নবী-রাসূলদের প্রতিটি কাজের মাঝেই আমাদের জন্যে দিক-নির্দেশনা রয়েছে

নবী-রাসূলদের প্রতিটি কাজের মাঝেই আমাদের জন্যে দিক-নির্দেশনা রয়েছে। হোক সে কাজটি খুবই সাধারণ বা খুবই অলৌকিক।

যেমন,

নূহ (আ) পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নৌকা তৈরি করেছিলেন। মহা প্লাবনের পরেও সেই নৌকা পানিতে নিমজ্জিত হয়নি। এটা ছিল নূহ (আ)-এর একটি মুজিযা।

সে সময়ের মানুষেরা মনে করতো, পানির উপর নৌকা ভাসার ঘটনাটি একটি অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু আজ মানুষ মনে করে, পানির উপর দিয়ে লোহার জাহাজ চলাটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
_____

দাউদ (আ) কে আল্লাহ তায়ালা লোহা ও স্টিলের জামা তৈরি করা শিখিয়েছিলেন। তিনি লোহা দিয়ে যুদ্ধের জামা তৈরি করতে পারতেন। এবং এ জামা গায়ে দিয়ে তিনি অসংখ্য রাজ্য জয় করেছিলেন। এটি ছিল দাউদ (আ)-এর একটি মুজিযা। [দেখুন, ৩৪: ১১ এবং ২১: ৮০]

সে সময়ের মানুষেরা মনে করতো, এত শক্তি লোহাকে পানির মত গলিয়ে ফেলা এবং তা দিয়ে জামা বানানোর ঘটনাটি একটি অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু আজ মানুষ মনে করে, লোহা বা স্টিলের জামা তৈরি করা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
_____

সুলায়মান (আ) এর জন্যে আল্লাহ তায়ালা বাতাসকে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি বাতাসের সাহায্যে যে কোনো দিকে উড়ে যেতে পারতেন। এটি ছিল সুলায়মান (আ) –এর একটি মুজিযা। [দেখুন, ২১: ৮১, ৩৪: ১২]

সে সময়ের মানুষেরা মনে করতো, বাতাসের সাহায্যে কেউ আকাশে উড়ে যাওয়ার ঘটনাটি একটি অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু আজ মানুষ মনে করে, প্লেনের সাহায্যে আকাশে উড়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
_____

সুলায়মান (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা পাখিদের ভাষা শিখিয়েছিলেন। তিনি পাখিদের সাথে কথা বলতে পারতেন। পাখিরা তাঁর জন্যে খবর আদান-প্রদান করতো। এটি ছিল সুলায়মান (আ)-এর একটি মুজিযা। [দেখুন, ২৭: ১৬, ২৭: ১৮]

সে সময়ের মানুষেরা মনে করতো, পাখিদের সাথে কথা বলতে পারা এবং পাখিদের মাধ্যমে সংবাদ আদান-প্রদান করাটা একটি অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু আজ মানুষ মনে করে, পাখিদের সাথে কথা বলা যায়, তারা আমাদের কথা বুঝে এবং উত্তর দিতে পারে। এ ছাড়া, পাখিরা মানুষের জন্যে সংবাদ বা চিঠিও আদান-প্রদান করতে পারে।
_____

এভাবে নবী-রাসূলগন যুগে যুগে নানা মুজিযা দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে নানাভাবে পথ-প্রদর্শন করে গিয়েছিলেন। মানুষ যদি চেষ্টা করে, তাহলে নবী-রাসূলদের মত একই কাজ তারা নিজেরাও করতে পারবে।

পার্থক্য হলো,

নবী-রাসূলগণ আল্লাহর সাহায্যে অলৌকিক কাজটি যেভাবে করেছেন, আমরা ঠিক সেভাবে করতে পারব না। কিন্তু, ভিন্ন উপায়ে এবং ভিন্ন মাধ্যমের দ্বারা আমারা যদি চেষ্টা করি, তাহলে আল্লাহ চাইলে অতীতের সেই অলৌকিক কাজগুলোই আমরা এখন করতে পারব।
_____

এখানে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, পৃথিবীতে আমরা যা কিছু করি, সবকিছু আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমেই করি। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মানুষ একটি শব্দও করতে পারে না। এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না।

কেউ কেউ ভিন্নধর্মী বা অলৌকিক কিছু করতে পারলে, তাঁর জন্যে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ হয়। আবার, কেউ কেউ ভিন্নধর্মী বা অলৌকিক কিছু করতে পারলে, নিজেরা অহংকার করতে শুরু করে। এবং আল্লাহর সাথে শিরক করতে শুরু করে। 
_____

মূসা (আ) –এর ঘটনায় আমরা এমন একটি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই।

তিনি তাঁর লাঠিকে সাপ করে ফেলেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি বস্তুর মাঝে প্রাণের সঞ্চারণ করতে পেরেছিলেন। এটি ছিল মূসা (আ) –এর একটি মুজিযা।

তৎকালীন জাদুকরেরা রশি দিয়ে সাপ বানাতে পারতেন। কিন্তু, মূসা (আ)-এর সাপ যখন জাদুকরদের সাপগুলো খেয়ে ফেললো, তখন তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করলেন।

কিন্তু, এর কিছুদিন পর,

সামেরি নামক এক লোকও মাটির তৈরি একটি গরুর মাঝে সাময়িকভাবে প্রাণের সঞ্চার করতে পেরেছিল। তা দেখে সবাই, ঐ গরুটিকে পূজা করতে শুরু করে।
_____

উপরোক্ত সবগুলো ঘটনা থেকে একটি বিষয় ফুটে ওঠে যে, নবী ও রাসূলদেরকে আল্লাহ তায়ালা যে মুজিযা দান করেছিলেন, তা দিয়ে তাঁরা বিশ্ববাসীকে পথনির্দেশ করে গিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে সাধারণ মানুষেরা যদি চেষ্টা করে, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায়, তারাও নবী-রাসূলদের মত একই কাজ করতে সক্ষম হবে। হয়তো ভিন্নভাবে বা ভিন্ন কোনো উপায়ে। বিজ্ঞান আজ সেই কাজটিই করছে।

বিশ্বাসী মানুষেরা এসব ভিন্নধর্মী বা অলৌকিক কাজের কর্তৃত্ব দেয় আল্লাহ তায়ালাকে। কিন্তু অবিশ্বাসী মানুষেরা আল্লাহকে কার্টেসি না দিয়ে নিজেরাই নিজেদের গর্ব করতে থাকে।

15 July 2017 at 18:28 ·

আরো পোস্ট