ওহী ও যুক্তি কি পরস্পর বিরোধী?
মানুষের হৃদয়ের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যাদের হৃদয় অচেতন, তাদেরকে মূর্খ বলা হয়। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে যাদের হৃদয় উন্নত চেতনায় পৌঁছে, তাদের হৃদয়ে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াত সৃষ্টি হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
بَلْ هُوَ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ فِي صُدُورِ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلَّا الظَّالِمُونَ
বরং এটি স্পষ্ট আয়াত, যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরে এটি রয়েছে। কেবল জালিমরাই আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। [সূরা ২৯/আনকাবুত – ৪৯]
এ আয়াতে বলা হচ্ছে, জ্ঞানীদের অন্তরে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে। অর্থাৎ, কোর’আনেও আল্লাহর আয়াত রয়েছে, আবার জ্ঞানী লোকের অন্তরেও আল্লাহর আয়াত রয়েছে। তাই, জ্ঞানীদের অন্তর ও আল কোর’আন কখনো পরস্পর বিরোধী হতে পারে না।
অনেকে বলেন, ওহী ও যুক্তির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, এ আয়াতে দেখা যায়, ওহী ও যুক্তির উৎস একই। অর্থাৎ, ওহী আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা একটি আদেশ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন, আবার হৃদয় পরিচালনাকারী রূহও আল্লাহর পক্ষে থেকে আসা একটি আদেশ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন। দুটি একই উৎস থেকে আগত। সুতরাং, ওহী ও যুক্তির মাঝে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না।
যদি কখনো ওহী ও যুক্তির মাঝে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তখন বুঝতে হবে, হয় আল্লাহর ওহী আমরা বুঝতে ভুল করেছি, অথবা আমাদের যুক্তির মাঝে ভ্রান্তি রয়েছে।
বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মের মাঝে পার্থক্য আছে বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু এটাও ঠিক নয়। মানুষের মধ্যে যারা তাদের চেতনাকে কিছুটা উন্নত করতে পারে, তারা হয় বিজ্ঞানী। চেতনা আরেকটু উন্নত হলে মানুষ হয় দার্শনিক। এবং, চেতনার সর্বোচ্চ স্তরে যেতে পারলে মানুষ প্রকৃত ধার্মিক হতে পারে।
আল কোর’আন ও জ্ঞানীদের স্বচ্ছ হৃদয় উভয়ে আল্লাহর সুস্পষ্ট নিদর্শন। তাই ওহী ও যুক্তির মাঝে কোনো বৈপরীত্য নেই।