মহিলারা কি পুরুষদের সহ মসজিদে নামাজের ইমামতি করতে পারবে?
উম্মে ওয়ারাকা আল আনসারিয়্যাহ (রা) বলেন –
“নবীজী (সা) যখন বদরের যুদ্ধের জন্য যাত্রা করলেন, আমি তাকে বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী, আপনার সাথে আমাকে যুদ্ধে যেতে দিন, আমি রোগীদের সেবা করবো, এবং আশা করি, আল্লাহ আমাকে শহীদ হিসাবে কবুল করবেন”। নবী (স) বললেন: “তুমি বাড়িতেই থাকো, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তোমাকে শাহাদাত দান করবেন”। (এই হাদিসটির বর্ণনাকারী) আবদুর রহমান ইবনে খল্লাদ বলেন: “এ জন্যে ঐ নারীকে শহীদ বলে ডাকা হত। ঐ নারী পুরো কুরআন মুখস্থ করেন, এবং তিনি যে বাড়িতে ছিলেন, সে বাড়ির মসজিদে একজন মুয়াজ্জিন রাখার অনুমতি চান নবীর নিকট। নবী (স) তাঁর অনুরোধ মঞ্জুর করলেন। আমি তার মুয়াজ্জিনকে দেখেছি, তিনি খুব বৃদ্ধ পুরুষ ছিলেন”।
এ হাদিসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, যাতে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এবং এ হাদিসটিকে আল-আলবানি ‘হাসান হাদিস’ হিসাবে স্থান দিয়েছেন।…
…এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, কোনো নারী তার পরিবারে নামাজের ইমামতি করার বৈধতা রয়েছে; এমনকি পুরুষদের সহ মসজিদেও ইমামতি করতে পারবে। কারণ, উপরোক্ত হাদিসের ভাষ্যমতে, উম্মে ওয়ারাকাহর একজন বয়স্ক পুরুষ মুয়াজ্জিন ছিলো, যিনি মানুষকে নামাজের জন্যে ডাকতেন। স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, উম্মে ওয়ারাকাহ সে পুরুষ মুয়াজ্জিনের এবং তাঁর দাস-দাসীর নামাজের ইমামতি করতেন। এই মত পোষণকারী আলেমদের মধ্যে রয়েছেন আবু ছাওর, আল-মুজানি এবং আত-তাবারি। তবে বেশিরভাগ আলেম এই মতটি সমর্থন করেন না।
ইবনে তাইমিয়াহ সমর্থন করেছেন যে, নারীরা পুরুষদের নামাজে ইমামতি করতে পারবে। তিনি ইবনে হাজমের এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, নারী-পুরুষদের নামাজে নারীরা ইমামতি করতে পারবে না মর্মে সকল ইমাম ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। ইবনে তাইমিয়াহ লিখেছেন –
“ইমাম আহমদের বিখ্যাত একটি মত অনুযায়ী, রমজানে তারাবীহর নামাজে একজন শিক্ষিত নারী অশিক্ষিত পুরুষদের ইমামতি করাটা বৈধ। অন্যান্য নামাজে নারীদের ইমামতি প্রসঙ্গেও ইমাম আহমদ দুটি ভিন্ন মত দিয়েছেন।”(১৪৭)
ইবনে তাইমিয়া আরো লিখেন –
“ইমাম আহমদের বিখ্যাত মতটি হলো, যখন প্রয়োজন দেখা দিবে, তখন পুরুষদের নামাজে নারীরা ইমামতি করা বৈধ। উদাহরণস্বরূপ, যখন নারী কোরআন তেলোয়াত করতে পারে, কিন্তু পুরুষরা পারে না। এমন অবস্থায় একজন নারী অন্য পুরুষদের তারাবীহর নামাজে ইমামতি করতে পারবে। যেহেতু রাসূল (স) উম্মে ওয়ারাকাহকে তাঁর পরিবারে নামাজের ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছেন, এবং তাঁর নামাজে ডাকার জন্যে রাসূল একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করেছেন।”(১৪৮)
[সূত্র: জাসের আউদা, রিক্লেইমিং দ্যা মস্ক, পৃ – ১০৫, ১০৬]
১৪৭) نقد مراتب الاجماع لابن تيمية – ২৯০
১৪৮) القواعد النورانية لشيخ الإسلام ابن تيمية – ১/১২০
23Feb 4:19pm 2020