নিয়ম ফলো করবো না, তাতেও লোকজন আপনার جزاك الله বানানটা বুঝবে, কিন্তু তাতে নানা ঝামেলা তৈরি হবে, ১০ জন দশভাবে লিখবে।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ‘বাংলা একাডেমি’ ও ‘ইসলামি ফাউন্ডেশন’ جزاك الله শব্দটি লিখতে গিয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে; আসলে কিন্তু তা নয়। লোকজন যাতে ১০/২০ ভাগে বিভক্ত না হয়, সে জন্যেই ‘বাংলা একাডেমি’ ও ‘ইসলামি ফাউন্ডেশন’কে দুটি মাজহাব বা নিয়ম বানাতে হয়েছে। যদি তারা দুটি মাজহাব না বানাতেন, তাহলে লোকজন আরবি বানান লিখার ক্ষেত্রে আরো বেশি বিভক্ত হয়ে যেতো।

সাধারণ লোকজন جزاك الله শব্দকে যেমন ইচ্ছে তেমন লিখতে পারে, কারণ তাঁদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু শিক্ষিত লোকজনকে অবশ্যই একটা নিয়মে সব সময়ে جزاك الله শব্দটা লিখতে হবে। হয় তাঁকে ‘বাংলা একাডেমি’র মাজহাব ফলো করতে হবে, নয়তো ‘ইসলামি ফাউন্ডেশনে’র মাজহাব ফলো করতে হবে, নয়তো ‘প্রথম আলো’র মতো নতুন একটা বানানরীতি বা মাজহাব চালু করতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যাই করেন না কেন, হয় আপনাকে পুরাতন বানানরীতি বা মাজহাব ফলো করতে হবে, নতুবা নতুন বানানরীতি বা মাজহাব বানাতে হবে।

আপনি যদি جزاك الله শব্দকে কোনো একাডেমিক বা অফিসিয়াল কাজে লিখতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই কোনো না কোনো বানান লেখার মাজহাব ফলো করতে হবে। এ জন্যেই সাধারণ মুসলিমের জন্যে কোনো মাজহাব প্রয়োজন না হলেও, যারা ইসলাম নিয়ে কথা বলেন, তাদেরকে কোনো না কোনো মাজহাব বা মেথডলজি ফলো করতে হয়।

যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় মাজহাব মানে বিভক্তি, আসলে মাজহাবের কাজ হলো ১০/২০টা বিভক্তিকে কমিয়ে ২/৩ টা বিভক্তিতে নিয়ে আসা।

27 March 6:59pm 2020

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক