সাইদ নুরসির রাজনৈতিক দর্শন
উস্তাদ সাইদ নুরসি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে কঠোরভাবে নিন্দা করতেন। ১৯১৯ সালের দিকে তুরস্কে একটি ইসলামপন্থী দলের উদ্ভব হয়। নাম হুররিয়ায়েত ভে ইতিলাফ পার্টি। তাদের বিরোধী দল ছিলো ইত্তেহাত ভে তেরাক্কি পার্টি।
ইসলামপন্থীরা তখন তাঁদের বিরোধী দলকে কাফের-মুনাফেক বলা শুরু করছিলো। তখন উস্তাদ সাইদ নুরসি বলেছিলেন, “আমি রাজনীতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।”
উস্তাদ সাইদ নুরসির মতে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে কেবল আল্লাহর জন্যে। কেউ নিজের দল থেকে বের হয়ে গেলে, বা কেউ নিজের দলে যোগ না দিলে যদি তাকে খারাপ মুসলিম বলা হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটি শয়তানের দল, ইসলামি দল নয়।
উস্তাদ সাইদ নুরসির বিখ্যাত ছাত্রের নাম হুলুসি। সে উস্তাদ হুলুসির কাছে একে পার্টি বা সেকুলার বা জাতীয়তাবাদী দলের লোকজন একই সাথে একই ক্লাসরুমে পড়তে আসতো। সাইদ নুরসি তাঁর ছাত্রদের এটাই শিখিয়েছেন যে, যদি কেউ ইসলামপন্থী রাজনীতি নাও করে, তবু রাজনৈতিক কারণে কাউকে যেন ভালো মুসলিম বা খারাপ মুসলিম বলা না হয়।
উস্তাদ সাইদ নুরসির মতে, একটি ভালো দল তারাই, যারা দল দিয়ে মানুষকে বিচার করে না। যারা নিজের দলে থাকলে মানুষকে ভালো বলে, কিন্তু অন্য দল করলে মানুষকে খারাপ বলে – এরাই আসলে খারাপ।
বিস্তারিত দেখুন https://www.youtube.com/watch?v=g1KB0yLDlHo
উস্তাদ সাইদ নুরসির ছাত্ররা কেন এরবাকানের ইসলামপন্থী রাজনীতি করেন না? এবং কেন এরদোয়ানের রাজনীতিকে সমর্থন করেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে নুরসির ছাত্র মেহমেত ফিরিঞ্জি (Mehmet Fırıncı) বলেন,
“(তুরস্কের ইসলামপন্থী দল) মিল্লিগুরুশ রাজনীতির ক্ষেত্রে খুবই কট্টরপন্থী ছিলো। কিন্তু আমরা সবসময় উদার পন্থী। যেমন, (নুরসির সময়ে) ডেমোক্রেট পার্টি ধর্মীয় দিক থেকে আযান চালু করলো, মসজিদ নির্মাণ করলো, কোরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করলো, ইত্যাদি। এ কারণে সাইদ নুরসি আদনান মেন্দারেসকে ইসলামের সৈনিক বলেছিলেন। অন্যদিকে মিল্লিগুরুশের বিষয়টা আলাদা। বর্তমানে মিল্লিগুরুশের ভাইয়েরা আমার প্রতি রাগ করবেন না, আমি এ কথাটা অসংখ্যবার বলেছি, এরবাকান যদি আমাদের মহল্লার মসজিদে ইমাম হয়, তাহলে প্রতিদিন আমি গিয়ে তাঁর পিছনে নামাজ পড়বো। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সাথে আমি একমত হবো না। এ কথাটা আমি সবসময় তরুণদের বলতাম। কিন্তু তায়িপ এরদোয়ান এরবাকানের মতো না। এরদোয়ানরা ভিন্নভাবে রাজনীতি শুরু করেছেন। এরদোয়ানরা মেন্দারেসের পথ অনুসরণ করছে। যেহেতু মেন্দারেসকে সাইদ নুরসি ইসলামের সৈনিক বলতেন, তাই আমরাও এরদোয়ানকে সমর্থন করছি।”
বিস্তারিত দেখুন। https://youtu.be/iLjmlpG3dcM
আয়াসোফিয়াকে উন্মুক্ত করার জন্যে ইসলামপন্থী সাদাত পার্টির প্রধানকে আয়াসোফিয়ার ইমাম দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু ইসলামপন্থী দলের প্রধান আয়াসোফিয়ায় যাওয়াটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। এর কারণ হিসাবে তারা বলেন, এরদোয়ান কেন ইসলামপন্থী দলের প্রধানকে দাওয়াত দেননি, তাই তিনি আয়াসোফিয়ায় যাননি।
যাই হোক, এরদোয়ান সাদাত পার্টিকে দাওয়াত না দিলে নিজে ফোন করে সাইদ নুরসির ছাত্র মেহমেদ ফিরিঞ্জি (Mehmed Fırıncı)-কে দাওয়াত দিয়েছেন। দেখুন https://www.youtube.com/watch?v=_2jAyNBpV4k
প্রশ্ন হলো, কেন এরদোয়ান এরবাকানের অনুসারীকে ফোন না করে নুরসীর অনুসারীকে ফোন করলেন?
উত্তর হলো, এরদোয়ান এরবাকানের রাজনীতি ছেড়ে নুরসীর রাজনীতি গ্রহণ করেছিলেন।
এরবাকানের আগে নুরসী দীর্ঘদিন থেকে চেয়েছিলেন, আয়াসোফিয়া খুলে দিতে, কিন্তু সেটা বিপ্লব করে নয়, জনগণের সম্মতি নিয়ে।
নুরসীর মতে, যদি আয়াসোফিয়াকে ইবাদাতের জন্যে খুলে দেয়া হয়, তাহলে অনেক খ্রিস্টানও খুশী হবে। কারণ, অনেক খ্রিস্টানও একত্ববাদে বিশ্বাস করে, এবং ঈসা (আ)-কে প্রভু হিসাবে অস্বীকার করেন। যদি আয়াসোফিয়া খুলে দেয়া হয়, তাহলে ঐসব খ্রিস্টানরা এ কারণে খুশী হবে যে, ঈসাকে সেখানে আর প্রভু হিসাবে দেখতে হবে না, কিন্তু প্রকৃত প্রভুর ইবাদাত করা হবে।
যাই হোক, সাইদ নুরসী চেয়েছিলেন কেবল জনগণের নয়, বরং একত্ববাদী খ্রিস্টানদেরও সমর্থন নিয়ে আয়াসোফিয়াকে খুলতে। এবং সেটা এরদোয়ানও চেষ্টা করেছেন। আয়াসোফিয়া খোলার আগে এরদোয়ান নুরসীর ছাত্রকে ফোন করার সাথে সাথে খ্রিস্টান পাদ্রিকেও ফোন করেছিলেন। এবং আয়াসোফিয়া খোলার দিন বলেছিলেন, এটা সকল ধর্মের নারী পুরুষ সবার জন্যে উন্মুক্ত থাকবে।
যাই হোক, এরবাকান ও নুরসির রাজনীতির পার্থক্য বুঝার জন্যে একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
১৯০৯ সালে কিছু লোক শরিয়তি রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে আন্দোলন করে। পরে তাঁদের বিচার হয়। সেখানে নুরসিও অভিযুক্ত ছিলেন। বিচারক খুরশিদ পাশা সাইদ নুরসিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমিও কি শরিয়ত চাও?”
নুরসি বললেন, “Şeriatın bir hakikatine bin ruhum olsa feda etmeye hazırım. Zira, şeriat, sebeb-i saadet ve adalet-i mahz ve fazilettir. Fakat ihtilâlcilerin isteyişi gibi değil.”
“যদি শরিয়ত মানে দয়া-ভালোবাসা হয়, তাহলে সে শরিয়তের জন্যে আমি কুরবান হতে রাজি। আসলে শরিয়ত মানে সুখের মূলমন্ত্র, ন্যায় ও সুবিচার। কিন্তু (ইসলামপন্থী) বিল্পবীরা যে শরিয়ত চায়, তা আমি চাই না।” দেখুন https://www.risalehaber.com/said-nursiyi-yargilayan-hursit-pasanin-31-mart-risalesi-bulundu-351461h.htm
আয়াসোফিয়ার ঘটনাটা দিয়ে তুরস্কের ইসলামপন্থী ও পলিটিকাল ইসলামকে খুব ভালোভাবে বোঝা যায়।